সকালে বাসা থেকে অফিসে যাচ্ছি। মিরপুর মাজার রোডে হঠাৎ দুই রিক্সার মাঝখানে পড়লো আমার উবার। এর মধ্যে একটি রিক্সাতো গাড়িতে ঘষা লাগিয়ে দিচ্ছিল প্রায়, ড্রাইভার সাহেব গাড়ির গ্লাস নামিয়ে রাগ হয়ে চিৎকার করে ধমক দিয়ে বললেন গাড়িতে লাগলে কিন্তু খবর আছে। চাচা টাইপের রিক্সাচালক উল্টা দিল ঝাড়ি। ঝাড়ি খেয়ে ড্রাইভার সাহেব ব্রেক করলেন, তারপর গ্লাস নামিয়ে রেখে দুইজনের ঝগড়া আর আমার ২০ মিনিট লস।
ঘটনা#২ঃ
বিকেলে আমার অফিস থেকে বনানী আমার এক বন্ধুর অফিসে যাচ্ছি। বনানী তে আবার সেই রিক্সার জট। এইবার আরেক চাচা টাইপ রিক্সাচালক কে ড্রাইভার সাহেব হাসি দিয়ে বললেন চাচা আমি আগে যাই? চাচা উল্টা হাসি দিয়ে বললেন যান বাবাজী। ব্যাস ২০ মিনিট লাভ হয়ে গেলো
Moral of the Story:
রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রেগে গিয়ে হেরে আমরা প্রায়শই যাচ্ছি তারপরও নিজের কাছে প্রশ্ন করি আমি হেরে গেলাম কেনো?
গতকাল এশার নামাজ পড়ে অফিস থেকে বের হবার পর ক্রিসেনট লেকের কাছাকাছি এসে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে যাই। দেখতে পেলাম ১০/১২ বছরের একটি মেয়ে ফুলের মালা বিক্রি করছে। অনেকের কাছে সে বিক্রি করার চেষ্টা করছে। আমি মনে মনে ভাবলাম ও যদি আমার কাছে আশে তাহলে আমি ওর কাছ থেকে মালা গুলো কিনব এবং যে দাম চাইবে সেই দামই দেবো। ঠিক ১০/১২ টি গাড়ি পার করে আমার কাছে এসে হাজির।
এগুলো কিসের মালা? উত্তরে বললো “বেলী ফুলের মালা”। দাম কত? এক পিস ২০ টাকা। অনেক বেশি দাম। ভাইয়া আপনি কত দিবেন? তুমি বলো কত করে দেবে? আপনার জন্য একটা ২০ টাকা। স্যার নিয়ে নেন ম্যাডাম অনেক খুশী হবে। তুমি বুঝলা কেমনে? আমি জানি ভাইয়া। তোমার কাছে কত গুলো আছে? স্যার ৫টা আছে। ৫ টাই দাও। বলো এইবার দাম কত? সত্যিই ৫টাই নেবেন? স্যার ১০০ টাকা দিয়েন। প্লিজ ভাইয়া নিয়ে নেন আপা খুশি হবে। আমি ৫টা ৫০ টাকা দেবো, তাড়াতাড়ি বলো সিগন্যাল ছেড়ে দেবে। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে নেন।
আমি বললাম ঠিক আছে যাও ১০০ টাকার ভাঙতি টাকা নিয়ে আসো। ও মালা গুলো দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো ভাঙতি আনতে। ততক্ষণে সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে আর আমি একটু সামনে গিয়ে সাইড করে রেখেছি। কিছুক্ষণ পর আমাকে এসে বলে এই নেন ভাইয়া ৫০ টাকা। আমি বললাম এই নাও ৫০ টাকা তোমার মালা দাম আর এই হচ্ছে ৫০ টাকা তোমার বোকশিস তোমার ভালো ব্যবহারের জন্য। আমি দূর থেকে ওর আনন্দ দেখতে চাচ্ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে ও সবাই কে জড়ো করলো আর বলতে লাগলো। কি বলছিল জানি না তবে সবাই ওকে সাবাসী দিচ্ছিলো। তারপর পাশে বসে থাকা ছোট্ট বোনকে নিয়ে খেলা শুরু করে দিলো, মনে হয় আজকের টার্গেট পূর্ণ হয়ে গ্যাছে। ওর হাসি দেখে মনে হলো সে আজ Star of the Day.
আমরা সবাই কোন না কোনভাবে বিক্রয়কর্মী। এরকম আনন্দ আমরা সবাই করতে চাই, Star of the Day সবাই হতে চাই কিন্তু পারি না কারণ Star of the Day হতে হলে যে আনন্দ নিয়ে পরিশ্রম করা দরকার সেটি আমরা করি না বা করতে পারছিনা। আমি চাইলে মেয়েটিকে কষ্ট ছাড়াই ১০০ টাকা দিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু যে জয়ী ভাব তাঁর ভেতর এসেছে সেটা হয়তো সে পেতো না।
Moral of the Story: আমার এক ছাত্র আমাকে বলে ছিল “Struggle কে জয় করতে হলে আরো বেশী Struggle করতে হবে”।
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট ([email protected])
আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশী সিভি বা রিজুমে লিখতে হয়। সম্ভব সিভি বা রিজুমে একমাত্র ডকুমেন্ট যা সবচেয়ে বেশী কপি করা হয় এবং সত্যিকার অর্থে বললে সিভির জন্য সাহায্য চাইতে কারোরই কোন সংকোচবোধ হয় না কারন এটি একটি সার্বজনীন স্বীকৃত যে সিভি লিখতে হলে অন্যজনেরটি সাবার আগে কপি করে তারপর নিজের তথ্য সংযোজন করতে হয়। এ নিয়ে অনেক মজার মজার ঘটনা যেমন জেন্ডার পরিবর্তন করতে ভুলে যাওয়া বা নিজের বাবার নামটিও পরিবর্তন না করে বন্ধুর বাবার নাম রেখে দেয়া। যাইহোক আজকের ব্লগে সম্পূর্ণ সিভি নিয়ে লিখবো না তবে সিভির ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective) নিয়ে লিখবো। আমার এই ব্লগটি পড়া শেষ করলে আপনি জানরত পারবেন: ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective) গুরুত্ব এবং একটি স্যাম্পল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective)।
সিভি যেমন সবচেয়ে বেশী কপি করা হয় তেমনি সম্পূর্ণ সিভির থেকে অবজেক্টিভ (Career Objective) অংশটি তারচেয়েও বেশী পরিমানে কপি করা হয়। সেজন্য আমরা দেখতে পাই সবারই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective) প্রায় একই রকম। একজন নিয়োগকর্তা যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন তখন তাদের কাছে হাজার হাজার সিভি জমা পরে। স্বভাবতই সম্পূর্ণ সিভি একজন নিয়োগকর্তা বা নিয়োগ বিভাগ কখনই পড়তে পারেন না। তখন তারা কয়েকটি স্থান দেখে সিভিটিকে প্রাথমিকভাবে স্ক্রিনিং করেন। সহজভাবে বললে হাজারখানেক সিভি থেকে কিছু সংখ্যক সিভিকে তারা প্রাথমিক স্ক্রিনিং বক্সে রেখে বাকিগুলো বাদ দিয়ে দেন। যে কয়েকটি স্থান দেখে প্রাথমিকভাবে একটি সিভি সিলেক্ট করা হয় তারমধ্যে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective) অন্যতম। ৬০ থেকে ৭০ শব্দের ৫/৬ লাইনে গঠিত অনুচ্ছেদ দেখেই নিয়োগকর্তা স্বীদ্ধান্ত নেন কাকে ইন্টার্ভিউর জন্য ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না। ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ (Career Objective) হলো চাকরি সন্ধানের যাত্রাপথের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারণ এই অংশটুকুই নিয়োগকর্তাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে। এক কথায় বললে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের মাধ্যমেই নিয়োগকর্তা অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার দক্ষতা, জ্ঞান, কর্মক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারেন। কিন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে আমরা প্রায় সকলেই অবহেলা সহকারে লেখার চেষ্টা করি। ক্যারিয়ার বিশেজ্ঞরা আবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে সম্পূর্ণ সিভি লেখার পর ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখতে হয়।
ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখবার জন্য করেকটি ধাপ আমরা মেনে চলতে পারি। ধরে নেই আমি আমার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখছি এবং আমি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেড়িয়েছি এবং সেই অর্থে আমার কোন ফরমাল কাজের অভিজ্ঞতা নেই। সেক্ষেত্রে আমি যে ধাপগুলো অনুসরন করবো:
ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ যার কোন অভিজ্ঞতা নেই
আমার সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য (Strong Trait):
পৃথিবীর যেকোন নিয়োগকর্তা একজন স্বপ্রনোদিত বা স্ব-অনুপ্রানিত মানুষকেই তার কর্মক্ষেত্রের জন্য নিয়োগ করতে চান কারন একজন স্ব-অনুপ্রানিত মানুষ যেমন নিজেকে অনুপ্রানিত করে তেমনি তার দলের অন্য সবাইকে অনুপ্রানিত করবার চেষ্টা করে। অতেএব এখানে আমি উল্লেখ করতে পারি ”Highly Self Motivated”
আপনার পেশা বা কাজের শিরোনাম (Your Profession or Job Title):
যেহেতু আমার পূর্বের কোন ফরমাল কাজ করবার অভিজ্ঞতা নেই সেহেতু আমি নিজেকে মার্কেটিং গ্রাজুয়েট “Marketing Graduate” হিসেবে পরিচয় দেবো আমার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে।
২+২ দক্ষতা
আমার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে অবশ্যই ২টি হার্ডস্কিলস এবং ২ সফ্টস্কিলস উল্লেখ করতে হবে। যেমন: “Skilled in Digital Marketing & Adobe Designing Tools (২টি হার্ডস্কিলস) with proven communication and Teamwork skills (২টি সফ্টস্কিলস).
যে প্রতিষ্ঠানে এবং পজিশনের জন্য আপনি আবেদন করেছেন:
মনে রাখতে হবে আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ হলো ডাইনামিক মানে হলো এটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং পজিশনের জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে লিখতে হতে পারে। যেমন: “Seeking a position as a marketing intern at Daffodil Group”
প্রতিষ্ঠানকে আপনি কি অফার করছেন?
মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান আপনাকে তখনই ইন্টার্ভিউর জন্য ডাক দেবে যখন সে আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনার অফার খুঁজে পাবে। যেমন: “to utilize knowledge and skills to help the company through digital marketing and branding”
প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কালীন আপনার টার্গেট কি হবে? যেমন: “for generating revenue.”
উপরের ছয়টি ধাপকে যদি একত্রে লিখবার চেষ্টা করি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য গ্রাজুয়েটের স্যাম্পল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ হবে নিম্নরুপ:
Sample Career Objective for No experienced person: Highly self-motivated marketing graduate skilled in Digital Marketing & Adobe Designing Tools with proven communication and Teamwork skills. I am Seeking to join Daffodil Group as a marketing intern to utilize knowledge and skills to help the company through digital marketing and branding for generating revenue.
এখন উপরের স্যাম্পল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ যার সিভিতে থাকবে তাকে অবশ্যই হার্ডস্কিলস এবং সফ্টস্কিলসের প্রমান সহ ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যেতে হবে এবং সিভির ভেতরের অংশেও উল্লেখ করতে হবে।
ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ যার অভিজ্ঞতা আছে
যার অভিজ্ঞতা আছে তার জন্য উপরের ছয়টি ধাপ ঠিকই থাকবে তবে আরো ৩টি ধাপ যুক্ত হবে। যেমন:
অভিজ্ঞতা (Experience) 2+ Years of Experience
আমার আগের কাজটিতে যা পারফর্ম করেছি: Design, Develop and coordinate marketing plans, advertising, direct marketing, and campaigns
আগের প্রতিষ্ঠানের নাম এবং যে পজিশনে কাজ করেছি: Skill.jobs as Marketing Executive
উপরের আরো ৩টি ধাপকে যদি একত্রে লিখবার চেষ্টা করি তাহলে একজন অভিজ্ঞ প্রফেশনালের স্যাম্পল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ হবে নিম্নরুপ:
Sample Career Objective for an experienced person: Highly self-motivated marketing Professional skilled in Digital Marketing & Adobe Designing Tools with proven communication and Teamwork skills. 2+ years of experience in Design, Develop and coordinate marketing plans, advertising, direct marketing, and campaigns for the Skill.jobs as Marketing Executive. I am Seeking to join Daffodil Group as Sr. Executive to utilize my knowledge, skills, and experience to help the company through digital marketing and branding for generating revenue.
এখন উপরের স্যাম্পল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ যার সিভিতে থাকবে তাকে অবশ্যই হার্ডস্কিলস এবং সফ্টস্কিলসের সাথে দুই বছরে অভিজ্ঞতার প্রমান সহ ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যেতে হবে এবং সিভির ভেতরের অংশেও উল্লেখ করতে হবে।
যাই হোক সবার প্রতি আমার একটাই অনুরোধ থাকবে সিভি যেমন তেমন করে বানিয়ে পাঠাবার বিষয় নয়। নিজের সিভিকে উইনিং সিভি বানাবার জন্য অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন, তাদের অনুরোধ করুন আপনার সিভিকে মূল্যায়ন করবার জন্য, দরকার বিনিয়োগ করে হলেও একজন দক্ষ পরামর্শক নিয়োগ করুন যাতে আপনার সিভিটি কোন নিয়োগকর্তা অবহেলায় ফেলে না দেয়।
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)
আমরা লক্ষ্য নির্ধারন করি, লক্ষ্যকে পক্রিয়ার ভেতর ফেলবার চেষ্টা করি, লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করি, লক্ষ্যকে জনসম্মুখে নিয়ে আসি কিন্তু জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে যদি বিন্দুমাত্র অবহেলা থাকে তাহলে লক্ষ্য অর্জনে বাধা আসতে পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবে সবচেয়ে যে শব্দটি বিষের মতো কাজ করে তা হলো গড়িমসি বা ইংরেজীতে যাকে বলে procrastination. ছোট বেলায় পরীক্ষার রুটিন আসার পর থেকে আমার মা সবসময় আমার পিছে লেগে থাকতেন যেন আমি সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে কোন গড়িমসি না করি। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আমি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছি সেটাও আমার গড়িমসির কারনে ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মানে হলো যিনি আপনাকে পদে পদে উপদেশ দেবেন, কোন কৌশল অবলম্বন করলে ভালো হয় সেটা বলে দেবেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোনটি আগে করা উচিৎ সেটা বলে দেবেন এবং কিভাবে অতি সহজে করা যার তাও দেখিয়ে দেবেন।
আমরা লক্ষ্য নির্ধারন করি, লক্ষ্যকে পক্রিয়ার ভেতর ফেলবার চেষ্টা করি, লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করি, লক্ষ্যকে জনসম্মুখে নিয়ে আসি কিন্তু জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে যদি বিন্দুমাত্র অবহেলা থাকে তাহলে লক্ষ্য অর্জনে বাধা আসতে পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবে সবচেয়ে যে শব্দটি বিষের মতো কাজ করে তা হলো গড়িমসি বা ইংরেজীতে যাকে বলে procrastination. ছোট বেলায় পরীক্ষার রুটিন আসার পর থেকে আমার মা সবসময় আমার পিছে লেগে থাকতেন যেন আমি সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে কোন গড়িমসি না করি। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আমি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছি সেটাও আমার গড়িমসির কারনে ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মানে হলো যিনি আপনাকে পদে পদে উপদেশ দেবেন, কোন কৌশল অবলম্বন করলে ভালো হয় সেটা বলে দেবেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোনটি আগে করা উচিৎ সেটা বলে দেবেন এবং কিভাবে অতি সহজে করা যার তাও দেখিয়ে দেবেন।
ব্যক্তিগত জবাবদিহিতায় কাদের পাশে রাখতে পারেনঃ
১. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রথমেই আমরা মা বা বাবার শরণাপন্ন হতে পারি। কারন মা, বাবা তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করেছেন যা সবসময়ই চিরসবুজ। মা, বাবার পরামর্শ সবসময়ই কাজে আসে কারন তারা ঐ পথে ইতিমধ্যেই হেটেছেন।
২. দ্বিতীয়ত মেন্টরশীপ একটা বিরাট ভূমিকা থাকতে পারে। মেন্টর মানে হলো কোন একটি সেক্টরের বিশেষজ্ঞ যিনি অন্তত ৫ বছর আপনার পছন্দের সেক্টরে টানা কাজ করেছেন এবং এখন অন্য সেক্টর হলেও যিনি এখনো সক্রিয় আছেন। যিনি নিজেকে টেকসই করবার জন্য অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ মুখোমূখী হয়েছেন। তবে মেন্টর বাছাই করবার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবেঃ
যাকে মেন্টর হিসেবে বেছে নেবেন তার মূল্যবোধ সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকতে হবে। আপনার এবং তার মূল্যবোধ যদি এক না হয় তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জনে তিনি তেমন কোন কাজে নাও আসতে পারে।
যোগাযোগের ক্ষমতা অবশ্যই ভালো হতে হবে। কারন দেখা গেছে নিজে অত্যন্ত সফল কিন্তু আরেকজনকে পথ দেখাবার জন্য অথবা নিজের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে বলবার দক্ষতা তেমন একটা নেই।
মানসিকভাবে পরামর্শ দেবার জন্য প্রস্তুত কিনা অথবা সম্মতি আছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে। কারন হয়তো তিনি বাহ্যিক সম্মতি দিয়েছেন কিন্তু মানসিক ভাবে সম্মতি দেননি। আর সেজন্য লক্ষ্য নির্ধারনের যে সময়সীমা আপনি নিজেই নিজেকে দিয়েছেন সেটা বিলম্ব হবে।বিশ্বাস করুন বা না করুন, একজন পরামর্শদাতা বেছে নেওয়ার সময় ব্যক্তিত্ব অবশ্যই বিবেচনা করার মতো বিষয়। আপনি যদি একজন অন্তর্মুখী হন এবং আপনার সম্ভাব্য পরামর্শদাতা যদি বিপরীত হন, আপনি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।
৩. অনেক সময় পরামর্শক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন। সেক্ষেত্রে কোচ বা প্রশিক্ষক আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারন কোচিং বা প্রশিক্ষন দেবার জন্য তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে থাকেন। তবে কোচিং বা প্রশিক্ষন নেবার জন্য আপনাকে কিছুটা বিনিয়োগ করতেই হবে এবং এ সত্যটি আপনাকে মানতেই হবে। একজন খেলোয়ার তার সেরা খেলাটি দর্শকদের উপহার দেবার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কোচের শরনাপন্ন হন। ঠিক একইভাবে প্রফেশনাল হবার জন্য একজন কোচের অধিনে কিছুদিন থাকা মানেই হলো ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা।
লক্ষ্য নির্ধারন বা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে বোঝার জন্য, জানার জন্য, মেনে চলার জন্য। আমরা অনেকেই প্রশ্ন করতে পারি না বা প্রশ্ন করতে একধরনের লজ্জাবোধ করি। অথবা প্রশ্ন করার অভ্যাস আমাদের মধ্যেই নেই। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক নজির আছে যে একটি প্রশ্ন সম্পূর্ণ জীবনকে বদলে দিয়েছে। তবে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে যেন উত্তরদাতা শুধুমাত্র হ্যা বা না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে উত্তর দিতে না পারেন। ঠিক যেমনভাবে চিকিৎসকরা করে থাকেন রোগীর উপসর্গ জানার জন্য। চিকিৎসকের প্রশ্নগুলোকে বলা হয় ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন যার মানে হলো গভীরে ঢুকে উত্তর বের করা। সাধারনত এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নকে আবার অধিকাংশ মানুষ 5W1H বলে জানি। কি (What), কেন (Why), কোথায় (Where), কখন (When), কে (Who) এবং কিভাবে (How).
কি করা উচিত? (What)
এটি করার উদ্দেশ্য কী? (What)
আরও কিছু কি করার আছে? (What)
লক্ষ্য পূরণের জন্য কোথায় রিসোর্স পাবো? (Where)
কখন এগিয়ে যাওয়ার সময়? (When)
কে আমাকে সাহায্য করতে পারেন? (Who)
কেন তারা আমাকে সাহায্য করবে? (Why)
কেন আমি এই কাজ করব? (Why)
তারা আমাকে কীভাবে সাহায্য করবে? (Who)
লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের সময় যদি প্রতিনিয়ত ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করা যায় এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞ মানুষদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা যায় তাহলে লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে কেউ আটকাতে পারে না। এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন (Why)?জাপানের বিখ্যাত ব্যবসায়ী কিচিরো টয়োডা বলেছিলেন কোন সমস্যা বা কোন ধরনের লক্ষ্য নির্ধারনের জন্য যদি অন্তত পাঁচবার কেন (Why) জীজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে ঐ সমস্যার বা লক্ষ্যের কেন্দ্রতে পৌছতে সক্ষম হয়। তাই আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য বারবার ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করুন যার উত্তর কেউ কোনদিন শুধুমাত্র হ্যা বা না দিয়ে শেষ করতে পারবে না।
বন্ধুরা সঠিকভাবে সঠিক প্রশ্ন করবার কাজটি হয়তো প্রথমে অনেক কঠিন মনে হবে কিন্তু মনে রাখতে হবে নিয়মিত অনুশীলন করলে সবকিছুই সম্ভব করা যায়। কারন আমি বিশ্বাস করি
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
কখনও নিজের সাফল্যে নিজেই উদযাপন করেছেন? আমি প্রায়ই নিজের ছোট কোন সাফল্যকে উপেক্ষা করতাম বৃহৎ কোন সাফল্যের আশায়। এটা খেয়াল করে আমার এক বড় ভাই আমাকে বললেন বড় সাফল্যে ক্ষুদ্র সাফল্যকে উপেক্ষা করছো? এটা একদম ঠিক নয়। আমার বড় কোন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবার জন্য ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে ফেলি এবং এটাই স্বাভাবিক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সংখ্যাই বেশী থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে আসা ছোট একটি সাফল্যকে যদি কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে উদযাপন করা যায় তাহলে মানসিকভাবে একধরনের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া যায়। কোন কিছুকে ভালোবাসার পর যদি সেটা অর্জন করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র উদযাপন করা সম্ভব। ধরুন কোন একটি লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম উঠে ব্যায়াম করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আপনি রাতে ঘড়িতে এলার্ম সেট করে রাখেন। কিন্তু সকালবেলা এলার্ম বেজে উঠলেই আপনার বিরক্ত লাগে। এর মানে হতে আপনি আপনার লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য শুরুতেই যে ফর্মূলার কথা বলেছিলাম সেটি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেন নি। ফর্মূলাটি ছিলো ”কেন-কারন”। লক্ষ্য নির্ধারনের আগে কেন আপনি লক্ষ্যটি নির্ধারন করতে যাচ্ছেন এবং এর যথার্থ কারন আপনার কাছে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অসংখ্যবার আপনি ব্যর্থ হচ্ছেন এবং যতবার আপরি ব্যর্থ হয়েছেন কেন এবং কারন বের করে আবার নেমে পড়লেন। এবার যখন সাফল্য এলো তখন কেউ প্রশংসা না করলেও আপনি নিজেকে নিজেই একটা সাবাসী দিয়ে দেন। দেখবেন অন্যরকম লাগবে। আমি যখন ঠিক করলাম আমি একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সাথে প্রতিটি প্যারার জন্য একটি করে ভিডিও বানাবো তখন আমি আমি আমাকেই প্রশ্ন করলাম কেন? এবং কারন বের করলাম। তারপর কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা বললাম, বেশ কিছু আর্টিক্যাল পড়লাম, মেন্টরের সাথে পরামর্শ করলাম। তারপর সময় নির্ধারন করে নেমে পড়লাম। এখন আমি আর্টিক্যালটির একদম শেষে চলে এসেছি এবং একধরনের অন্যরকম আনন্দবোধ করছি। কারন নতুন একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সেই সাথে আর্টিক্যালটিকে ভিত্তি করে ভিডিও বানাবো, এই খুশিতে গত তিনদিন আমি একটানা কাজ করেছি। এই যে এতো আয়োজনের শেষে যখন পাবলিশ করবো আমার সোস্যাল সাইটে তখন পাঠকরা হয়তো পড়বেন বা পড়বেন না কিন্তু আমার উদযাপন কিন্তু চলতেই থাকবে যা আমাকে পরবর্তী আর্টিক্যাল লেখায় অনুপ্রেরনা যোগাবে।
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
২০১৫ সালের একটি ঘটনা। কোন একটি ক্লাবের মিটিংয়ে আমার একটি লক্ষ্যের কথা ঘোষনা করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি ছিলো এমন যে আমরা পরিকল্পনা করছিলাম যে সদ্য গ্রাজুয়েটদের জন্য একটি জব ফেয়ার আয়োজন করবো। যেখানে চাকরি প্রত্যাশী এবং চাকরিদাতারা একসাথে মিলিত হবেন। এই ঘোষনা দেবার পর ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত একজন সদস্য মিটিং শেষে আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানতে চাইলেন এবং ভেন্যু সহ আরো অন্যান্য সহযোগীতার আশ্বাস দিলেন। পরবর্তীতে আমি আমার ফেসবুক এবং লিংকডইনের বন্ধুদের মাঝেও আমার পরিকল্পনা শেয়ার করি। এর ফলে যা হলো আমার লক্ষ্যকে আমি একধরনের স্পট লাইটের মধ্যে দেখতে পেলাম। এই গন প্রচারণা আমার যেকোন লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে খুব সহযোগীতা করে। কয়েকটি জিনিস ঘটে এই গন প্রচারণার মাধ্যমেঃ
আপনি সচেতন থাকেন লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য
এক ধরনের অটো এলার্ম কাজ করে
যাদের সাথে শেয়ার করলেন তারা আপনাকে স্মরন করিয়ে দেয়
অনেকেই আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন
অনেকভাবেই আপনি পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করতে পারেন। আপনার নিজের পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জানাতে পারেন, কোন ক্লাব মেম্বারদের জানাতে পারেন। অনেকে আবার সোস্যাল প্ল্যাটফরমকেও ব্যবহার করেন। পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করবার আগে আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন আপনি কাদের কাছে আপনার লক্ষ্যের কথা শেয়ার করবেন বা কতটুকু শেয়ার করবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবেঃ
সম্পূর্ণ সিমেনার গল্প শুধুই আপনি বা আপনার লক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষেরা জানবেন আর বন্ধুরা জানবে এর ট্রেলার
পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্টে যাবেন তখন অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে হবে। যেমন আমি আগামী ১০ দিনের মধ্যে দুটি কমিউনিকেশনের উপর কোর্স সম্পন্ন করবো।
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
যেকোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য পক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। উপরের আলোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের লক্ষ্যকে নির্ধারন করেছি এবং এই লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য একটি ছক বা তালিকা তৈরি করেছি। লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য যেমন আমাদের প্রয়োজন ছিলো কি হতে চাই, কেন হতে চাই, কত দিনের মধ্যে হতে চাই। ঠিক তেমনি এই পর্যায়ে আমাদের আরো তিনটি প্রশ্নে উত্তর বের করতে হবে। প্রথমেই যেহেতু আমরা বছরকে তিন ভাগে ভাগ করেছি এবার আমাদের বের করতে হবে
ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is the next Step)?
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)? এবং
ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)?
আমরা শৈশবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রুটিন মেনে চলতাম। ক্লাসের জন্য রুটিন থাকতো এবং সেই রুটিন অনুযায়ী আমরা ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতাম। তারপর পরীক্ষার সময়ে আমরা একটি রুটিন পেতাম এবং সে অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতো। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের এই পর্যায়েও আমাদের রুটিন তৈরি করতে হবে।
ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is my next Step)?
আমি কমিউনিকেশনের উপর একটি অনলাইনে কোর্স করবো
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)?
সময় লাগবে ৭ দিন (প্রশিক্ষন) এবং ৮ দিন ব্যবহারিক এবং ১৫ দিন শেষে অনলাইন সার্টিফিকেট অর্জন করবো
ধাপটি ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)?
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরম যেমন GoEdu.ac, Google Garage বা Coursera বা LinkedIn Learning থেকে কমিউনিকেশন কোর্স সম্পন্ন করবো। তারপর ফেসবুক এবং লিংকডইন ব্যবহার করে অন্তত ৫ জন প্রফেশনালদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করবো।
আমরা সবাই জানি মাসে চার সপ্তাহ এবং বছরে ৫২ সপ্তাহ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার মেইনটেইন করতে পারি। খুব সহজেই আমরা ল্যাপটপে বা মোবাইলের মাধ্যমে সেট করতে পারি কোন লক্ষ্যটি কতদিনের মধ্যে শেষ করবো। এই অনলাইন ক্যালেন্ডার বা টাস্ক ট্র্যাকার আমাকে এলার্ম বা ইমেইল নটিফিকেশনের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেবে আমার কোন কাজটি কখন করতে হবে। অনেকে আবার ক্যালেন্ডারে টাস্কগুলোকে সাজিয়ে প্রিন্ট করে নিজের টেবিলের সামনে রেখে দেন অথবা স্টিকি নোট হিসেবে নিজের ল্যাপটপের হোম স্ক্রিনে রেখে দেন। তবে যেভাবেই করি না কেন আমার চোখের সামনে আমার এ্যাকশন প্ল্যান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী।
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
মানুষ কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তোমার টার্গেট কি? সে তখন কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অনেক বড় একটা লিস্ট সামনে নিয়ে আসে এবং যখন বলা হয় কতদিনের মধ্যে এগুলো অর্জন করবে তখন চুপ করে ভাবতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের কোনো লক্ষ্য এবং লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা থাকেনা।
১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করা হলো তোমাদের কার কার কর্মক্ষেত্রের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছো?
১) ৮৪% তরুনদের কোন লক্ষ্যই ছিলোনা
2) ১৩% তরুনদের লক্ষ্য ছিলো এবং সেটা কাগজে তোলা ছিলো তবে বাস্তবায়নের জন্য কোনো পরিকল্পনা ছিলোনা
৩) ৩% তরুনদের লক্ষ্য ছিল, কাগজে সুন্দর করে লেখা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
১০ বছর পর সেই তরুণদের সাথে আবার কথা বলা হলো এবং দেখা গেলো ১৩% তরুন যাদের লক্ষ্য ছিলো এবং সেটা কাগজে তোলা ছিলো, তারা ৮৪% তরুণ যাদের কোনো লক্ষ্যই ছিলোনা তাদের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করছে। আর ৩% তরুন যাদের লক্ষ্য ছিল, কাগজে সুন্দর করে লেখা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তারা যে অর্থ উপার্জন করছে সেটা ৯৭% তরুণদের সমপরিমাণ অর্থ। চিরন্তন সত্য হলো জীবনকে রাঙাতে হলে রাঙানোর পরিকল্পনা করতে হবেই। বন্ধুরা আপনারা যারা এখনও লক্ষ্য নিয়ে ভাবা শুরু করেননি তাদেরকে অনুরোধ করবো শুরু করে দিন।
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
আমরা আমাদের সাফল্যের জন্য ক্রেডিট পেতে আগ্রহী। আমাদের যখন জিজ্ঞেস করা হয় সাফল্যের কারণ তখন একধরণের আনন্দ থেকে নিজের অভ্যন্তরীণ কারণগুলি যেমন আমরা কতটা চেষ্টা করেছি, আমাদের দক্ষতা এবং আমাদের অভিজ্ঞতাকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকি।
অন্যদিকে ব্যর্থতা এমন একটি জিনিস যা আমরা কখনও স্বীকার করতে চাই না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ সাধারণত নিজের ব্যর্থতার জন্য ভাগ্য বা কাজের অসুবিধা বা অন্যের দিকে আঙুল প্রদর্শন করার মতো বাহ্যিক কারণ গুলিকেই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে বেছে নেন।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ কোনও কাজে সাফল্য পাবার পর তার ভেতর একধরণের ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পায় যা তাকে উদার এবং অন্যেকে সাহায্য করবার মানসিকতা দেয়। আর যদি প্রথমে কোনও কাজে ব্যর্থতা আসে তবে নেতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পায় যা আমাদের উদারতাকে কমিয়ে দেয় ফলে আমরা অন্যকে সাহায্য করতে চাই না।
মূল যে বিষয়টি বলবার চেষ্টা করা হয়েছে গবেষণাতে তা হলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ভুল করলেও নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই না যা আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন বেশীরভাগ গবেষক। “আমারই ভুল ছিল” এই ছোট্ট বাক্যটির গুরুত্ব অনেক। যেদিন আমি এই ছোট্ট বাক্যটি মন থেকে বলতে পারবো সেদিন থেকেই অনেক ভুল আর আমার ভেতর থাকবে না। এমনটাই লিখেছেন “Being Wrong” বইয়ের লেখক ক্যাথরিন শুল্জ।
অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect
লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট