Teaser-33

তরুনদের মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা

বাংলাদেশের জন্য আসলেই এখন সুবর্ণ সময়! আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি কর্মক্ষম যুবসমাজ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বৎসরের মধ্যে। আর এই ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনেই আমরা এই মুহুর্তে ডেমোগ্রাফিক লভ্যাংশের উপকারিতা উপভোগ করছি। আবার বিশেষজ্ঞরা অন্যভাবে বলবার চেষ্টা করছেন যে কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনে আমাদের সামনে এখন অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি। যদি যুগপোযোগী নির্দেশনার মাধ্যমে তরুন সমাজকে কার্যকরি নেতৃত্বের গুণাবলী ‍দিয়ে সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। আমরা সকলেই অবগত আছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ২০৩০ সালের পূর্বেই জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুন সমাজকে রাজনৈতিক সচেতনতার বাইরে রেখে রেখে লক্ষ্য অর্জন কতটুকু যুক্তিযোগ্য তা নতুন করে ভাবার দাবী রাখে। এই মূহুর্তে বিশ্বব্যাপী দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক হিসেবে তরুন সমাজকে গড়ে তুলবার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যত্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক আমরা তাকেই বলবো যিনি তিনটি বিষয় মনের গভীরে লালন করেনঃ
  • পরিবর্তনকারী এজেন্ট হিসেবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন
  • নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশের প্রতি তার ভূমিকা সম্পর্কে যথেষ্ঠ জ্ঞান রাখেন
  • দেশে শান্তি, সম্পৃতি বজায় রাখার নিমিত্তে গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহন করেন।
বর্তমানে আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে নজর দেই তাহলে দেখবো প্রতিটি ক্ষেত্রে ”রাজনীতি” শব্দটি যেন একটি নিষিদ্ধ শব্দ হিসেবে ব্যবহারিত হচ্ছে। সাধারনভাবে এই মুহুর্তে তরুনদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় ”আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কি?” তিনি বিনা চিন্তায় জবাব দেবেন “আমি রাজনীতিকে পছন্দ করি না!” এবং এটিই বাস্তবতা। তবে পরিবারের কেউ কোন দল বা গোষ্ঠির পক্ষে রাজনীতে সক্রিয় থাকলে তার উত্তর কিছুটা ভিন্ন হবে। এখন এরকম একটি প্রেক্ষপট বিদ্যমান যেখানে রাজনৈতিক সচেতন তরুন চিন্তাও করা যায় না। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা রাজনীতির ব্যাপারে আজকের তরুনদের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা যদি ১৯৪৮ সালে বিদ্যমান থাকতো তাহলে কি স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হলো রাজনীতির সাথে বর্তমানে দেশের কোন সংযোগ নেই। যে কারনে রাজনীতি শব্দটি মনে এলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিছিল, মিটিং, হরতাল, কাদানে গ্যাস, অযৌত্তিক সমালোচনা ইত্যাদি। ভয় বাসা বাধে মনে। কিন্তু আসলে রাজনীতি মানে কি? ইতিহাস ঘেটে আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু বুঝেছি তা হলো রাজনীতি মানেই দেশের উন্নয়নের প্রতি সচেতনতা। আর দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতন তিনিই যিনি দায়িত্বশীল নাগরিক। আমরা দেখতে পাই সকলেই মোটমুটি একটি বাক্যই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন যে আমি দেশের জন্য কাজ করছি। যদি রাজনৈতিক সচেতন দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া না যায় তাহলে দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারবেন না যে আর কি করলে দেশের উন্নতি ঘটবে। প্রশ্ন যদি করা না যায় তাহলে সঠিক উত্তর আসবে না। আর উত্তর না আসা মানে হলো আপনার উদ্দ্যেগে যে কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে তা সামগ্রিক অর্থে দেশের কোন প্রয়োজনে আসবে না।
আমাদের এই মুহুর্তে দরকার মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা যার যার অবস্থানে থেকে আগামীর উন্নত বাংলাদেশের জন্য। আর এ ক্ষেত্রে তরুনদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী।
12

থেমে যাবার তো উপায় নেই, চলতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে

দিনটি ছিলো ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুর দিকের কোন একটি দিন। হঠাৎ করেই জরুরী বৈঠকের নোটিশ। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলাম প্রধান কার্যালয়ে। সবার গুরু গম্ভীর মুখ দেখে বোঝা গেল বিষয়টি হয়তো একটু বেশীই জরুরী। সহকর্মীরা সবাই একে একে যোগ দিলেন বৈঠকে। বৈঠক শুরু হলো। বৈঠকের বিষয় স্পষ্ট হলো সম্ভাব্য করোনার মহামারীতে আমাদের প্রস্তুতি। যেহেতু করোনা শব্দটি তখনও ততোটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি তাই প্রথমেই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সবুর খান যা বলছিলেন তার সারাংশ হলো সামনে অনেক কঠিন সময় সুতরাং আমাদের নিজস্ব গন্ডির মধ্যে থেকে ক্লাস থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার আমাদের শতভাগ নিশ্চিত করতেই হবে। সম্ভব/অসম্ভবের মধ্যে দোদুল্যমান আমার অবস্থান। একই সাথে বোঝার চেষ্টা করছিলাম আমার সহকর্মীদের মনের অবস্থান এবং আমার মনোভাবের সাথে তাদের মনোভাব মেলাবারও চেষ্টায় ছিলাম। এখন বলতে আপত্তি নেই, আমার কাছে অসম্ভবের পাল্লাই বেশী ভারী ছিল। কোথায় চীন দেশ আর কোথায় আমরা। আমাদের সেই শক্তি কোথায়? যা হোক কোন কিছু না ভেবেই মনে মনে ভাবলাম কিছু একটাতো হবেই। বিসমিল্লাহ বলে সহকর্মীদের সাথে নেমে পড়লাম কাজে। একটা বিষয় খেয়াল করলাম নেতৃত্ব যদি হয় শক্তিশালী এবং সুদূর প্রসারী তাহলে তার প্রভাব কর্মীদের উপর পড়বেই। আমি ভেতর থেকে একধরনের শক্তি অনুভব করলাম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারকেও ধন্যবাদ দিতে হয় বেশ কিছু ক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কিছু বাস্তবিক স্বীদ্ধান্ত গ্রহন করবার জন্য।

ফেব্রুয়ারী মাস গড়িয়ে মার্চ চলে এলো। করোনা নামক চক্রে আমরাও পড়তে যাচ্ছি বিষয়টি স্পষ্ট হলো। আগে থেকেই নেয়া স্বীদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ গোছানো হচ্ছিলো। শুরু হলো অনলাইনের যাত্রা। নির্ধারন করা হলো হাতের কাছে থাকা সহজ কিছু প্রযুক্তি যেমন গুগল মিট, জুম, গুগল ক্লাসরুম, মুডল এবং অনুশীলন করা হচ্ছিল তার ব্যবহার। পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে চলেছে চার দেয়ালের ক্লাস রুমে ভার্চুয়াল ক্লাস, পাশাপাশি বসে ভার্চুয়াল মিটিং, ফাইল শেয়ারিং, অনলাইন হাজিরা ইত্যাদি। এক বন্ধু আমার অফিসে এসে দ্যাখে আমি ভার্চুয়াল মিটিং করছি আমার পাশের রুমে থাকা সহকর্মীর সাথে। ও কিছু না বলে ভ্রু কুচকে চায়ের কাপে চুমুক ‍দিচ্ছিলো। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো লকডাউন। মাথায় সারাদিন দুটি শব্দই ঘুরপাক খেতে লাগলো করোনা এবং লকডাউন। বেড়ে গেলো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডের বিশাল দায়িত্ব আমাদের সকল সহকর্মীদের উপর। শক্তি ছিলো নেতৃত্বের আর এতোদিনের আত্মবিশ্বাসের। চিন্তা করলাম একটা কিছুতো হবেই।

শুরু হলো লকডাউনের মধ্যেই প্রতিদিন রুটিন মাফিক অনলাইন ক্লাস, মিটিং, পরীক্ষা, কুইজ, অভিভাবক সম্মেলন, অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি। অবাক হলাম যাদের নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশী চিন্তিত ছিলাম আমাদের সেই কোমলমতী ছাত্রছাত্রী যারা লকডাউনের কারনে ফিরে গিয়েছিলো গ্রামে তাদের উৎসাহ এবং সতস্ফুর্ত অংশগ্রহন দেখে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে থাকা সীমিত ইন্টারনেট এবং ডিভাইস ব্যবহার করে যুক্ত হচ্ছিলো অনলাইন ক্লাসে। রাতদিন চলেছে বিরতিহীন ক্লাস ও অনলাইনে পড়াশুনার কার্যক্রম। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। মনে মনে ভাবতাম আরে উন্নত বিশ্ব তাহলে এভাবেই আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। একটা সময় দেখলাম ছাত্রছাত্রীতো বটেই বাবা-মা সবাই অংশগ্রহন করছে অনলাইন ক্লাসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সময় হয়নি। করোনা তার তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সবাই সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছি। সমস্যাতো আসবেই। থমকে যাবার অবকাশ নেই। হঠাৎ মনে হলো কর্মের সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। ফলাফল যা বের হলো তাতে আমিও কিছুটা অবাক হলাম। ড্যাফোডিল পরিবারের স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে

  • লকডাউনের প্রথম ৯০ দিনে প্রায় ৬০ হাজার ক্লাস সম্পন্ন হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে
  • গড়ে প্রতি ক্লাসে উপস্থিতি ছিলো ৬৮%
  • এই হিসেবে ড্যাফোডিল পরিবারের ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে।
  • অভিভাবক সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৫০টিরও বেশী
  • অনলাইনেই সম্পন্ন হয়ে কুইজ, ক্লাস টেষ্ট, পরীক্ষা, এ্যাসাইমেন্ট,
  • দেশ-বিদেশের বিখ্যাত প্রফেশনালদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০ অধিক ওয়েবইনার।
  • প্রায় ৩০০ সহকর্মী মিলে যার যার ঘরে অবস্থান করে আমরা আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি তিনটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট (হেকাথনের আদলে করোনাথন, অনলাইন লার্নিংকে সবার মাঝে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য অনলাইন লার্নিং সামিট এবং ঘরে বসে মেধাভিত্তিক কাজ করা সম্ভব এই সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরে তরুনদের চাকরির সুযোগ তৈরি করবার জন্য আয়োজন করা হলো ভার্চুয়াল জব ফেস্ট)। এই তিনটি ইভেন্টে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের আরো প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
  • সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমরা প্রায় ৩০০০ সহকর্মীরা একে অপরের সাথে মিলে গত ৯০ দিন কাজ দিলাম, কাজ করলাম কিন্তু কারো সাথে সরাসরি দেখা হলো। সবাই যার যার ঘরে বসে যার যার কাজ সম্পাদন করলাম। এটাই একসময় অসম্ভব ছিলো যা বর্তমানে বাস্তব।

এতো বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝে হঠাৎ ড্যাফোডিল পরিবারের মনে হলো কেননা আমরা এমন একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করি যার মাধ্যমে অন্যরাও অনায়সে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সূচনা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য Blended Learning Center, কলেজ-পলিটেকনিকের জন্য college.ac এবং স্কুলের জন্য schoolbd.ac । এই প্ল্যাটফলমগুলো বাংলাদেশের যেকোন স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

আসলে পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যেকোন পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাবার এক বিরাট ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা তা বুঝি না। একটা সময় যা ছিলো অসম্ভব তা এখন বাস্তব। সামনের পৃথিবী হয়তো আরো অজানা, দুর্বোধ্য। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তার সেই শক্তিশালী উপমার উপর “মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা”। সুতরাং থেমে যাবার তো উপায় নেই। চলতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে।

—————————————– X ——————————————

লেখকঃ-

কে এম হাসান রিপন

ড্যাফোডিল পরিবার

Presentation1

পক্ষপাতদুষ্ট নেতৃত্ব

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসী কিছু সাথী ছিলেন কিন্তু তিনি শেষের দিকে এসে একটু বেশী আবেগী হয়ে ঝুকে পড়ে ছিলেন প্রধান সেনাপতী মীর জাফরের দিকে। অনেকের অনেক বারণ করা স্বত্ত্বেও বাংলার শেষ নবাব সিদ্ধান্ত নিলেন যেটা প্রধান সেনাপতী মীর জাফর বললেন। তারপরের পরিণতি আমরা সবাই জানি কিন্তু যেটি নবাব সিরাজউদ্দৌলা জানতে পারেননি তা হলো আমাদের পরবর্তী ২০০ বছরের বৃটিশ গোলামী এবং নবাব পরিবারের করুন পরিনতি। অন্যদিকে মীর জাফর এবং তার পরিবারের অবস্থার পরিনতিও কিন্তু করুন ছিলো। নেতৃত্বেরর বিষয়ে লিখতে গেলেই যে দুটি শব্দ আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আসে তা হলো আবেগ এবং এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবার দক্ষতা। একসাথে বললে আবেগীয়-দক্ষতা। আমি খুব কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে লেখাটিকে কঠিন করবার চেষ্টা করবো না আমার পাঠকদের জন্য। আবেগীয়-দক্ষতা বলতে আমি যা বুঝেছি ”নিজের আবেগকে বুঝে তারপর নিয়ন্ত্রন করে অন্যের আবেগের ভাষাকে নিজের জন্য অনুবাদ করা যা আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবে।

Using Emotional Intelligence Training in daily life - The Yellow Spot

আমরা যদি বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের দিকে নজর দেই তাহলে দেখবো এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা আবেগীয়-দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দলকে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবার এর ব্যতিক্রমও আমরা দেখতে পাই যেখানে আবেগীয়-দক্ষতার অভাবে নেতৃত্বের স্থানে বসেও সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেতৃত্বের আসনে আসীন হওয়ার অর্থ হলো আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে যেমনঃ

  • সঠিক স্থানে সঠিক ব্যক্তিকে নির্ধারন করা।
  • কাজকে বিভিন্নভাগে ভেঙে ফেলা।
  • সঠিক ব্যক্তিকে কাজটি বা কাজগুলি বুঝিয়ে দেয়া।
  • সঠিক সময়ে কাজ ডেলিগেট করা।
  • কাজের অগ্রগতি অনুসরণ করা।
  • প্রতি মুহুর্তে কাজের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা।
  • সঠিক সময়ে কাজটি বা কাজগুলি বুঝে নেয়া।
  • সঠিক সময়ে কাজ এবং কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মূল্যায়ন করা।
  • কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মতামত প্রদান করা।
  • দলের ভেতর সমন্বয় সাধন করা এবং কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে সেটা আগেই চিহ্নিত করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান করা।
  • ভবিষ্যতকে বর্তমানে বসে পর্যালোচনা করা এবং সেই মতে সকলের সাথে আলোচনা করা।
  • কেউ পিছিয়ে পড়লে তাকে টেনে তুলে ধরে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া।

উপরের যে কাজ গুলোর কথা বলা হলো তার বাইরেও আরো অনেক কাজ একজন লীডারকে করতে হয়। এক কথায় নেতৃত্ব মানেই সিদ্ধান্ত গ্রহন। আসলে লীডার মূলত অভিভাবকের মতো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। আমার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লীডারকে প্রচুর পরিমানে শুনতে হয় সকলের কথা সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য। যে কেউ যে কোন সময়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে অথবা কোন একটি ক্যারিশম্যাটিক গুণের কারনে নেতৃত্বের আসনে উপবিষ্ট হতে পারেন। তখনই আসলে প্রকৃতপক্ষে আবেগী-দক্ষতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। আবেগী-দক্ষতার অভাবে উপরের যে কাজগুলোর কথা বললাম এবং শেষের দিকে শ্রবন করবার জন্য যে ধৈর্যের প্রয়োজন সেটা ব্যহত হয়। তখনই আমরা পক্ষপাতদুষ্ট নেতৃত্বের সাথে পরিচিত হই।

The Impact of Unconscious Bias on Leadership Decision Making ...

নেতৃত্বের নেতিবাচক পক্ষপাতিত্ব প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। অধিকাংশ সময় লীডার বুঝতেই পারেন না যে তিনি নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের স্বীকারে পরিনত হচ্ছেন। পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সচেতনতা একজন লীডারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাঝে

  • সম্পর্কের অবনতি ঘটে,
  • অবিশ্বাস জন্ম নেয়,
  • অনমনীয়তা বৃদ্ধি পায়,
  • কাজের ভেতর স্থিরতা চলে আসে,
  • অসন্তোষ সহ আরো বিভিন্ন বিষয় দেখা দেয়।

নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই তবে পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা একজন লীডারকে সাহায্য করে যোগ্যকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে। আবেগীয় দক্ষতাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে নেতৃত্বের দুর্বলতাকে অন্য কেই ব্যবহার করতে পারবে না। প্রত্যেক লীডার যদি আবেগীয় দক্ষতাকে প্রকৃতভাবে অনুশীলন করতে পারে এবং নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে তাহলেই কর্মক্ষেত্রে

  • বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের মাঝে সহযোগিতা বেড়ে যাবে,
  • নমনীয়তা পরিলক্ষীত হবে,
  • প্রগতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের টার্নওভার কমে যাবে,
  • উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের মাঝে অভিযোগ কমে যাবে, যার ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টিও বৃদ্ধি পাবে।

লীডারশীপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মূল্যায়ন এবং এর উপরই নির্ভর করে অগ্রগতি। কিন্তু আবেগীয় দক্ষতার অভাবে নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের স্বীকার হয়ে যেটা যেভাবে দেখার কথা সেটা সেভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখা শুরু হয়। সমস্যাটা হয় এখানেই। আমি কতটুকু বোঝাতে পেরেছি আমার এই ব্লগ থেকে সেটি বলতে পারবো না তবে নেতিবাচক পক্ষপাতিত্ব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। না হলে সঠিকভাবে মূল্যায়ন কোনভাবেই সম্ভব হবে না।


লেখকঃ

কে এম হাসান রিপন,

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

New Normal

“নিউ নরমাল” কর্ম বা কর্মক্ষেত্রের রুপ কেমন হতে পারে!

গত দু-মাস ধরে দুটি শব্দ বার বার শুনছি ”নিউ নরমাল”। গুগলকে প্রশ্ন করতেই সে জানালো এর আগেও এই শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সালে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা গ্রাস করেছিল প্রায় পুরো বিশ্বকে। তখন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ”নিউ নরমাল” শব্দ দুটি সংযুক্ত করেছিলেন মন্দা পরতর্তী ব্যবস্থাপনা নির্ধারন করতে গিয়ে। বর্তমানের এই কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট মহামারীতে যখন সমগ্র বিশ্ব আক্রান্ত তখন আরেকবার আমাদের সামনে এসে দাড়িয়েছে ”নিউ নরমাল“। অতীতে যে বিষয়গুলো অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হতো সেটাই যখন দৈনন্দিন কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে নিয়মে পরিনত হয় তখনই সেটাকে বলা যায় ”নিউ নরমান”। তবে সময় যত সামনের দিকে এগিয়ে যায় ”নিউ নরমাল” তত দ্রুত “নরমালে” পরিনত হয়। এক সময় মা’র কাছে শুনেছি আমার বাবা কোথাও বেশী দিনের জন্য গেলে চিঠি লিখে জানাতেন ”আমি ঠিক মতো পৌছেছি”। তারপর চিঠির পরিবর্তে এলো ল্যান্ডফোন, পুরো সিস্টেম পাল্টে গেলো। তখন বাড়িতে ফোন করে জানাতেন ”আমি ঠিক মতো পৌছেছি”। এখন কোথাও গেলে বাসা থেকে কিছুক্ষন পর পর ফোন আসে “এখন কোথায়”। এর মাঝে আবার টেলিগ্রামের সাথে মানুষের পরিচয় হয়। যেহেতু চিঠি পৌছুতে সময় নিতো প্রায় একমাস (কখনো কখনো), তাই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে টেলিগ্রাম আসতো “Father Sick, Come Early”। পরবর্তীতে যার রুপান্তর আমরা দেখতে পাই এসএমএস (Short Message Service)

শুনেছি প্রথম শিল্প বিপ্লবের পর যখন শিল্পায়নের যুগ শুরু হলো তখন কারখানা থেকে একদল কর্মী নিয়োগ দেয়া হতো শ্রমিকদের ঘুম থেকে উঠাবার জন্য। পরবর্তীতে অ্যালার্মঘড়ি আসার পর তখনকার নরমাল হয়ে গেলো নিউ নরমাল এবং কিছু মানুষ হয়ে গেলো বেকার আর কিছু মানুষের হলো কর্ম পরিবর্তন। মানুষের মধ্যে একটি দল আছে যাদের সমগ্র জীবনের প্রচেষ্টাই হলো যে কোনভাবেই হোক নরমালকে চ্যালেঞ্জ করা। আবার অন্যদলের কাজ হচ্ছে যেকোন ভাবেই হোক নরমাল কে আকড়ে ধরে থাকা এবং স্বাভাবিকভাবে নরমাল কে আকড়ে ধরে থাকা মানুষদেরই বিজয় হয় (কিছুদিনের জন্য) যদি না প্রাকৃতিকভাবে কোন বিপর্যয় এসে উপস্থিত না হয়। একটি আর্টিক্যালে পড়েছি একসময় প্লেগের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে বিজ্ঞানী নিউটন কোয়ারেন্টিনে চলে যান তার গ্রামের বাড়িতে এবং কোন একদিন দুপুরের খাবারের পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আপেল গাছের নিচে আর তখনই তার মাথার উপর পড়ে একটি বড় আপেল এবং আমরা পেয়ে যাই নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র (সঠিক কিনা জানি না তাও উল্লেখ করলাম, আপনারা গুগল ঘেটে বের করতে পারেন চাইলে)।

What's Ecommerce's New Normal? Become a Future Leader

বর্তমানে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারনে আমাদের সামনে আবার উপস্থিত হয়েছে ”নিউ নরমান” যার মানে হচ্ছে স্বাভাবিক বা গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচলনা করা (সেটা মন থেকে হোক বা মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হোক)। আমাদের সবারই প্রয়োজনের স্বার্থে মেনে নিতে হচ্ছে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় একবার যেটি অভ্যাসে পরিনত হয় তা পুনরায় না করাটা কষ্টের। মানে হচ্ছে নতুন নিয়মে যা করে আসছি সেটা হয়তো সম্পূর্ন পরিবর্তন নাও হতে পারে।

মার্চের শুরুর দিকে আমরা বুঝতে শুরু করি এতোদিন যেভাবে স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে এসেছি সেটা পাল্টে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন দেশের প্রফেশনালদের দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েবইনারে আমরা অংশ নিয়েছি কিন্তু সেই ওয়েবইনার যখন আমাদেরই করতে হচ্ছে এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই তখন ব্যাপারটি প্রথম দিকে ছিল অবাক করার মতো। তার চেয়ে বড় কথা যারা ”পারি না” বা ”হবে না” বলে নিশ্চিত ছিলেন তাদেরও দেখতে পাচ্ছি স্বাচ্ছ্যন্দে অনলাইনের সাথে মিশে গেছেন। এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন অনলাইন ইন্টারেক্টিভ মিটিং টুলস যেমন গুগল মিট, জুম, গো-টু-মিটিং, গো-টু-ওয়েবইনার, ওয়েবএক্স, মাইক্রসফ্ট মিটিং, স্ট্রিমইয়ার্ড, বি-স্ট্রিম, বি-লাইভ বা বিগ-ব্লু-বাটন ইত্যাদি ভার্চৃয়াল মিটিং প্লেসের সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছি। জব বা প্রজেক্ট ট্রাকিং হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কাস্টমার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ভার্চুয়ালী, এইচআর ব্যবস্থাপনা হচ্ছে প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে। এ সকল অনলাইন ইন্টারেক্টিভ টুলসগুলোই আসলে নিউ নরমাল টুলস হিসেবে আমাদের সামনের দিনে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য বিষয় হয়ে দাড়াবে।

How to run a productive virtual meeting - Ideas

৪ মাস আগেও বাংলাদেশে ই-কমার্স বা ই-বিজনেস ছিল সৌখিনতা আজ তা বাস্তবতা। ৪ মাসে আগেও ভার্চুয়ার অফিস বা হোম অফিস ছিলো ”ভালো একটি ব্লগ পড়বার জন্য” কিন্তু এখন তা বাস্তবতা। অনেকে ইতিমধ্যেই চিন্তা করা শুরু করেছেন কি দরকার এতো টাকা খরচ করে অফিস ভাড়া নেবার। প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে শেয়ারিং অফিস বা শেয়ারিং ওয়ার্কস্টেশন হতে পারে একটি কার্যকরি সল্যুশন। হয়তো এমন হবে পাঁচতলা ভবনে ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যেখানে শুধুমাত্র জরুরী কিছু কাজের জন্য আসা হবে।

আমি চিন্তা করছিলাম যে কি কি কারনে আমরা অফিসে একসাথে বসে কাজ করি। বড় একটি লিষ্ট আমার সামনে চলে আসলো। আমরা সাধারনত অফিসে যে কাজগুলো করি তা হলোঃ

  • রেজিস্ট্রি খাতায় নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করি যার ভিত্তিতে বেতন নির্ধারিত হয়।
  • অফিসিয়াল ইমেল করি অফিসে বসে
  • সভা বা আলোচনায় অংশ নেই
  • নথিপত্র ঠিক করি এবং সংরক্ষণ করি
  • কাজের ট্র্যাকিং করি
  • চাকরীর জন্য সাক্ষাৎকার নেই বা দেই
  • কর্মীদের বার্ষিক মূল্যায়ন করি
  • গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন করি
  • কাজের প্রতিবেদন তৈরি করি এবং জমা দেই
  • আর্থিক হিসাব-নিকাশ করি
  • প্রস্তাবনা খসড়া তৈরি করি এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেই
  • প্রচারমূলক কনটেন্ট তৈরি করি
  • সোস্যাল মিডিয়া পরিচালনা করি
  • অনুষ্ঠান আয়োজন করি
  • এইচআর ক্রিয়াকলাপ করি
  • পণ্য / পরিষেবা সমীক্ষা করি ইত্যাদি।

এর বাইরেও আরো অনেক কিছু তালিকায় আসতে পারে। গতানুগতিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে উপরের কাজগুলো ম্যানুয়ালি করতে হবে কারন অনলাইনে সবগুলোকে নিয়ে আসতে গেলে প্রয়োজন হবে সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা, স্টোরেজ সহ বিভিন্ন কিছুর। আমার নিজের বিশ্বাসও ছিল তাই। আমি এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছি এবং বিভিন্ন উন্নত দেশে এর প্রয়োগও দেখেছি কিন্তু এই প্যান্ডেমিকের ভেতর আমি এবং আমার পুরো টিম ব্যবহার করলাম “ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিস”। আপনারা যারা আমার আর্টিক্যাল পড়ছেন তারা চাইলেই ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারদের সম্পর্কে গুগলের মাধ্যমে ধারনা নিতে পারেন।

Virtual meetings: TrueConf -

একটা সময় ধারনা করা হতো যে আপনার পুরো অফিসের কার্যক্রম প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে গেলে সম্ভবত অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং যেটি একটি সময় পর্যন্ত বাস্তবতা ছিল। যাকে আমরা বলতাম On Premises Software (On Prem)” মানে সফ্টওয়্যার যার সাথে আপনার ম্যানেজ করতে হবে হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, নিরাপত্তা, স্টোরেজ সবকিছু। প্রয়োজন হতো মোটা অংকের বিনিয়োগ, লোকবল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার। সাধারন ভাষায় বললে আপনার বাড়িতে আপনিই খাবার তৈরি করে খাবেন তার পর নিজেই সংরক্ষন করবেন। তখন আমরা ভাবলাম এতো ঝামেলাতে না গিয়ে ম্যানুয়ালী অপারেশনই ভালো। গ্লোবালী বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করলেন “Infrastructure As A Service (IAAS)” যার মানে হলো সফ্টওয়্যার আপনার, হার্ডওয়্যার অন্যের। এখানে কিছু মানুষ আগ্রহী হলেন কারন বিনিয়োগের পরিমান কমে গেলো এবং নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত হলো। সহজভাবে বললে বাইরে থেকে রেডী ফুড এনে ঘরে গরম করে খাওয়া। এরপরও পরোপুরী ম্যানুয়াল অপারেশন থেকে বের হতে পারিনি। এবার বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করে বের করলেন “Platform as a Service (PAAS)” মানে হলো আপনার বাড়িতে শুধু ডাইনিং টেবিল এবং পানি থাকলেই হলো, বাকিটা সব ভেন্ডরের (ফুডপান্ডা থেকে বার্গার চলে আসার মতো বিষয়)। চতুর্থ শিপ্ল বিপ্লবের অন্যতম একটি বড় বিষয় হচ্ছে অগ্রগামীতা। মানুষ প্রতিনিয়ত চিন্তা করে বের করছেন আরো কিভাবে সহজ করা যায় ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত দৈনন্দিন কার্যক্রম। কারন আমাদের সামনে আছে প্রযুক্তি। আমাদের সামনে চলে আসলো “Software As A Service (SAAS পদ্ধতি)” যেটি সত্যিকার অর্থে আমাদের অনলাইন বা ভার্চুয়াল অফিসের স্বাদ দিচ্ছে। সহজ ভাষায় খাবার খাচ্ছি কিন্তু লোকেশন মূখ্য নয়। উদাহরন স্বরুপ ISP (Internet Service Provider), ব্যবহারের উপর ব্যান্ডউইথ চার্য দিচ্চেন।

Definitive Guide to Understanding IaaS, PaaS, and SaaS | Super Admins

ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিসের স্বাদ আমরা যারা অগ্রগামীতাকে অনুশীলন করছি তারা সত্যিকার অর্থে পেতে শুরু করেছি। যেখানে কর্মীরা তাদের ঘরে বসেই নিশ্চিত করছেন টিমওর্য়াকের মাধ্যমে কোয়ালিটি ওয়ার্কস। টিম লীডার জানতে পারছেন প্রতিষ্ঠানে কার অবস্থান কোন পর্যায় এবং কর্মী তার নিজের মাসিক আমলনামা নিজেই বিবেচনা করতে পারছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

Cloud Solutions - InBuilding

আগামী ‍দিনের ব্যবসা হবে আরো গতিসম্পন্ন যেখানে দৈহিক উপস্থিতি মূখ্য হবে না। অধিকাংশ পদ বা পদবীর সাথে যুক্ত হবে ভার্চুয়াল শব্দটি। বেকারত্বের হার হ্রাস পাবে কারন ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে যে কেউ যেকোন জায়গা থেকে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবেন। হয়তো একজন মানুষ দৈনিক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করবেন। মেধা ভিত্তিক কাজ বৃদ্ধি পাবে, শ্রমের মূল্য বেড়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি তুলে ধরি তাহলে বলবো নিউ নরমালে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা টিকে থাকবে এবং কারা ঝড়ে পড়বে। নিঃসন্দেহে ”হবে না’র তালিকা বড় কিন্তু অগ্রগামী ব্যবসা বা মানুষের কাছে হবে’র তালিকা তার চেয়েও বড়। তবে এখানে ইমোশনের জায়গাটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে যেহেতু দৈহিক উপস্থিতি হচ্ছে না। তাই বাস্তবতা এবং আবেগের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা বাড়তে থাকবে।

সবশেষে বলবো নিউ নরমাল অনিবার্যই ছিল তবে কোভিড-১৯ এর গতি বৃদ্ধি করেছে। তাই নিউ নরমাল কে নিয়ে ট্রল নয় বরং বাস্তবতার আলোকে আমি কিভাবে আলিঙ্গন করবো তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। হতে পারে আগামীকালই আমার অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জকে আমাকে মোকাবেলা করতে হবে।

(বি:দ্রঃ ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিস বিষয়ে আরো অনেক বিষয় উল্লেখ করা যায় তবে আর বাড়াতে চাচ্ছি না। যদি কারো আগ্রহ থাকে আমার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি বিনামূল্যে সহযোগীতা করবো।)

 

লেখকঃ কে এম হাসান রিপন,

প্রতিষ্ঠাতা, 1.40 Knowledge Initiative এবং নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

ফোনঃ ০১৭১৩৪৯৩২06 | ইমেইলঃ [email protected]

How to remain happy in Life

How to remain HAPPY in Life

Defining Happiness in the general sense is easy, most of the time we tend to give attention to the thing that we want or crave for long to win it. To measure Happiness, we need to define it first but the definition also varies from person to person and ages. To a kid, happiness means chocolate, to a teen it means to get a book or bi-cycle, to a young man/woman, it means to get admission in the desired subject, to get a job after student life or to get a car/beautiful home, etc. To others, it may be living a healthy or hassles free life is called happiness. For some people, it means destroying everything. Also the definition of happiness changes as we grow old. The song which sounds to me like an annoying chorus that is the melody to a today’s kid. Also, the Nobel Prize-winning psychologist defined it happiness with four levels: Subjective, Genetic, Emotional, and Senses. But in every case, sustainability or wellness is attached and the actual happiness is proved to have in giving back to family/society/community. Happiness is no longer a feeling rather it is shown as a practice (Practice makes Perfect). Remaining happy is art or challenge to all of us. Also, we have three brains:

  • REPTILE Brain: Reptile Brain is for basic stuff. For example, the stress we can fight, flight, or freeze, in happiness we smile.
  • MAMMAL Brain: It is for emotions, as we help one another, show anger to other people, helping one another.
  • HUMAN Brain: Basically it gives us insight, cooperation, discovering, increase of intelligence.

Triune Brain: The Reptilian, Mammalian and Neo-Cortex

Our Brains always grow; whichever part we nurture it will grow. So happiness is a choice also. In a minute we have the choice of becoming happy or anger and if we show anger we are exactly loosing 60 seconds time from our life. It is connected with the feeling of Self Satisfaction as well. It is to do the best that we can do by exploring our full potential. Also, happiness comes by focusing on what we have not on what we do not have. Since life is a journey, not the destination that we always think of, and here every moment is a gift for us all and a great attitude can always lead to a great experience. Do we really smile when we see someone? Or we do wait until a smile comes from another person? We have to exchange a smile and it is a choice for us all.

To remain happy in life it takes just a few things to consider-

  • Be simple & Be Grateful
  • Focus on what you can give not on what you deserve to take
  • Whatever you do, give your 100%, own it
  • Be honest so that you don’t need to tell lie to hide anything
  • Believe in Integrity, Care others, be with family

Accept the truth that life is all about winning and losing. True Fact is that happiness will not come from the advice that we receive from others. We know ourselves and we know our limitations and potentiality. We have to find it from us. As a whole, happiness is a person’s own choice, to make life happy or sad by his own acts. So I want to conclude with the question “Are you happy wherever you are now?”

Enjoy the song….

Author

Mr. K M Hasan Ripon, Writer, Public Speaker, Skill Development Activist for Industry 4.0 | Soft Skills | Entrepreneurship Development

All Photo credit by: www.freepik.com

When there is a will, there is a way

ইচ্ছা পূরন হচ্ছে না কেন?

আমেরিকান সিনেমা সমালোচক পাওলিন ক্যায়েলের বিখ্যাত একটি উক্তি “When there is will, there is way” আমরা সবাই কম বেশী জানি। যার বাংলা অনুবাদ হতে পারে ”ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়”। আসলে আমরা যা করতে চাই সেটা যদি নিজে বিশ্বাস না করি অথবা আমিই পারবো, এই মনোবল যদি আমার ভেতরে নাড়া না দেয় তাহলে ইচ্ছা থাকলেও উপায় বের হবে না। এটাই স্বাভাবিক প্রথম দিকে খুব কষ্ট হয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনে এবং অনেক সময় মনোবল বা ধৈর্য ধরে রাখাটা আমাদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তখন প্রজাপতির মতো এই ফুল থেকে সেই ফুলে উড়ে বেড়াই।

প্রজাপতি এতটাই বিভ্রান্তিকর চরিত্রের যে আমরা বুঝতেই পারি না সে এখন কোন ফুলের উপর গিয়ে বসবে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে প্রজাপতি চরিত্রের মানুষরা বিশ্বাস অর্জনে অনেক বাধার সম্মোখিন হয়। অথবা সহজভাবে বললে বিষয়টি এমন দাড়ায় যে গতকাল আপনাকে একটি কাজ করতে দেখলাম এবং বেশ ভালো লাগলো। আজ চিন্তা করলাম আপনার সাথে দেখা করে সেই কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কাছে গিয়ে দেখি আপনি কাজটিই বন্ধ করে দিয়ে আরেকটি নতুন কাজ শুরু করেছেন। ছোট্ট একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। অনেকদিন ধরেই একটি ছেলেকে আমি ফলো করছিলাম। ওর ক্রিয়েটিভ কাজ বিশেষ করে গ্রাফিক্স সেন্স, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, কালার কনসেপ্ট আমাকে মুগ্ধ করতো। একদিন স্বীদ্ধান্ত নিলাম ওকে অফিসে চায়ের দাওয়াত দেবো এবং আমি কিভাবে ওর সাথে কাজ করতে পারি সে বিষয়ে আলাপ করবো। নম্বর জোগার করে আমি ফোন দিলাম এবং যথারীতি ধাক্কা খেলাম। সে পেশা পরিবর্তন করেছে (কি পেশা বেছে নিয়েছে সেটা আর এখানে নাই বা বলি)। অতএব যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম ”ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়”, এই ইচ্ছাটিকেই আমাদের গভীরে গিয়ে খুজে বের করতে হবে। আমরা প্রতিদিন যে হারে ফেসবুকের কল্যানে প্রতি মুহুর্তে অনুপ্রানিত হচ্ছি এবং যে হারে আমাদের ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটাচ্ছি। সেই একই হারে আমাদের চারপাশের পরিচিতরাও বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের “ইচ্ছার” এই গতিশীল চরিত্রের কারনে ”উপায়ও” খেই হারিয়ে ফেলছে। আপনার “ইচ্ছার” প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ”উপায়” আজ এসে দ্যাখে আপনি গতকালের ইচ্ছাটিই পরিবর্তন করে ফেলেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমার ”ইচ্ছার” এই গতিশীল চরিত্র থেকে বের করে স্থির চরিত্রে রুপান্তরিত করবো কিভাবে?

  • প্রায় ১০ বছর আগে আমি জাপানিজ একটি কনসেপ্টের সাথে পরিচিত হই যা এখন প্রায় অনেকেই জানেন ইকিগাই (IKIGAI)। এই কনসেপ্টির ব্যাপারে আপনারা খুব সহজেই গুগল করে বিস্তারিত ধারনা নিতে পারেন। সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়, যে ইচ্ছাটি আপনাকে স্বাভাবিক ৬/৭ ঘন্টার বেশী ঘুমাতে দেয় না। ব্রেইনের ভেতর সবসময় একটি অটো এলার্ম কাজ করে। ইকিগাই (IKIGAI) কনসেপ্টে চারটি মূল স্তম্ভের কথা বলে (১) “কোন ইচ্ছাটি বেশী ভালোবাসেন”, (২) ” ইচ্ছাটি আপনি নিজে বেশী ভালো পারেন কিনা”, (৩) “সমাজে ইচ্ছাটির চাহিদা আছে কিনা”, (৪) “ইচ্ছাটি আপনাকে উপার্জনে সাহায্য করবে কিনা”। বিশ্বব্যাপী ইকিগাই (IKIGAI) সমাদৃত হয়েছে। তবে এককভাবে বের করতে পারলে তো খুবই ভালো, যদি সমস্যা হয় তাহলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন নিরপেক্ষ মেন্টনশীপের।

  • দু-ধরনের মেন্টরশীপ আমরা দেখতে পাই। পেইড এবং কমপ্লিমেন্টরি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে বেশী জোর দেবো। সম্পর্ক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বচ্ছতা যা আসলে বিশ্বাস তৈরিতে কাজ করে। ধরুন আপনি একজনকে ফেসবুকে বা লিংকডইনে নক করলেন। যদি তিনি আপনার মেসেজটি দেখেন তাহলে উত্তর দেবার আগে তিনি অবশ্যই আপনার প্রোফাইল ভিজিট করবেন। আপনার প্রোফাইলটি যদি স্বচ্ছ না হয় তাহলে আপনি উত্তর পাবেন না।

  • কয়েক ধরনের চরিত্র আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে । তবে সবচেয়ে পছন্দনীয় চরিত্র হচ্ছে “DOER” বা যিনি সময়ের অপেক্ষা না করে কাজে নেমে যান, শেখেন এবং প্রয়োগ করেন। Doer কে খুব সহজেই চিনতে পারেন কমপ্লিমেন্টরি মেন্টরশীপ সার্ভিস প্রোভাইডাররা। আপনি Doer কিনা সে বিষয়টিতে তারা খুব সচেতন। মনে রাখতে হবে গঠনহীন সমালোচক বা নেতিবাচক মনোভাবের মানুষকে কেউই পছন্দ করে না। নেতিবাচক কনটেন্টকে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে কিন্তু আসল কাজে হাত বাড়াবে না। নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলটিতে গঠনহীন সমালোচক বা নেতিবাচক মনোভাবের তকমা লাগিয়ে দেই।

  • ইংরেজীতে একটি কথা আছে “A Goal without Plan is just a Wish (পরিকল্পনা ছাড়া লক্ষ্য কেবল একটি ইচ্ছা”)। এই কথাটি থেকে আমরা বুঝতে পারছি ইকিগাই (IKIGAI) এর মাধ্যমে নির্ধারিত ইচ্ছাকে মেন্টরশীপের মাধ্যমে লক্ষ্যতে রুপান্তর করতে হবে।

  • এখন অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে মেন্টর পাওয়া যায় না। তখন কি করবো? অবজার্ভ শব্দটি এখানে প্রযোজ্য হবে তখন। প্রচুর রিসার্চ করতে হবে। প্রচুর প্রশ্ন করতে হবে গুগলকে এবং ইউটিউভকে। দেশে বা বিদেশে বিখ্যাত মানুষেরা কিভাবে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়েছেন তার পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনা করার সময় অবশ্যই কাগজ ও কলম সাথে রেখে সংগে সংগে লিখে ফেলতে হবে। তারপর স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছকের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। “আজ না কাল করবো” নামক ব্যাধী থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।

  • পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাদের বা কোন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্য আপনার লাগবে তারও একটি তালিকা আপনার করতে হবে। তারপর শুরু হবে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ। সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই নির্ধারন করতে হবে ”উইন-উইন কৌশল”। প্রচুর পরিমানে ফিজিক্যাল এবং ভার্চুয়াল উপস্থিতি বাড়াতে হবে। অতএব যত বেশী পারা যায় বিভিন্ন ইভেন্টে (ফিজিক্যাল এবং ভার্চুয়াল) অংশগ্রহন করতে হবে (যদি মজা করে বলি তাহলে বলবো আমন্ত্রন না জানালে, আমন্ত্রন চেয়ে নিতে হবে)। হিংসা বা অহংকার নামক ভাইরাস থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হবেই। অতএব নিজের ক্ষুদা প্রথমে নিজেকে মেটাবার চেষ্টা করতে হবে, তারপর মানুষ আপনার ইচ্ছাশক্তি দেখে সামনে এগিয়ে আসবে নিজেদের প্রয়োজনেই। একটি প্রশ্ন রেখে শেষ করছি “আপনার ইকিগাই (IKIGAI) কি আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভব হবে”?

Negotiation Part-1

উন্নত বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক কতটা প্রয়োজন?

বাংলাদেশের জন্য এখন সুবর্ণ সময়! আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশেরও বেশি কর্মক্ষম যুবসমাজ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বৎসরের মধ্যে। আর এই ৩৩ শতাংশ কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনেই আমরা এই মুহুর্তে ডেমোগ্রাফিক লভ্যাংশের উপকারিতা উপভোগ করছি। আবার বিশেষজ্ঞরা অন্যভাবে বলবার চেষ্টা করছেন যে কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনে আমাদের সামনে এখন অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি। যদি যুগপোযোগী নির্দেশনার মাধ্যমে তরুন সমাজকে কার্যকরি দক্ষতা ‍দিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুন সমাজকে বাস্তবিক জ্ঞান, কার্যকরি দক্ষতা এবং উন্নত মানসিকতার প্রশিক্ষনের বাইরে রেখে লক্ষ্য অর্জন কতটুকু যুক্তিযোগ্য তা নতুন করে ভাবার দাবী রাখে। এই মূহুর্তে বিশ্বব্যাপী দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে হিসেবে তরুন সমাজকে গড়ে তুলবার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যত্রম পরিচালিত হচ্ছে। দায়িত্বশীল নাগরিক আমরা তাকেই বলবো যিনি তিনটি বিষয় মনের গভীরে লালন করেনঃ

দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগানো। প্রায় ১৬/১৭ বছর বয়সের তরুন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের আশায় প্রায় ৬/৭ বছরের কঠোর শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর যখন সমাজ তাকে বলে এবার জীবিকার খোজে বের হও তখন তার সামনে অন্য এক বাস্তবতা এসে উপনিত হয় যা তার মানসিকতাকে স্থির করে দেয়। আর এই স্থির মানসিকতার কারনেই আমাদের যুবসমাজ আজ অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও কাজে লাগাতে পারছে না।

ডিজিটাল উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে যাবার পথে আমাদের সামনে এসে উপস্থিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যা নিয়ে এসেছে একাধারে ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ এবং সাথে আছে সুযোগের সমাহার। বলা হচ্ছে যতই শিল্প বিপ্লব আসুক মানুষের বিকল্প কখনই যন্ত্র হতে পারে না যদি উন্নত মানসিকতায় সমৃদ্ধ জনসম্পদ তৈরি করা যায়। আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বর্তমান যুবসমাজ স্থির মানসিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ প্রায়। যার কারনে

  • যথেষ্ঠ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুযোগ দেখছেনা,
  • নিজের জ্ঞান ও দক্ষতাকে খুজে পাচ্ছে না
  • খুজে পেলেও কাজে লাগাতে পারছে না
  • মনের দিক থেকে সংকীর্ন হয়ে যাচ্ছে,
  • প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিচ্ছে
  • দেশ প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে
  • গতানুগতিকধারার বাইরে কিছু ভাবতে পারছে না
  • আত্মসচেতনতা ও সামাজিক সচেতনতার ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে যার ফলে আবেগীয় দক্ষতার হার এখন নিন্মমূখী।

স্থির মানসিকতা থেকে যুবসমাজকে উন্নত মানসিকতায় পরিবর্তন করতে প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়ন চক্র সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে আত্মবিশ্বাস, আত্মসচেতনতা এবং সামাজিক সচেতনতা।

হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। গতনুগতিক ধারাতেই চলছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রয়োজন দায়িত্বশীল নাগরিক। তার জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজনঃ

  • তরুনদের মাঝে মানকিক জ্ঞান, নৈতিক মূল্যবোধ ও আবেগীয় দক্ষতা বৃদ্ধির যথাযথ ধারনা প্রদান করা ।
  • উন্নত মানসিকতা বিকাশের মাধ্যমে দায়িত্বশীল নাগরিক ‍হিসেবে গড়ে তোলা।
  • প্রযুক্তি বিকাশের ধারা এবং সংযুক্ত থাকবার ধারনা এবং যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে সম্মুখ ধারনা প্রদান করা।
  • শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রয়োজন এবং ধারনা প্রদান করা।
  • প্রমিত বাংলার ব্যবহার এবং কর্মের জন্য যোগাযোগের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজীর উপর দক্ষতা প্রদান করা।
  • সৃজনশীল চিন্তার মাধ্যমে সমস্যাকে সমাধানে রুপান্তরের প্রক্রিয়ার বাস্তব জ্ঞান প্রদান করা ইত্যাদি।
  • ভবিষ্যত কর্মের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  • শুধুই  ডিগ্রী নয় বরং কারিগরি দক্ষতার উপর গুরুত্ব দেয়া
  • মুখস্ত বিদ্যার মাধ্যমে শুধু খাতা ও কলমের ব্যবহার দ্বারা মূল্যায়ন করা থেকে বেরিয়ে আসা

আমি আগেই লিখেছি যদি তরুন সমাজকে কার্যকরি দক্ষতা ‍দিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। সেজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং এই পরিকল্পনা হতে হবে ভবিষ্যতকে সামনে রেখে।

DSC_0049 (1) (1)

কর্মক্ষেত্রের শেষ কর্মদিবস-কেমন হওয়া উচিত?

আমার স্কুল জীবনের ইংরেজীর একজন শিক্ষক আমাকে সবসময় বলতেন “মনে রাখবি শেষ ভলো যার সব ভলো তার”। তিনি মনে করিয়ে দিতেন ক্লাশ চেষ্ট বা সেমি ফাইনাল পরীক্ষায় যতই ভালো ফলাফল করি না কেন, ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতেই হবে। আমি যেন ভালো নম্বর পাই তাই প্রায়ই সন্ধার দিকে আমার বাসায় পর্যন্তু চলে আসতেন। স্কুল জীবনে ক্রিকেটের প্রতি ছিল ভীষন ঝোক, একটা সময় সারাদিন মাঠে পড়ে থাকতাম। কি রোদ আর ছায়া, গরম অথবা ঠান্ডা, ক্লাবের মাঠে সব সময় প্রাকটিস। কোচ বলতেন প্রাকটিসে যতই ছক্কা মারো না কেন, ম্যাচের দিন ভালো না করলে কোন লাভ নাই। তাই অবহেলা না করে মন দিয়ে প্রাকটিস করো। পড়াশুনা শেষ করে যখন কর্মজীবন শুরু করলাম তখন বস বলেন অফিসে সহকর্মীরা যতোই আপনাকে ভালো বলুক না কেন, দিন শেষে রেজাল্ট দেখাতে না পারলে কোন লাভ নাই। জীবনে প্রতিক্ষেত্রে একটিই প্রবাদের সাথে আমার বার বার দেখা হয়েছে আর সেটি হলো “শেষ ভালো যার সব ভলো তার”।

আজকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছি এই প্রবাদটিকে। কর্মজীবনে এর গুরুত্বও আমি টের পেয়েছি। চাকরিজীবী মানেই হলো আপনি কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষ এবং যোগ্য হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করবেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বললাম এই কারনে যে, কোন একটি প্রতিষ্ঠানে একবছর কাজ করার পর আর একটু ভালো বেতন বা সুযোগ সুবিধার জন্য আপনি কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করবেন এবং এটাই স্বাভাবিক। আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। তবে অভিজ্ঞদের মতে যারা বছর বছর কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে, তারা ক্যারিয়ারের মাঝ পথে এসে হঠাৎই হোচট খেতে পারেন।

যাই হোক কেন বলছি এসব কথা? তার একটি কারন আছে। প্রায় ১৮ বছর হলো কাজ করছি। এই ১৮ বছরে বহু মানুষের সাথে কাজ করেছি এবং করছি। এই মানুষগুলোর সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বলেই বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতায় নিজের ক্যারিয়ারকে সাজাতে পেরেছি। একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই যেটা পড়ার পর হয়তো বুঝাতে সক্ষম হতে পারি কেন শুরু করেছি “শেষ ভালো যার সব ভলো তার” প্রবাদটি দিয়ে।

রাসেল (ছদ্মনাম) নামে আমার এক সহকর্মী আমার সাথে ২০০৯ সালের দিকে কাজ করেছে। প্রথম দিন থেকেই ও সবার মন জয় করে নিয়েছিল। ওর ভেতর একধরনের আগুন ছিল অনেকটা রকেটের মতো। রকেট যেমন নিচ থেকে আগুনের চাপে উপরের দিকে ধাবিত হয় যাকে ইংরেজীতে Thrust বলে ঠিক সেরকম। যেকোন ‍এ্যাসাইনমেন্ট সময়তো শেষ করেই তারপর ক্ষান্ত হতো। ওর যে গুনগুলো আমাকে মোহিত করত যেমনঃ

  • সময়ের সদ্বব্যবহার করা
  • যেকোন মূল্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা
  • সাহস এবং উদ্দ্যম নিয়ে পেছনে না ফিরে সামনের দিকে এগিয়ে চলা
  • কৌতুহলী মনোভাব পোষন করে সুযোগকে নিজের মতো করে তৈরী করে নেয়া
  • আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা ‍দিয়ে সকলের মন জয় করা
  • সকলের সাথে মিলে কাজ সম্পন্ন করা
  • প্রত্যেকের মনোভাব, মতামত এবং মানসিকতাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া
  • নিজের পজিটিভ আচার আচরনের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকা
  • কখনও নিজের নৈতিকতাকে বিষর্জন না দেয়া
  • কাজের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান থাকা
  • নতুন সম্পর্ক তৈরীর সাথে সাথে পুরানো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা
  • যথাযথভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

একসাথে অনেকদিন কাজ করেছি এবং অনেক কাজ সহজেই প্রত্যাশা অনুযায়ী উঠিয়ে নিয়ে এসেছি এবং এভাবে চলতে লাগলো অনেকদিন। তারপর একদিন এসে আমার কাছে বললো স্যার আমি নিজেকে নিয়ে আর একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। সেলস এন্ড মার্কেটিংয়েই থাকবো তবে সেক্টরটা পরিবর্তন করতে চাই। আমি আপনার কাছে অনুমতি চাইছি। আমরা দুজনে মিলে টাইম ফ্রেম নির্ধারন করলাম এবং ওর হাতে যে দায়িত্বগুলো ছিল সেগুলো কিভাবে সম্পন্ন হবে তারও একটা পথ বের করলাম। অবাক করার ব্যাপার হলো যে মাসটি ওর জন্য আমাদের কর্মক্ষেত্রে শেষ মাস ছিল সে মাসেই ওর সেলস এ্যাচিভমেন্ট অন্য মাসের চেয়েও বেশী ছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠানে শেষ দিন পর্যন্তু সে প্রথম দিনের মতোই কাজ করে গেছে।

উপরের যে ঘটনাটি উল্লেখ করলাম তা সাধারনত খুব একটা দেখা যায় না। একটি কাজে থাকা অবস্থায় নতুন আরেকটি কাজের সন্ধান পেলে বর্তমান কাজের কথা আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুলে যাই। হবু নিয়োগকর্তাকে খুশি রাখতে গিয়ে বর্তমান নিয়োগকর্তাকে ভুলেই যাই। তখন আর আমাদের মনেই থাকে না যে আমার বর্তমান কর্মক্ষেত্রের শেষ কর্মদিবস আমার ক্যারিয়ারের জন্য কতবেশী গুরুত্ব বহন করে। শেষ ভালো যার সব ভালো তার, শেষ মাসকে যদি সেরা মাস বানাতে পারি তাহলে নতুন কর্মক্ষেত্রে গিয়েও পুরানো কর্মক্ষেত্রের পূর্ন সমর্থন আমরা আশা করতে পারি। আর যাদি মনে করি নতুন কর্মক্ষেত্র, নতুন বেতন, নতুন সহকর্মী, নতুন পরিবেশ আর তার চিন্তায় যদি বর্তমান দিনকে অবহেলা করি তাহলে আমার জন্য ”আমও গেল, ছালাও গেল” প্রবাদটি অবধারিতভাবে সত্য হয়ে যাবে। ধরুন আপনি বর্তমান কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আরেকটি সুযোগ পেয়ে গেলেন, তখন আপনার কি করা উচিত হবে?

  • আপনার বসের কাছে গিয়ে সরাসরি ব্যাখ্যা করুন
  • আপনার উপর যে অর্পিত দায়িত্ব আছে সেগুলোর সমন্বয় কিভাবে করবেন তার পরিকল্পনা করুন
  • যাকে আপনি আপনার দায়িত্বগুলো বুঝিয়ে দেবেন তার সাথে বসে পরিকল্পনা করুন
  • সবগুলো অবশিষ্ট কাজ একটি এক্সেল শিটে ফেলে ট্র্যক করুন
  • দলের প্রত্যেকের কাছ থেকে জেনে নিন কারো কোন কাজের সাথে আপনি সংযুক্ত আছে কিনা
  • এডমিন এবং একাউন্টসের সাথে পৃথকভাবে বসুন এবং তাদের কাছ থেকেও আনঅফিসিয়ালী ছাড়পত্র নিন।
  • নতুন কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে অবশ্যই আপনার বর্তমান কর্মক্ষেত্রের নিয়মগুলো জেনে নিন। অনেক সময় এমন হয় যে আপনি নতুন নিয়োগকর্তাকে বললেন আপনি যেকোন সময় যোগ দিতে পারবেন কিন্তু আপনার বর্তমান কর্মক্ষেত্রের নিয়মে সেটা উল্লেখ নেই। তখন আপনি বিপদে পড়তে পারেন। আবার নতুন নিয়োগকর্তাও বুঝে যাবে নৈতিকতার জায়গায় আপনি নড়বড়ে।

আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে মানুষের জীবনের সফলতার জন্য প্রয়োজন টেকসই সম্পর্ক যা তার সপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে। আমরা জানি না বা কখনো আগাম বলে দিতেও পারি না কোন সুসম্পর্ক কোন সময় আমার কাজে আসবে। কিন্তু এ কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমার সাফল্য অর্জন এবং সেটা ধরে রাখার জন্য আমি একাই যথেষ্ট না। আমারও সহযোগীতার প্রয়োজন আছে। তাই আমি মনে করি এই মুহুর্তে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন তারা আপ্রান চেষ্টা করুন যেকোনভাবেই হোক একটা ইন্টার্নশীপ বা ভলেটিয়ারী কাজ যোগার করবার জন্য। যদি বিনা পয়সায় করতে হয় তাহলেও পিছ পা হবেন না এবং ঐ কর্মক্ষেত্রের শেষ কর্মদিবস পর্যন্তু আপনার সেরাটি দিয়ে যাবেন। দেখবেন ঐ শেষ দিনের সেরা কাজটিই আপনাকে ভবিষ্যতে কোন না কোনভাবে সাহায্য করবে।

81770049_10213491954411769_569399357917364224_o (1)

ট্রেনিং সেশনে লেকচার বেশী হয় নাকি কাজ?

ট্রেনিং সেশনে লেকচার বেশী হয় নাকি কাজ? এমন একটি সাধারন সার্ভে অনলাইনে করেছিলাম। যেখানে ৫২ শতাংশ মানুষ বলেছে লেকচার নাকি এখনও বেশী হয় বিভিন্ন সেশনে। ৪৮ শতাংশ মানুষ বলেছে তাদের ক্লাসে কাজ বেশী হয়। কর্মদক্ষতা বাড়াবার জন্য আমরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করি কিন্তু আমরা ভুলে যাই কর্মদক্ষতা কথায় নয় কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। আশার কথা হচ্ছে এখন বাংলাদেশের মানুষ কথা বলতে পারে, যেকোন বিষয় কথা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারে। ৬ বছরের এক শিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তুমি কি জানো, সে ইংরেজীতে আমাকে বলে “Practice Makes Everything Better”. বাচ্চাটা জানে অনুশীলনের গুরুত্ব, এখন ওঁকে বোঝাতে হবে সঠিকভাবে অনুশীলন করার পদ্ধতি যেটা কথায় নয় কাজের মাধ্যমে করে দেখাতে হবে। বুঝাতে হবে Benjamin Franklin এর সেই বিখ্যাত চারটি লাইন:

  • I Hear I Forget
  • I See I Remember
  • I Do I can Understand
  • I Practice I become Master

আর এটাকেই বলা হচ্ছে Inclusive Learning. আমি ৮ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার TAFE (Technical & Further Education) এ যখন গিয়েছিলাম Inclusive Learning এর উপর প্রশিক্ষণ নিতে। তখনও জানতাম না এটার গুরুত্ব কতোটুকু। প্রশিক্ষণ শেষে নিশ্চিত হলাম কেন অস্ট্রেলিয়ার একজন গাড়ী চালক সমগ্র পৃথিবীতে গাড়ী চালাবার যোগ্যতা রাখে এবং তাকে নতুন করে আবার প্রশিক্ষন নিতে হয় না। সহজ কথায় Inclusive Learning হচ্ছে শুধুই জ্ঞান (Knowledge) নয়, কর্মদক্ষতা (Competency) নিশ্চিত করার মাধ্যমে যোগ্য কর্মী হিসেবে তোলা। পাশপাশি এটাও নির্ধারন করে দেওয়া যে তার অর্জিত জ্ঞান (Knowledge) এবং কর্মদক্ষতা (Competency) আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত হচ্ছে। এই কাজটি অবশ্য শিক্ষামন্ত্রনালয়কে করতে হবে এবং আশার কথা হচ্ছে ইতিমধ্যেই জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কতৃপক্ষ কাজটি শুরু করেছেন।

পরিশেষে বলবো আমাদের সবার ট্রেনিং সেশনে প্রয়োজন #MALT_System (More Activities Leas Talk) চালু করা এবং অনুশীলন করা। তাহলেই আমরা জ্ঞান (Knowledge) এবং কর্মদক্ষতা (Competency) নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।

 

কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)

Untitled (4)

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা চারটি প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে

বছর আসে বছর যায়। এটাই সৃষ্টির শুরু থেকে হয়ে আসছে এবং হতে থাকবে। জীবন থেকে ৩৬৫ দিন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের যুগে এখন তো সময় যেন আমাদের সাথে মাইকেল বোল্টেকে অনুকরণ করে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড় প্রতিযোগীতায় নেমেছে। ২০১২ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস এ অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে ৩ ঘন্টার যাত্রা বিরতি হলো। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বসে আছি। সময় আর কাটে না। তার ঠিক ৭ বছর পর কেপটাউন থেকে বাংলাদেশে ফিরবো, মাঝখানে দোহা এয়ারপোর্টে ৯ ঘন্টার যাত্রা বিরতি। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে কাজ করা শুরু করলাম। হঠাৎ শুনলাম ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট। মনে হলো মুহুর্তের মধ্যে ৯ ঘন্টা কেটে গেছে।  এই হলো বর্তমানের সময়ের গতি।

এখন চাইলেই সময় নষ্ট করা যায় কিন্তু চাইলেই সময়ের সদ্বব্যবহার করা যায় না। সময়ের সদ্বব্যবহারের জন্য চাই সময়ের পরিকল্পিত ব্যবহার। না হলে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের রাতে আমরা একটি বছর কে বিদায় দিয়ে নতুন আর একটি বছর কে আমন্ত্রণ জানাবো। আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা প্রায় কাজ করে আর সেটি হলো আমরা মনে করি নতুন বছর মনে হয় আমাদের চাহিদাকে আপনা আপনি ঠিক করে দেবে। আমরা মনে মনে প্ল্যান করি, অনেক পরিকল্পনা করি কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে অবহেলা করি। সাধারনত পুরানো বছরের শেষের দিকে আমাদের অবকাশ যাপন শুরু হয়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মজা, শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতেই নতুন বছরের প্রথম মাসের অর্ধেকটা কেটে যায়। আর সেই সাথে সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাবতো আছেই।  আমাদের পরিকল্পনা কল্পনাতেই রয়ে যায়।  বিশেষজ্ঞরা বলেন ক্যারিয়ার প্ল্যান বছরের শুরুতেই করা উচিত যার জন্য প্রয়োজন সচেতন এবং খোলা মন।

বর্তমানে আমরা একটু এগিয়ে আছি কারন আমরা এমন এক সময় অবস্থান করছি যখন আমাদের যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সাথে সহায়ক ভুমিকা পালনের জন্য আছে প্রযুক্তি।  মানুষ চাইলেই সব পারে কিন্তু সমস্যা হলো আমরা জানিই না আমি কি চাই, আমার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, বাস্তবায়নের জন্য কি কি দরকার এবং কাদেরকে দরকার। মানুষের ধর্ম হলো চাপে না পড়লে কিছুই করতে পারে না। যদিও এর মধ্যেও ব্যাতিক্রম আছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেতর থেকে শক্তি উৎপন্নের জন্য প্রয়োজন একটা ধাক্কা। প্রত্যেকের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করার সময় চারটি প্রশ্ন করা অত্যন্ত জরুরী। যে চারটি প্রশ্ন তিনি নিজে নিজেকে করবেন এবং উত্তর বের করার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় মেন্টরের সহায়তায় উত্তর বের করা যেতে পারে তবে সঠিক মেন্টর খুজে বের করতে না পারলে আবার হীতে বিপরীত হতে পারে। প্রশ্ন চারটি হচ্ছেঃ

  • ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী হবার জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কি হতে হবে বলে আপনি মনে করছেন? প্রথম প্রশ্নটি একটু জটিল এবং চিন্তা করে বের করার মতো। অনেকে আবার বলেন চাইতে তো সমস্যা নেই এবং চাইবোই যখন তখন কোন বাছ বিচার করবো না। তবে এতটুকু মনে রাখতে হবে ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারে এমন জিনিস কামনা করাই শ্রেয়। তবে এই প্রশ্নটির উত্তর বের করতে হলে সবার আগে নিজেকে জনতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজন আত্মমূল্যায়ন এবং গবেষণা ।

 

  • শীর্ষ তিনটি লক্ষ্য কি আপনি নির্ধারন করতে পারেনউপরের চাহিদাগুলো আপনার ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত করতে কোন তিনটি শীর্ষ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে আপনার বাস্তবায়ন করতে হবে। তার একটা কর্মপরিকল্পনা বের করতে হবে।

 

  • নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন বা অর্জনের জন্য কী ধরণের শিক্ষা বা উপকরন আপনার প্রয়োজনআপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে আপনার কি কোন ধরনের শিক্ষা বা প্রশিক্ষনের প্রয়োজন আছে কিনা। বা কোন মেন্টর বা পরামর্শদাতার প্রয়োজন পড়বে কিনা, সেটা নির্ধারন করাটা অত্যন্ত জরুরী।

 

  • লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে, আপনার কী নতুন কোন সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন? এক্ষেত্রে আপনি একটি ছক তৈরি করে কোন কোন মানুষের সাহায্য বা সহযোগীতা আপনার প্রয়োজন তার একটি তালিকা আপনি করে নিতে পারেন। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার বা কাদের সহযোগীতায় আপনি করবেন বা এমন কে বা কারা আছেন যারা আপনাকে পেশা ভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। অথবা খুজে বের করা এমন কারা আছেন যারা আপনাকে সাহায্য করবেন সেখানে যেতে যেখানে আপনি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৌছতে চাচ্ছেন।

 

প্রশ্নগুলো অত্যন্ত সাধারন এবং অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যেই আপনাকে বলেছেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি এখনও সময় নিয়ে যথাযথভাবে পরিকল্পনা করা এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সময় বের করতে পারেননি। ধরে নিন ২০২০ সাল আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর এবং এখন থেকেই কাজ করতে হবে যেন ২০২৫ এর মধ্যে আপনি সেই জিনিসগুলো আপনার ক্যারিয়ারে সংযুক্ত করবেন যেগুলো আপনাকে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারবে। মনে রাখবেন আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন ততোক্ষনে ২০২০ সাল চলমান এবং অচিরেই চলে আসবে আরেকটি ৩১ ডিসেম্বর। তাই উত্তর বের করুন, কাজ করুন, লেগে থাকুন, সাফল্য আসবেই। আর সবসময় মনে রাখতে হবে অনুশীলনে সবই সম্ভব।

ক্যারিয়ারে যেকোন সহযোগীতার প্রয়োজন হলে মনে রাখবে আপনার পাশে আছে আপনাদের ভাই কে এম হাসান রিপন এবং তার কর্মস্থল বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)। কোন ধরনের সংকোচবোধ না করে আমাদের ফোন করুন (+৮৮ ০১৭১৩৪৯৩২৪৩) অথবা ইমেইল করুন ([email protected]).