Negotiation Part-1

উন্নত বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক কতটা প্রয়োজন?

বাংলাদেশের জন্য এখন সুবর্ণ সময়! আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩ শতাংশেরও বেশি কর্মক্ষম যুবসমাজ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বৎসরের মধ্যে। আর এই ৩৩ শতাংশ কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনেই আমরা এই মুহুর্তে ডেমোগ্রাফিক লভ্যাংশের উপকারিতা উপভোগ করছি। আবার বিশেষজ্ঞরা অন্যভাবে বলবার চেষ্টা করছেন যে কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনে আমাদের সামনে এখন অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি। যদি যুগপোযোগী নির্দেশনার মাধ্যমে তরুন সমাজকে কার্যকরি দক্ষতা ‍দিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। আমরা সকলেই অবগত আছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ২০৩০ সালের পূর্বেই জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুন সমাজকে বাস্তবিক জ্ঞান, কার্যকরি দক্ষতা এবং উন্নত মানসিকতার প্রশিক্ষনের বাইরে রেখে লক্ষ্য অর্জন কতটুকু যুক্তিযোগ্য তা নতুন করে ভাবার দাবী রাখে। এই মূহুর্তে বিশ্বব্যাপী দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে হিসেবে তরুন সমাজকে গড়ে তুলবার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যত্রম পরিচালিত হচ্ছে। দায়িত্বশীল নাগরিক আমরা তাকেই বলবো যিনি তিনটি বিষয় মনের গভীরে লালন করেনঃ

দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগানো। প্রায় ১৬/১৭ বছর বয়সের তরুন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের আশায় প্রায় ৬/৭ বছরের কঠোর শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর যখন সমাজ তাকে বলে এবার জীবিকার খোজে বের হও তখন তার সামনে অন্য এক বাস্তবতা এসে উপনিত হয় যা তার মানসিকতাকে স্থির করে দেয়। আর এই স্থির মানসিকতার কারনেই আমাদের যুবসমাজ আজ অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও কাজে লাগাতে পারছে না।

ডিজিটাল উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মানে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে যাবার পথে আমাদের সামনে এসে উপস্থিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যা নিয়ে এসেছে একাধারে ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জ এবং সাথে আছে সুযোগের সমাহার। বলা হচ্ছে যতই শিল্প বিপ্লব আসুক মানুষের বিকল্প কখনই যন্ত্র হতে পারে না যদি উন্নত মানসিকতায় সমৃদ্ধ জনসম্পদ তৈরি করা যায়। আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বর্তমান যুবসমাজ স্থির মানসিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ প্রায়। যার কারনে

  • যথেষ্ঠ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুযোগ দেখছেনা,
  • নিজের জ্ঞান ও দক্ষতাকে খুজে পাচ্ছে না
  • খুজে পেলেও কাজে লাগাতে পারছে না
  • মনের দিক থেকে সংকীর্ন হয়ে যাচ্ছে,
  • প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিচ্ছে
  • দেশ প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে
  • গতানুগতিকধারার বাইরে কিছু ভাবতে পারছে না
  • আত্মসচেতনতা ও সামাজিক সচেতনতার ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিচ্ছে যার ফলে আবেগীয় দক্ষতার হার এখন নিন্মমূখী।

স্থির মানসিকতা থেকে যুবসমাজকে উন্নত মানসিকতায় পরিবর্তন করতে প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়ন চক্র সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে আত্মবিশ্বাস, আত্মসচেতনতা এবং সামাজিক সচেতনতা।

হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। গতনুগতিক ধারাতেই চলছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রয়োজন দায়িত্বশীল নাগরিক। তার জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের যা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজনঃ

  • তরুনদের মাঝে মানকিক জ্ঞান, নৈতিক মূল্যবোধ ও আবেগীয় দক্ষতা বৃদ্ধির যথাযথ ধারনা প্রদান করা ।
  • উন্নত মানসিকতা বিকাশের মাধ্যমে দায়িত্বশীল নাগরিক ‍হিসেবে গড়ে তোলা।
  • প্রযুক্তি বিকাশের ধারা এবং সংযুক্ত থাকবার ধারনা এবং যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে সম্মুখ ধারনা প্রদান করা।
  • শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রয়োজন এবং ধারনা প্রদান করা।
  • প্রমিত বাংলার ব্যবহার এবং কর্মের জন্য যোগাযোগের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজীর উপর দক্ষতা প্রদান করা।
  • সৃজনশীল চিন্তার মাধ্যমে সমস্যাকে সমাধানে রুপান্তরের প্রক্রিয়ার বাস্তব জ্ঞান প্রদান করা ইত্যাদি।
  • ভবিষ্যত কর্মের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  • শুধুই  ডিগ্রী নয় বরং কারিগরি দক্ষতার উপর গুরুত্ব দেয়া
  • মুখস্ত বিদ্যার মাধ্যমে শুধু খাতা ও কলমের ব্যবহার দ্বারা মূল্যায়ন করা থেকে বেরিয়ে আসা

আমি আগেই লিখেছি যদি তরুন সমাজকে কার্যকরি দক্ষতা ‍দিয়ে সঠিক কাজে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। সেজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং এই পরিকল্পনা হতে হবে ভবিষ্যতকে সামনে রেখে।

5 Responses

Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked*