Title Pic

স্বপ্নতো আছেই, এবার হোক বাস্তবায়নের পরিকল্পনা

স্বপ্ন আপনার এবং এটি আপনাকেই দেখতে হবে। প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি এবং সত্যিকথা বলতে স্বপ্ন একধরনের বিনোদনও বটে। আর একধাপ এগিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো স্বপ্ন সবাই দেখতে পারে। স্বপ্নে আমি দামী গাড়ীতে চড়ি, বড় একটি অফিসের প্রধান ‍হিসেবে কাজ করি, নিজের বাড়িতে থাকি, ঘনঘন দেশের বাইরে অফিসিয়াল ট্রিপে যাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ সম্মাননা পাচ্ছি। হঠাৎ মার ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি যা দেখছিলাম সবই স্বপ্ন ছিল কিন্তু আহা ভালোই ছিলো। স্বপ্নটা দেখে মনের ভেতর একধরনের শক্তি অনুভব করছি। ঠিক করলাম আজ থেকেই শুরু হবে যুদ্ধ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার। হঠাৎ মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো। মোবাইলে দেখলাম কোন একজন কে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। ঢুকলাম ফেসবুকে, স্ক্রল করতে করতে অনেক নীচে নেমে গেলাম। হঠাৎ আরেকটা টুং শব্দ এলো ইউটিউভ থেকে। ভাবলাম এই ভিডিওটি দেখেই কাজে নেমে পড়বো। একটা, দুইটা, তিনটা করে ৩ ঘন্টার একটি সিনেমা দেখে ফেললাম। এর মধ্যে আবার আমার পোস্ট করা ছবি নিয়ে এক দুষ্টছেলে বাজে মন্তব্য করেছে, তার উত্তর দিতে দিতে মনে হলো একটা লাইভ করে ফেলি। লাইভ করে পোস্ট করেই কিছুক্ষন পর পর চেক করছি কে কি বললো। এই করে সকাল হলো দুপুর, দুপুর হলো সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা হলো রাত। সেই মহান রাত যখন আমি স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন যেখানে আমি বিরাট কিছু একটা। আমার প্রিয় একটি ডায়ালগ আছে স্বপ্ন দেখতে পারে সবাই, বাস্তবে রুপ দিতে পারে মাত্র কজনা। আমাদের চোখের সামনেই অনেক মানুষ আছেন যারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা বাস্তবে রুপদান করতে পেরেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেবার জন্য প্রয়োজন কিছু সাহস তার সাথে কিছু আপস এবং পরিকল্পনা। আমার আজকের আর্টিক্যালটি আমাদের প্রত্যেকের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেরই উপর।



কিভাবে লক্ষ্য নির্ধারন করবেন?

লক্ষ্য বা স্বপ্ন মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে এই লক্ষ্য বা স্বপ্ন একমাত্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। কারন মানুষই পারে একমাত্র স্বপ্ন দেখতে বা লক্ষ্য নির্ধারন করতে। আবার সেই মানুষই স্বপ্ন বাস্তবায়ন বা লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেন? শুরুতে যেভাবে বলেছিলাম লক্ষ্য বা স্বপ্ন একমাত্র মানুষের জন্য, পৃথিবীর অন্য কোন সৃষ্টির জন্য এই শব্দগুলো প্রযোজ্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো সৃষ্টির সেরা হয়েও আমরা অনেকেই লক্ষ্য নির্ধারনে বা স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে যাই। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমি যে কারনটি খুজে পেয়েছি তা হলো আমরা অনেকেই লক্ষ্যর সাথে অর্জন এবং স্বপ্নের সাথে বাস্তবায়নকে মেলাতে পারি না। লক্ষ্যের সাথে যেমন অর্জন শব্দটিকে যুক্ত করতে হবে তেমনি স্বপ্নের সাথে বাস্তবায়ন শব্দটিকেও যুক্ত করতে হবে। আপনি যদি অত্যন্ত সাহসী হন, আপনার ভেতর যদি দৃঢ় সংকল্প থাকে, আপনার মনোবল যদি শক্তিশালী হয় তাহলেই কেবলমাত্র আপনি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন তা অর্জন বা যে স্বপ্ন দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই পারবেন। আমরা যদি পৃথিবীর সফল মানুষদের জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো তাদের প্রত্যেকেই যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছিলেন বা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা অর্জন বা বাস্তবায়নে ছিলেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, মানসিকভাবে ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং মনোবলে ছিলেন মজবুত। তাদের ভেতর দেখা গেছে বাস্তবতাকে স্বীকার করবার মানসিকতা এবং তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নিজের ভালো লাগার জায়গাটাকে খুজে পেয়েছেন সবার আগে। তারা জানতেন বা খুজে বের করতে সক্ষম হতেন যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কখন, কিভাবে, কার সাহায্যে কোন কাজটি সম্পাদন করতে হবে।

আমি স্বপ্নের সাথে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেই সেটা হলো অর্জন কারন আপনার স্বপ্ন যদি স্পষ্ট না হয় তাহলে বাস্তবায়নের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন কা অর্জন করতে আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে বা অসম্ভবও হতে পারে। কোন একজন মানুষ চাইলেই প্রতিদিন অসংখ্য স্বপ্ন বা লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারেন কিন্ত তার সাথে যদি অর্জন করবার জন্য পাগলামী না থাকে তাহলে সে স্বপ্ন রাতের বিনোদন ছাড়া আর কিছুই দেবে না। বিষয়টি হয়তো ইতিমধ্যেই সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবার কথা আর তা হলো স্বপ্ন যদি হয় একটি বৃত্ত আর লক্ষ্য হলো সেই বৃত্তকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলা। যদি স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য ভেঙে ফেলা না যায় তাহলে সে স্বপ্ন পূরণ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

সেজন্য লক্ষ্য বা স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সবার আগে যেটি বলবার চেষ্টা করেন তা হলো যে কেউ লক্ষ্য নির্ধারন করবার আগে তিনটি শব্দকে সামনে রেখে নিজেকে প্রশ্ন করুন

  • আমি কি হতে চাই? (What I want to Become) অথবা
  • আমি কি করতে চাই? (What I want to Do) অথবা
  • আমি কি পেতে চাই? (What I want to Have)

তাহলে প্রথম কথা হলো উপরের তিনটি প্রশ্নের উত্তর বের না করে হাজার হাজার স্বপ্ন দেখলেও কোন লাভ হবে না কারন স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন খন্ডে ভাগ করা যাবে না। যখন আপনি বের করে করে ফেললেন আপনার লক্ষ্য, এখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে আপনি কেন (Why) এটি হতে চাচ্ছেন (Become) বা কেন করতে চাচ্ছেন (Do) বা কেন পেতে চাচ্ছেন (Have)। এটি হবার বা করার বা পাবার প্রয়োজন কি? কেন’র উত্তর পাবার পর আপনাকে বের করতে হবে কারন (Because)। যখন আপনি নিজেকে কেন দিয়ে প্রশ্ন করলেন এবং কারন বের করলেন তখন এটি অর্জনের জন্য আপনি একধরনের অনুপ্রেরনা বোধ করবেন। আর এই অনুপ্রেরনা আপনিই আপনাকে দিচ্ছেন। তবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন বা লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য সময়সীমা নির্ধারন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্যের সাথে যদি সময়সীমা না থাকে তাহলে আপনি কোন চাপ অনুভব করবেন না। লক্ষ্য নির্ধারনের সহজ ফরমূলা হতে পারেঃ লক্ষ্য = কি + কেন + সময়সীমা

নিচের এই ছকটি পূরণ করে লক্ষ্য অর্জনের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে পারেন।

আপনার লক্ষ্য? ?
নির্ধারন করুন কি?আপনি কি হতে চান? (What do want to Become) অথবা আপনি কি করতে চান? (What do you want to Do) অথবা আপনি কি পেতে চান? (What do you want to Have)

এক বা একাধিক লক্ষ্য হতে পারে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।

?
প্রশ্ন করুন?কেন (Why) এটি হতে চাচ্ছেন (Become) বা কেন করতে চাচ্ছেন (Do) বা কেন পেতে চাচ্ছেন (Have) ?
কারনটি খুজে বের করুন। (Because Statement) ?
সময়সীমা থাকতে হবে (ছয় মাস হতে পারে বা এক বছর) ?
জয় করতে লক্ষ্যকে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করুন

সহজ কথায় যদি বলতে চাই স্বপ্ন হলো আপনার ভবিষ্যতের কাঙ্খিত কোন কিছুর বৃহৎ একটি ছবি যা অর্জনের জন্য আপনি ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করেছেন যাকে আমরা বলতে পারি লক্ষ্য। এই বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা ফিরে যেতে পারি অতীতে। সম্রাটদের পরিকল্পনা আমরা সবাই বিভিন্ন বইতে পড়েছি। একজন সম্রাট কিভাবে তার রণকৌশলের মাধ্যমে তার লক্ষ্য অর্জন করেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাবেন ছোট্ট একটি ভুখন্ড থেকে কিভাবে রোম সম্রাজ্য পুরো বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদেরকে সম্রাটদের মতো ভাবতে হতে, কৌশল নির্ধারন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে লক্ষ্য যদি পরিমাপযোগ্য না হয় তাহলে আপনার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া আপনি নিজেই লক্ষ্য করতে পারবেন না। যেমন আমি একজন প্রফেশনাল হতে চাই। স্বপ্ন হিসেবে এটি হয়তো ঠিক আছে কিন্তু লক্ষ্য হিসেবে এটি পরিমাপযোগ্য নয় । যদি এমন হয় প্রফেশনাল হবার জন্য প্রথমে আমার নিজের জন্য একটি ভিডিও রিজুমে তৈরি করতে চাই আগামী ১০ দিনের মধ্যে এবং যদি নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করি এভাবেঃ

কি? ”আমি একটি ভিডিও রিজুমে তৈরি করবো।

কার জন্য? আমার জন্য

কেন? অধিকাংশ চাকরিদাতা ভিডিও রিজুমের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তিকে দেখে নিয়োগ করতে আগ্রহী

কারন? ভিডিও রিজুমের মাধ্যমে আমার ভাষা, আচরন, যোগযোগ দক্ষতা, বিশ্লেষণ করবার ক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়।

কত দিন লাগবে? ১০ দিন

কি কি লাগবে? একটি স্ক্রিপ্ট, আমার মোবাইল ফোন, ভিডিও এডিটিং সফ্টওয়্যার, ৭ দিনের রিহার্সেল, পোষাক, অভিজ্ঞদের উপদেশ ইত্যাদি।

এবার ধরুন আমি লক্ষ্য নির্ধারন করলাম আগামী একবছরের মধ্যে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। কারন আমি অনেক গবেষনা করে দেখেছি মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করতে পারলে আমি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবো, দেশ-বিদেশে সম্মান, খ্যাতি অর্জন করতে পারবো এবং সবধরনের প্রতিষ্ঠানে আমার একধরনের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। যেহেতু আমি লক্ষ্য নির্ধারন করেছি এখন আমার প্রথম কাজ হলো খুজে বের করা আমার এই মুহুর্তে কি আছে এবং কি অর্জন করতে হবে। তার জন্য আমি একটি তালিকা প্রনয়ন করতে পারি বিভিন্ন শুভাকাঙ্খিদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে।

 শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সনদ আছে
 মার্কেটিং বিষয়ক দক্ষতা (হার্ড এবং সফ্ট স্কিলস) নাই
 সেচ্ছাসেবী/পার্ট টাইম কাজের অভিজ্ঞতা এবং প্রশংসা পত্র নাই
 শুদ্ধ বাংলা এবং ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা নাই
 প্রফেশনাল পোষাক পরিচ্ছদ নাই
 প্রযুক্তি সচেতনতা (গুগল থেকে তথ্য বের করার দক্ষতা, মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, বাংলা ও ইংরেজী টাইপিং, ভার্চুয়াল মিটিং প্লেস যেমন জুম বা গুগল মিটের ব্যবহার, স্মার্ট ফোনের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি) নাই
 প্রফেশনাল সিভি নাই
 ভিডিও রিজুমে নাই
 সোস্যাল মিডিয়া দক্ষতা নাই
 নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট নাই
 কোম্পানি রিসার্চ নাই
 চাকরি ইন্টার্ভিউর দক্ষতা নাই

যেহেতু আমি নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একবছর সময় বেধে দিয়েছি তাই এখন আমাকে সম্রাটদের মতো ভাবতে হবে। আমি এই একবছর কে তিনভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি। বিশেষজ্ঞরা বলেন একটি বছরকে আপনি বিভিন্ন কোয়াটারে ভাঙতে পারেন। ৩+৩+৩+৩ অথবা ৪+৪+৪ হতে পারে। তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন প্রথমদিকে সময়টা একটু বেশী রাখুন। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনাটি এমন হতে পারেঃ ৬+৩+৩

যা অর্জন করবো/বছর ৬ মাস ৩ মাস ৩ মাস
এই স্টেজটি একটু কঠিন হবে। যতটা সম্ভব জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব বিকাশ করুন
  • মার্কেটিং বিষয়ক ১টি সার্টিফিকেট কোর্স করবো
  • ১টি অনলাইন কোর্স করবো
  • ৩টি ওয়ার্কশপ/ ৩টি সেমিনারে অংশ নেবো
  • ৩টি মার্কেটিংয়ের বই পড়বো
  • নিজের ১টি সিভি তৈরি করবো
  • নিজের ১টি ভিডিও রিজুমে তৈরি করবো,
  • অন্তত ৩টি যুব সংগঠনের সাথে যুক্ত হবো একং সক্রিয় থাকবো,
  • মার্কেটিংয়ে দক্ষ এমন অন্তত ১০ জন মানুষের সান্নিধ্যে আসবো
  • আমার ফেসবুক এবং লিংকডইনের প্রোফাইল নতুন করে সাজাবো। সকল নেতিবাচক স্ট্যাটাস বা ছবি (যদি থাকে) সরিয়ে ফেলবো।
  • ছয় মাসের মধ্যে আমার ওয়েব উপস্থিতি বাড়াবো
এই স্টেজে লোকেরা আমাকে লক্ষ্য করা শুরু করবে কাজের অনুসন্ধান করবো, কাজগুলো বিশ্লেষণ করবো এবং যা খুজে পেলাম তা প্রয়োগ করবো
  • সার্টিফিকেট/প্রশংসাপত্র গুলি গোছানো
  • বিভিন্ন জব সাইটের মাধ্যমে কাজের অনুসন্ধান করে বিশ্লেষন করবো
  • কাজের বিবরন খুজে বের করা এবং প্রতিষ্ঠান কি চাচ্ছে সেগুলো খুজে বের করা।
  • বিশ্লেষন করে পছন্দনীয় কাজে আবেদন করা।
  • নিয়োগকারীদের কাছে ইমেল প্রেরণ করা, লিংকডইনের মাধ্যমে মেসেজ করা। মেসেজ বা ইমেইলে মাধ্যমে জানাতে হবে আপনি কি জানেন আর কি পারেন।
  • আমার পছন্দের তালিকায় যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর একটি পোস্ট মার্টম করা। এই বিশ্লেষনগুলো করতে পারলে আমার মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে।
এই স্টেজে আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পাওয়া শুরু করবো সাক্ষাত্কারে অংশ নিন, ভুলগুলি সন্ধান করুন এবং আপনি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আবার যোগদান করুন।
  • প্রথম নয় মাসের কঠোর পরিশ্রম করতে পারলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় আপনি নিয়মিতভাবেই যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদন করেছেন সেখান থেকে ডাক পাওয়া শুরু করবেন।
  • অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়ে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহন করবেন
  • প্রথম ইন্টারভিউর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে ছোট্ট একটি ইমেইলের মাধ্যমে যদি জানার চেষ্টা করেন কেন আপনি সুযোগ পেলেন না তাহলে পরবর্তী ইন্টারভিউতে আপনি সে ভুলগুলো আর করবেন না

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে বা কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করবার জন্য ৩৬৫ দিন যথেষ্ঠ। যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা যায় তহলেই শুধুমাত্র সম্ভব নিজেকে বদলানো। তবে আমি যে পরিকল্পনা করেছি সেটি যে আপনার কাজে আসবে সেটি আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না তাই আমার পরিকল্পনাকে স্যাম্পল হিসেবে ধরে নিয়ে নিজের জন্য রণপ্রস্তুতি নির্ধারন করতে হবে।

লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য পক্রিয়ার মধ্যে ফেলতে হবে

যেকোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য পক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। উপরের আলোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের লক্ষ্যকে নির্ধারন করেছি এবং এই লক্ষ্যকে অর্জনের জন্য একটি ছক বা তালিকা তৈরি করেছি। লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য যেমন আমাদের প্রয়োজন ছিলো কি হতে চাই, কেন হতে চাই, কত দিনের মধ্যে হতে চাই। ঠিক তেমনি এই পর্যায়ে আমাদের আরো তিনটি প্রশ্নে উত্তর বের করতে হবে। প্রথমেই যেহেতু আমরা বছরকে তিন ভাগে ভাগ করেছি এবার আমাদের বের করতে হবে

  • ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is the next Step)?
  • ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)? এবং
  • ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)?

আমরা শৈশবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রুটিন মেনে চলতাম। ক্লাসের জন্য রুটিন থাকতো এবং সেই রুটিন অনুযায়ী আমরা ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতাম। তারপর পরীক্ষার সময়ে আমরা একটি রুটিন পেতাম এবং সে অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি চলতো। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের এই পর্যায়েও আমাদের রুটিন তৈরি করতে হবে।

ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is my next Step)? আমি কমিউনিকেশনের উপর একটি অনলাইনে কোর্স করবো
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)? সময় লাগবে ৭ দিন (প্রশিক্ষন) এবং ৮ দিন ব্যবহারিক এবং ১৫ দিন শেষে অনলাইন সার্টিফিকেট অর্জন করবো
ধাপটি ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স কোথায় আছে? (Where are the resources)? বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরম যেমন GoEdu.ac, Google Garage বা Coursera বা LinkedIn Learning থেকে কমিউনিকেশন কোর্স সম্পন্ন করবো। তারপর ফেসবুক এবং লিংকডইন ব্যবহার করে অন্তত ৫ জন প্রফেশনালদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করবো।

আমরা সবাই জানি মাসে চার সপ্তাহ এবং বছরে ৫২ সপ্তাহ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই আমাদের প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার মেইনটেইন করতে পারি। খুব সহজেই আমরা ল্যাপটপে বা মোবাইলের মাধ্যমে সেট করতে পারি কোন লক্ষ্যটি কতদিনের মধ্যে শেষ করবো। এই অনলাইন ক্যালেন্ডার বা টাস্ক ট্র্যাকার আমাকে এলার্ম বা ইমেইল নটিফিকেশনের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেবে আমার কোন কাজটি কখন করতে হবে। অনেকে আবার ক্যালেন্ডারে টাস্কগুলোকে সাজিয়ে প্রিন্ট করে নিজের টেবিলের সামনে রেখে দেন অথবা স্টিকি নোট হিসেবে নিজের ল্যাপটপের হোম স্ক্রিনে রেখে দেন। তবে যেভাবেই করি না কেন আমার চোখের সামনে আমার এ্যাকশন প্ল্যান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী।

আপনার লক্ষ্যকে প্রকাশ্যে ঘোষনা করুন

২০১৫ সালের একটি ঘটনা। কোন একটি ক্লাবের মিটিংয়ে আমার একটি লক্ষ্যের কথা ঘোষনা করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি ছিলো এমন যে আমরা পরিকল্পনা করছিলাম যে সদ্য গ্রাজুয়েটদের জন্য একটি জব ফেয়ার আয়োজন করবো। যেখানে চাকরি প্রত্যাশী এবং চাকরিদাতারা একসাথে মিলিত হবেন। এই ঘোষনা দেবার পর ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত একজন সদস্য মিটিং শেষে আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানতে চাইলেন এবং ভেন্যু সহ আরো অন্যান্য সহযোগীতার আশ্বাস দিলেন। পরবর্তীতে আমি আমার ফেসবুক এবং লিংকডইনের বন্ধুদের মাঝেও আমার পরিকল্পনা শেয়ার করি। এর ফলে যা হলো আমার লক্ষ্যকে আমি একধরনের স্পট লাইটের মধ্যে দেখতে পেলাম। এই গন প্রচারণা আমার যেকোন লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে খুব সহযোগীতা করে। কয়েকটি জিনিস ঘটে এই গন প্রচারণার মাধ্যমেঃ

  • আপনি সচেতন থাকেন লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য
  • এক ধরনের অটো এলার্ম কাজ করে
  • যাদের সাথে শেয়ার করলেন তারা আপনাকে স্মরন করিয়ে দেয়
  • অনেকেই আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন

অনেকভাবেই আপনি পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করতে পারেন। আপনার নিজের পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জানাতে পারেন, কোন ক্লাব মেম্বারদের জানাতে পারেন। অনেকে আবার সোস্যাল প্ল্যাটফরমকেও ব্যবহার করেন। পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্ট বা গন প্রচারণা করবার আগে আপনাকে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন আপনি কাদের কাছে আপনার লক্ষ্যের কথা শেয়ার করবেন বা কতটুকু শেয়ার করবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবেঃ

  • সম্পূর্ণ সিমেনার গল্প শুধুই আপনি বা আপনার লক্ষ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষেরা জানবেন আর বন্ধুরা জানবে এর ট্রেলার
  • পাবলিক এ্যানাউন্সমেন্টে যাবেন তখন অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে হবে। যেমন আমি আগামী ১০ দিনের মধ্যে দুটি কমিউনিকেশনের উপর কোর্স সম্পন্ন করবো।
লক্ষ্য অর্জনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা

আমরা লক্ষ্য নির্ধারন করি, লক্ষ্যকে পক্রিয়ার ভেতর ফেলবার চেষ্টা করি, লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করি, লক্ষ্যকে জনসম্মুখে নিয়ে আসি কিন্তু জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে যদি বিন্দুমাত্র অবহেলা থাকে তাহলে লক্ষ্য অর্জনে বাধা আসতে পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবে সবচেয়ে যে শব্দটি বিষের মতো কাজ করে তা হলো গড়িমসি বা ইংরেজীতে যাকে বলে procrastination. ছোট বেলায় পরীক্ষার রুটিন আসার পর থেকে আমার মা সবসময় আমার পিছে লেগে থাকতেন যেন আমি সিলেবাস শেষ করার ক্ষেত্রে কোন গড়িমসি না করি। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য আমি যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছি সেটাও আমার গড়িমসির কারনে ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা মানে হলো যিনি আপনাকে পদে পদে উপদেশ দেবেন, কোন কৌশল অবলম্বন করলে ভালো হয় সেটা বলে দেবেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোনটি আগে করা উচিৎ সেটা বলে দেবেন এবং কিভাবে অতি সহজে করা যার তাও দেখিয়ে দেবেন। ব্যক্তিগত জবাবদিহিতায় কাদের পাশে রাখতে পারেনঃ

১. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রথমেই আমরা মা বা বাবার শরণাপন্ন হতে পারি। কারন মা, বাবা তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করেছেন যা সবসময়ই চিরসবুজ। মা, বাবার পরামর্শ সবসময়ই কাজে আসে কারন তারা ঐ পথে ইতিমধ্যেই হেটেছেন।

২. দ্বিতীয়ত মেন্টরশীপ একটা বিরাট ভূমিকা থাকতে পারে। মেন্টর মানে হলো কোন একটি সেক্টরের বিশেষজ্ঞ যিনি অন্তত ৫ বছর আপনার পছন্দের সেক্টরে টানা কাজ করেছেন এবং এখন অন্য সেক্টর হলেও যিনি এখনো সক্রিয় আছেন। যিনি নিজেকে টেকসই করবার জন্য অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ মুখোমূখী হয়েছেন। তবে মেন্টর বাছাই করবার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখতে হবেঃ

  • যাকে মেন্টর হিসেবে বেছে নেবেন তার মূল্যবোধ সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকতে হবে। আপনার এবং তার মূল্যবোধ যদি এক না হয় তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জনে তিনি তেমন কোন কাজে নাও আসতে পারে।
  • যোগাযোগের ক্ষমতা অবশ্যই ভালো হতে হবে। কারন দেখা গেছে নিজে অত্যন্ত সফল কিন্তু আরেকজনকে পথ দেখাবার জন্য অথবা নিজের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে বলবার দক্ষতা তেমন একটা নেই।
  • মানসিকভাবে পরামর্শ দেবার জন্য প্রস্তুত কিনা অথবা সম্মতি আছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে। কারন হয়তো তিনি বাহ্যিক সম্মতি দিয়েছেন কিন্তু মানসিক ভাবে সম্মতি দেননি। আর সেজন্য লক্ষ্য নির্ধারনের যে সময়সীমা আপনি নিজেই নিজেকে দিয়েছেন সেটা বিলম্ব হবে।বিশ্বাস করুন বা না করুন, একজন পরামর্শদাতা বেছে নেওয়ার সময় ব্যক্তিত্ব অবশ্যই বিবেচনা করার মতো বিষয়। আপনি যদি একজন অন্তর্মুখী হন এবং আপনার সম্ভাব্য পরামর্শদাতা যদি বিপরীত হন, আপনি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।

৩. অনেক সময় পরামর্শক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হন। সেক্ষেত্রে কোচ বা প্রশিক্ষক আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। কারন কোচিং বা প্রশিক্ষন দেবার জন্য তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে থাকেন। তবে কোচিং বা প্রশিক্ষন নেবার জন্য আপনাকে কিছুটা বিনিয়োগ করতেই হবে এবং এ সত্যটি আপনাকে মানতেই হবে। একজন খেলোয়ার তার সেরা খেলাটি দর্শকদের উপহার দেবার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কোচের শরনাপন্ন হন। ঠিক একইভাবে প্রফেশনাল হবার জন্য একজন কোচের অধিনে কিছুদিন থাকা মানেই হলো ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকা।

প্রশ্ন করুন

লক্ষ্য নির্ধারন বা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে বোঝার জন্য, জানার জন্য, মেনে চলার জন্য। আমরা অনেকেই প্রশ্ন করতে পারি না বা প্রশ্ন করতে একধরনের লজ্জাবোধ করি। অথবা প্রশ্ন করার অভ্যাস আমাদের মধ্যেই নেই। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক নজির আছে যে একটি প্রশ্ন সম্পূর্ণ জীবনকে বদলে দিয়েছে। তবে এমনভাবে প্রশ্ন করতে হবে যেন উত্তরদাতা শুধুমাত্র হ্যা বা না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে উত্তর দিতে না পারেন। ঠিক যেমনভাবে চিকিৎসকরা করে থাকেন রোগীর উপসর্গ জানার জন্য। চিকিৎসকের প্রশ্নগুলোকে বলা হয় ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন যার মানে হলো গভীরে ঢুকে উত্তর বের করা। সাধারনত এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নকে আবার অধিকাংশ মানুষ 5W1H বলে জানি। কি (What), কেন (Why), কোথায় (Where), কখন (When), কে (Who) এবং কিভাবে (How).

কি করা উচিত? (What)

এটি করার উদ্দেশ্য কী? (What)

আরও কিছু কি করার আছে? (What)

লক্ষ্য পূরণের জন্য কোথায় রিসোর্স পাবো? (Where)

কখন এগিয়ে যাওয়ার সময়? (When)

কে আমাকে সাহায্য করতে পারেন? (Who)

কেন তারা আমাকে সাহায্য করবে? (Why)

কেন আমি এই কাজ করব? (Why)

তারা আমাকে কীভাবে সাহায্য করবে? (Who)

লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের সময় যদি প্রতিনিয়ত ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করা যায় এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞ মানুষদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা যায় তাহলে লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নে কেউ আটকাতে পারে না। এই ডায়াগনস্টিক প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন (Why)?জাপানের বিখ্যাত ব্যবসায়ী কিচিরো টয়োডা বলেছিলেন কোন সমস্যা বা কোন ধরনের লক্ষ্য নির্ধারনের জন্য যদি অন্তত পাঁচবার কেন (Why) জীজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে ঐ সমস্যার বা লক্ষ্যের কেন্দ্রতে পৌছতে সক্ষম হয়। তাই আপনার লক্ষ্য নির্ধারন এবং বাস্তবায়নের জন্য বারবার ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করুন যার উত্তর কেউ কোনদিন শুধুমাত্র হ্যা বা না দিয়ে শেষ করতে পারবে না।

নিজের সাফল্যে নিজেই উদযাপন করুন

কখনও নিজের সাফল্যে নিজেই উদযাপন করেছেন? আমি প্রায়ই নিজের ছোট কোন সাফল্যকে উপেক্ষা করতাম বৃহৎ কোন সাফল্যের আশায়। এটা খেয়াল করে আমার এক বড় ভাই আমাকে বললেন বড় সাফল্যে ক্ষুদ্র সাফল্যকে উপেক্ষা করছো? এটা একদম ঠিক নয়। আমার বড় কোন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবার জন্য ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে ফেলি এবং এটাই স্বাভাবিক অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সংখ্যাই বেশী থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে আসা ছোট একটি সাফল্যকে যদি কাছের মানুষদের সাথে নিয়ে উদযাপন করা যায় তাহলে মানসিকভাবে একধরনের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া যায়। কোন কিছুকে ভালোবাসার পর যদি সেটা অর্জন করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র উদযাপন করা সম্ভব। ধরুন কোন একটি লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে ঘুম উঠে ব্যায়াম করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আপনি রাতে ঘড়িতে এলার্ম সেট করে রাখেন। কিন্তু সকালবেলা এলার্ম বেজে উঠলেই আপনার বিরক্ত লাগে। এর মানে হতে আপনি আপনার লক্ষ্যটি বাস্তবায়নের জন্য শুরুতেই যে ফর্মূলার কথা বলেছিলাম সেটি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেন নি। ফর্মূলাটি ছিলো ”কেন-কারন”। লক্ষ্য নির্ধারনের আগে কেন আপনি লক্ষ্যটি নির্ধারন করতে যাচ্ছেন এবং এর যথার্থ কারন আপনার কাছে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অসংখ্যবার আপনি ব্যর্থ হচ্ছেন এবং যতবার আপরি ব্যর্থ হয়েছেন কেন এবং কারন বের করে আবার নেমে পড়লেন। এবার যখন সাফল্য এলো তখন কেউ প্রশংসা না করলেও আপনি নিজেকে নিজেই একটা সাবাসী দিয়ে দেন। দেখবেন অন্যরকম লাগবে। আমি যখন ঠিক করলাম আমি একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সাথে প্রতিটি প্যারার জন্য একটি করে ভিডিও বানাবো তখন আমি আমি আমাকেই প্রশ্ন করলাম কেন? এবং কারন বের করলাম। তারপর কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা বললাম, বেশ কিছু আর্টিক্যাল পড়লাম, মেন্টরের সাথে পরামর্শ করলাম। তারপর সময় নির্ধারন করে নেমে পড়লাম। এখন আমি আর্টিক্যালটির একদম শেষে চলে এসেছি এবং একধরনের অন্যরকম আনন্দবোধ করছি। কারন নতুন একটি আর্টিক্যাল লিখবো এবং সেই সাথে আর্টিক্যালটিকে ভিত্তি করে ভিডিও বানাবো, এই খুশিতে গত তিনদিন আমি একটানা কাজ করেছি। এই যে এতো আয়োজনের শেষে যখন পাবলিশ করবো আমার সোস্যাল সাইটে তখন পাঠকরা হয়তো পড়বেন বা পড়বেন না কিন্তু আমার উদযাপন কিন্তু চলতেই থাকবে যা আমাকে পরবর্তী আর্টিক্যাল লেখায় অনুপ্রেরনা যোগাবে।

লক্ষ্য নির্ধারন, পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা

নিজের জীবনের জন্য লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন, লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেই নিজেকে সময়সীমা বলে দিয়েছেন এখন প্রয়োজন ঠিকমতো পর্যালোচনা করা। পর্যলোচনার জন্য প্রয়োজন প্রতি সপ্তাহে নিজের জন্য আধা ঘন্টা সময় বের করা। এই আধা ঘন্টা আপনি আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করেছিলেন সেগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা। পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা যদি ঠিক মতো না হয় তাহলে যে লক্ষ্য নির্ধারন করেছেন সেটা শেষ সময়ে গিয়ে দেখা যেতে পারে ঠিকমতো কাজ করেনি। অথবা আপনি ঠিক পথে আছেন কিনা সেটাও হয়তো দেখা সম্ভব হবে না।

লক্ষ্যঃ আপনি ঠিক করেছেন আপনি ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে চাচ্ছেন এবং আপনি নিজেকে সময় দিয়েছেন একমাস।

কেনঃ ইংরেজী ভাষা মার্কেটিং প্রফেশনালদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

কারনঃ অধিকাংশ সময় আপনাকে বাইরের দেশের সাথে কথা বলতে হবে

কতদিন সময় দেবেনঃ একমাস

লক্ষ্যকে ভাগ করেছেনঃ (১) প্রতিদিন একঘন্টা ইংরেজী দৈনিক পড়বেন (মাসে ৩০ ঘন্টা), (২) প্রতিদিন একঘন্টা ইংরেজী খবর শুনবেন (মাসে ৩০ ঘন্টা, (৩) প্রতিদিন একটি ইংরেজী সিনেমা দেখবেন (মাসে ৩০টি), (৪) প্রতিদিন ২০টি ইংরেজী শব্দ অর্থসহ শিখবেন এবং কথা বলার সময় চেষ্টা করবেন ব্যবহার করতে (মাসে ৬০০টি শব্দ), সপ্তাহে দুদিন শুধুই ইংরেজীতে কথা বলবেন (হোক বা না হোক) (মাসে ৮দিন), প্রতিদিন ইউটিউভের মাধ্যমে অনলাইন টিউটোরিয়াল নেবেন ৩০ মিনিট (মাসে ১৫ ঘন্টা)

এই যে লক্ষ্যকে খন্ডে খন্ডে ভাগ করলেন এবার সপ্তাহে একদিন আধা ঘন্টা সময় বের করে দেখুন সবকিছু ঠিকমতো চলছে কিনা? যদি রুটিন মাফিক সব ঠিক থাকে তাহলে নিজেকে একটি উপহার দিন, হতে পারে একটি চকলেট যা খাবার সময় আনন্দ নিয়ে তৃপ্তির সাথে খাবেন। কারন আপনি নিজেই এই উপহারটি অর্জন করেছেন।

শেষ কথা

স্বপ্ন আপনার! লক্ষ্য আপনার! ব্যর্থতা আপনার! সাফল্য আপনার! যা কিছু অর্জন হবে সব আপনার। মনে রাখতে হবে কেউ আপনাকে করে দেবে না। করতে হবে আপনাকেই। আপনার ভেতর যদি ইতিবাচক মনোভাব থাকে, লক্ষ্যে যদি আপনি অটুট থাকেন, একাগ্রতা যদি হয় মজবুদ আর চিন্তাভাবনা যদি হয় বাদশাদের মতো, তাহলে জীবন যুদ্ধের রণকৌশল আপনি অবশ্যই তৈরি করতে পারবেন এবং সঠিক পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

———————————————————————————————————————————————————————

আপনাদের জন্য একটা এ্যাসাইনমেন্ট দিতে চাই

১. আপনারা সবাই স্বপ্ন দেখেন, এবার এই স্বপ্নকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে ফেলুন

২. প্রতিটি ভাগের জন্য ডায়াগনস্টিক প্রশ্ন করুন। যেমনঃ

  • এই ক্ষুদ্র ভাগটির মাধ্যমে আপনি কি অর্জন করতে চাচ্ছেন? (What)
  • কেন অর্জন করতে চাচ্ছেন? (Why)
  • কারনটি বের করুন যেন সেটি আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় (Becasue)
  • সময় নির্ধারন করুন (Start Date & Finish Date) (When)
  • কাদের সাহায্য লাগবে (Who)
  • কিভাবে করবেন (How)

3. নীচের যে ছকটি দেখিয়েছি সেটার আলোকে আপনার লক্ষ্যটিকে দৃশ্যমান করুন।

যা অর্জন করবো/ ১ বছর

৬ মাস (পরিকল্পনা) ৩ মাস (পরিকল্পনা)

৩ মাস (পরিকল্পনা)

ধাপে ধাপে কি অর্জন করবো (What is my next Step)?
ধাপটি কখন শেষ করবো (When this step will complete)?
ধাপটি ধাপটি সম্পন্ন করতে রিসোর্স গুলো কোথায় আছে? (Where are the resources)?

৪. তাপরপর আমাদের ইমেইল করুন যাতে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন ([email protected])


লেখকঃ জনাব কে এম হাসান রিপন,

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)

অধ্যক্ষ, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক

Teaser-36

কেউ করে দেবে না, করতে হবে আপনাকেই

কেউ করে দেবে না, করতে হবে আপনাকেই। আপনি নিজেই আপনার অনুপ্রেরনা। নিজের জীবনকে একটি গবেষনা পত্র হিসেবে চিন্তা করুন। ভেবে দেখুন কতগুলো স্বীদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ছোট্ট পরিসরে। কেমন ছিলো সেই স্বীদ্ধান্তগুলো? কোথায় ভুল ছিলো? কি কি শিখলেন? আর অন্য কিভাবে করা যেত? কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করেও আপনি কিন্তু নিজের চলার পথকে ফাইন টিউনিং করে নিতে পারেন। চুপ করে বসে থাকলে কিন্তু আপনারই ক্ষতি। কেউ সেচ্ছায় আসবে না কাছে বা আসলেও খুব একটা আশার কিছু হবে না।

মানুষতো বলবেই আপনাকে দিয়ে হবে না, আপনাকে বলবে চলে যাও এখান থেকে। আবার কিছু মানুষ আপনাকে উৎসাহও দেবে। মনে রাখতে কেউ নিরুৎসাহিত করবে আবার কেউ উৎসাহিত করবে। যে যাই করুক, কাজ আপনাকেই করতে হবে। কেউই করে দেবে না। বেশী হলে কিছু মানুষকে পাবেন যারা আপনাকে উপায় বলে দিয়ে সাহায্য করবে কিন্তুঃ

১. লিখতে আপনাকেই হবে।

২. পড়তে আপনাকেই হবে।

৩. শুনতে আপনাকেই হবে।

৪. শিখতে আপনাকেই হবে।

৫. ঝুঁকি আপনাকেই নিতে হবে।

৬. নিজ হাতে কাজ আপনাকেই করতে হবে।

৭. ব্যর্থ আপনিই হবেন আবার

৮. সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সফলতা আপনাকেই অর্জন করতে হবে।

সচেতন থাকুন | ভালো থাকুন
মনে রাখবেন #অনুশীলনে_সবই_সম্ভবা

 

Teaser-35

তথ্যের সাথে আমি কি সংযোগ তৈরি করতে পারছি?

জীবনে শেখার কোন শেষ নেই। আমরা সবাই শিখছি, কেউ হয়তো লিংকডইন থেকে বা হয়তো ফেসবুক থেকেও শিখছি। কিন্তু আমাদের সাথে অগ্রগামী মানুষেদের কিছুটা পার্থক্য আছে। তারা সবসময় যেকোন কিছু দেখে বা কারো সাথে আলোচনা করে যা শিখলেন সেটা তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা বা ইচ্ছা বা সখের সাথে সংযোগ তৈরি করেন। যে সংযোগটিই আসলে তাকে তার ক্যারিয়ারের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করে। আজ সকালে আমি একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহন করি। মিটিংটি পরিচালনা করছিলেন ড্যাফোডিল পরিবারের সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান। মিটিংয়ের কোন একটি পর্যায়ে তিনি একটি বিষয় আমাদের সকলের সামনে নিয়ে আসলেন। কোন একটি প্রশ্নে উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় কিভাবে? উত্তরটিতে আমি যে এতোখানি চমকিত হবো সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারি নি। তিনি বললেন প্রতিদিন সকাল শুরু হয় জাতীয় দৈনিক পড়ে। কখনও কাগজের মাধ্যমে পড়েন, কখনও হয়তো প্রযুক্তির মাধ্যমে পড়েন। এই অভ্যাসটির কারনে উনার পক্ষে সম্ভব হয় সারবিশ্বের তথ্য সংগ্রহের। যে তথ্যগুলোকেই তিনি সংযোগ ঘটান উনার ক্যারিয়ার এজেন্ডার সাথে এবং এটি ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অনুশীলন করে আসছেন। কিন্তু আমার চমকিত হবার কারনটি আমি এই লেখাটির শেষের দিকে উল্লেখ করেছি।

সংবাদপত্র আমাদেরকে সমৃদ্ধ করে তথ্য এবং সাধারণ জ্ঞান সরবরাহ করবার মাধ্যমে। একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, খেলাধুলা, বিনোদন, বাণিজ্য, মানবিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ সম্পর্কে জানতে পারি সংবাদপত্রের মাধ্যমে। পৃথিবীর প্রায় সকল সফল ব্যক্তিরাই সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এই অভ্যাসটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশস্ত করবে এবং আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। বিষয়টি হয়তো খুবই সাধারন মনে হবে অনেকের কাছে কারন আমরাও কোন না কোন উপায়ে খবরের কাগজ পড়ি কিন্তু আমাদের পড়াটা সীমাবদ্ধ থাকে আমাদের পছন্দনীয় বিষয়ের মধ্যে এবং শুধুমাত্র জানবার নিমিত্তে। সংযোগ তৈরি করবার জায়গায় আমরা হয়তো অনেকেই ব্যর্থ হই।

আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব একটি পছন্দনীয় ক্ষেত্র আছে। যেখানে আমরা স্বাচ্ছন্দবোধ করি কাজ করতে বা আগ্রহী কাজ করবার জন্য। এখন এই আগ্রহের জায়গা আরো বেশী দৃঢ় হয় যখন আমরা আত্মবিশ্বাসী হই। কিন্তু আমরা অনেকেই আত্মবিশ্বাসের জায়হায় হোচট খাই। কিন্তু কেন? আত্মবিশ্বাসের জন্য ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু সমস্যা হলো পরিকল্পনা আমরা কোনদিনই করতে সক্ষম হবো না যদি না আমার কাছে সঠিক তথ্য থাকে। আমার কাছে মনে হয় এখানে একটি ৩৬০ ডিগ্রী মডেল হতে পারে। যেমনঃ

আমরা প্রত্যেকেই পড়ছি। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ব্লগ, আর্টিক্যাল, বই বিভিন্ন উপায়ে পড়ছি কিন্তু সংযোগ ঘটাতে পারছি না। আর সংযোগ ঘটাতে না পারার কারনে উপরের যে ৩৬০ ডিগ্রী মডেলের কথা উল্লেখ করলাম সেটি পরিপূর্ন হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন টিপস এবং টেকনিক ইতিমধ্যেই দিয়েছেন যে কিভাবে পড়লে ক্যারিয়ারের জন্য ৩৬০ মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে। আমার খুব ভালো লাগছে একটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যেটি হয়তো অনেকেই চাইলে সহানুভূতি বা Empathy সাথে তুলনা করতে পারেন। ড্যাফোডিল পরিবারের সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান তার ব্যক্তিগত চরম ব্যস্ততার মাঝেও শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রী, সদ্য গ্র্যাজুয়েট, প্রফেশনাল বা উদ্যোক্তাদের জন্য ২১টি লেকচারের একটি কোর্স তৈরি করেছেন এবং আপলোড হয়েছে GoEdu.ac লার্নিং পোর্টালে এবং সকলের জ্ঞান অর্জনের জন্য এটি সম্পূর্ন কমপ্লিমেন্টরী সেবা উনার পক্ষ থেকে। এই লিংকের Click Here মাধ্যমে প্রবেশ করে আপনারা চাইলেই কোর্সটিতে অংশগ্রহন করতে পারেন এবং জেনে নিতে কিভাবে পড়লে আপনিও তথ্যের সাথে নিজের ক্যারিয়ারে সংযোগ ঘটাতে পারবেন।

বন্ধুরা আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বস করি জীবনে শেখার কোন শেষ নেই। প্রতি মুহুর্তে শিখছি। শেখার গুরুত্বপূর্ন একটি মাধ্যম হচ্ছে পড়া বা জানতে চওয়া কি আছে এর মাঝে যা আমাকে সাহায্য করতে পারে। যা আমি আমার ক্যারিয়ারের সাথে সংযোগ ঘটাতে পারি। তথ্য কি শুধুই তথ্য? তথ্যের সাথে আমি কি সংযোগ তৈরি করতে পারছি? প্রশ্নটি আপনাদের সকলের কাছে রেখে শেষ করছি


লেখকঃ কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

Teaser-33

তরুনদের মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা

বাংলাদেশের জন্য আসলেই এখন সুবর্ণ সময়! আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি কর্মক্ষম যুবসমাজ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বৎসরের মধ্যে। আর এই ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনেই আমরা এই মুহুর্তে ডেমোগ্রাফিক লভ্যাংশের উপকারিতা উপভোগ করছি। আবার বিশেষজ্ঞরা অন্যভাবে বলবার চেষ্টা করছেন যে কর্মক্ষম যুবসমাজের কারনে আমাদের সামনে এখন অফুরন্ত সুযোগের হাতছানি। যদি যুগপোযোগী নির্দেশনার মাধ্যমে তরুন সমাজকে কার্যকরি নেতৃত্বের গুণাবলী ‍দিয়ে সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করা না যায় তাহলে ধরে নেয়া যায় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয়ের সম্মোখীন হতে পারি। আমরা সকলেই অবগত আছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশ ২০৩০ সালের পূর্বেই জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুন সমাজকে রাজনৈতিক সচেতনতার বাইরে রেখে রেখে লক্ষ্য অর্জন কতটুকু যুক্তিযোগ্য তা নতুন করে ভাবার দাবী রাখে। এই মূহুর্তে বিশ্বব্যাপী দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক হিসেবে তরুন সমাজকে গড়ে তুলবার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যত্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক আমরা তাকেই বলবো যিনি তিনটি বিষয় মনের গভীরে লালন করেনঃ
  • পরিবর্তনকারী এজেন্ট হিসেবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন
  • নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশের প্রতি তার ভূমিকা সম্পর্কে যথেষ্ঠ জ্ঞান রাখেন
  • দেশে শান্তি, সম্পৃতি বজায় রাখার নিমিত্তে গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহন করেন।
বর্তমানে আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে নজর দেই তাহলে দেখবো প্রতিটি ক্ষেত্রে ”রাজনীতি” শব্দটি যেন একটি নিষিদ্ধ শব্দ হিসেবে ব্যবহারিত হচ্ছে। সাধারনভাবে এই মুহুর্তে তরুনদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় ”আপনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কি?” তিনি বিনা চিন্তায় জবাব দেবেন “আমি রাজনীতিকে পছন্দ করি না!” এবং এটিই বাস্তবতা। তবে পরিবারের কেউ কোন দল বা গোষ্ঠির পক্ষে রাজনীতে সক্রিয় থাকলে তার উত্তর কিছুটা ভিন্ন হবে। এখন এরকম একটি প্রেক্ষপট বিদ্যমান যেখানে রাজনৈতিক সচেতন তরুন চিন্তাও করা যায় না। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা রাজনীতির ব্যাপারে আজকের তরুনদের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা যদি ১৯৪৮ সালে বিদ্যমান থাকতো তাহলে কি স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হলো রাজনীতির সাথে বর্তমানে দেশের কোন সংযোগ নেই। যে কারনে রাজনীতি শব্দটি মনে এলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিছিল, মিটিং, হরতাল, কাদানে গ্যাস, অযৌত্তিক সমালোচনা ইত্যাদি। ভয় বাসা বাধে মনে। কিন্তু আসলে রাজনীতি মানে কি? ইতিহাস ঘেটে আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু বুঝেছি তা হলো রাজনীতি মানেই দেশের উন্নয়নের প্রতি সচেতনতা। আর দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতন তিনিই যিনি দায়িত্বশীল নাগরিক। আমরা দেখতে পাই সকলেই মোটমুটি একটি বাক্যই ব্যবহার করতে পছন্দ করেন যে আমি দেশের জন্য কাজ করছি। যদি রাজনৈতিক সচেতন দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া না যায় তাহলে দেশের উন্নয়নের ব্যাপারে আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারবেন না যে আর কি করলে দেশের উন্নতি ঘটবে। প্রশ্ন যদি করা না যায় তাহলে সঠিক উত্তর আসবে না। আর উত্তর না আসা মানে হলো আপনার উদ্দ্যেগে যে কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে তা সামগ্রিক অর্থে দেশের কোন প্রয়োজনে আসবে না।
আমাদের এই মুহুর্তে দরকার মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা যার যার অবস্থানে থেকে আগামীর উন্নত বাংলাদেশের জন্য। আর এ ক্ষেত্রে তরুনদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী।
12

থেমে যাবার তো উপায় নেই, চলতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে

দিনটি ছিলো ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুর দিকের কোন একটি দিন। হঠাৎ করেই জরুরী বৈঠকের নোটিশ। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলাম প্রধান কার্যালয়ে। সবার গুরু গম্ভীর মুখ দেখে বোঝা গেল বিষয়টি হয়তো একটু বেশীই জরুরী। সহকর্মীরা সবাই একে একে যোগ দিলেন বৈঠকে। বৈঠক শুরু হলো। বৈঠকের বিষয় স্পষ্ট হলো সম্ভাব্য করোনার মহামারীতে আমাদের প্রস্তুতি। যেহেতু করোনা শব্দটি তখনও ততোটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি তাই প্রথমেই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আমাদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সবুর খান যা বলছিলেন তার সারাংশ হলো সামনে অনেক কঠিন সময় সুতরাং আমাদের নিজস্ব গন্ডির মধ্যে থেকে ক্লাস থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার আমাদের শতভাগ নিশ্চিত করতেই হবে। সম্ভব/অসম্ভবের মধ্যে দোদুল্যমান আমার অবস্থান। একই সাথে বোঝার চেষ্টা করছিলাম আমার সহকর্মীদের মনের অবস্থান এবং আমার মনোভাবের সাথে তাদের মনোভাব মেলাবারও চেষ্টায় ছিলাম। এখন বলতে আপত্তি নেই, আমার কাছে অসম্ভবের পাল্লাই বেশী ভারী ছিল। কোথায় চীন দেশ আর কোথায় আমরা। আমাদের সেই শক্তি কোথায়? যা হোক কোন কিছু না ভেবেই মনে মনে ভাবলাম কিছু একটাতো হবেই। বিসমিল্লাহ বলে সহকর্মীদের সাথে নেমে পড়লাম কাজে। একটা বিষয় খেয়াল করলাম নেতৃত্ব যদি হয় শক্তিশালী এবং সুদূর প্রসারী তাহলে তার প্রভাব কর্মীদের উপর পড়বেই। আমি ভেতর থেকে একধরনের শক্তি অনুভব করলাম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারকেও ধন্যবাদ দিতে হয় বেশ কিছু ক্ষেত্রে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কিছু বাস্তবিক স্বীদ্ধান্ত গ্রহন করবার জন্য।

ফেব্রুয়ারী মাস গড়িয়ে মার্চ চলে এলো। করোনা নামক চক্রে আমরাও পড়তে যাচ্ছি বিষয়টি স্পষ্ট হলো। আগে থেকেই নেয়া স্বীদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ গোছানো হচ্ছিলো। শুরু হলো অনলাইনের যাত্রা। নির্ধারন করা হলো হাতের কাছে থাকা সহজ কিছু প্রযুক্তি যেমন গুগল মিট, জুম, গুগল ক্লাসরুম, মুডল এবং অনুশীলন করা হচ্ছিল তার ব্যবহার। পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে চলেছে চার দেয়ালের ক্লাস রুমে ভার্চুয়াল ক্লাস, পাশাপাশি বসে ভার্চুয়াল মিটিং, ফাইল শেয়ারিং, অনলাইন হাজিরা ইত্যাদি। এক বন্ধু আমার অফিসে এসে দ্যাখে আমি ভার্চুয়াল মিটিং করছি আমার পাশের রুমে থাকা সহকর্মীর সাথে। ও কিছু না বলে ভ্রু কুচকে চায়ের কাপে চুমুক ‍দিচ্ছিলো। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো লকডাউন। মাথায় সারাদিন দুটি শব্দই ঘুরপাক খেতে লাগলো করোনা এবং লকডাউন। বেড়ে গেলো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডের বিশাল দায়িত্ব আমাদের সকল সহকর্মীদের উপর। শক্তি ছিলো নেতৃত্বের আর এতোদিনের আত্মবিশ্বাসের। চিন্তা করলাম একটা কিছুতো হবেই।

শুরু হলো লকডাউনের মধ্যেই প্রতিদিন রুটিন মাফিক অনলাইন ক্লাস, মিটিং, পরীক্ষা, কুইজ, অভিভাবক সম্মেলন, অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি। অবাক হলাম যাদের নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশী চিন্তিত ছিলাম আমাদের সেই কোমলমতী ছাত্রছাত্রী যারা লকডাউনের কারনে ফিরে গিয়েছিলো গ্রামে তাদের উৎসাহ এবং সতস্ফুর্ত অংশগ্রহন দেখে। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে থাকা সীমিত ইন্টারনেট এবং ডিভাইস ব্যবহার করে যুক্ত হচ্ছিলো অনলাইন ক্লাসে। রাতদিন চলেছে বিরতিহীন ক্লাস ও অনলাইনে পড়াশুনার কার্যক্রম। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। মনে মনে ভাবতাম আরে উন্নত বিশ্ব তাহলে এভাবেই আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। একটা সময় দেখলাম ছাত্রছাত্রীতো বটেই বাবা-মা সবাই অংশগ্রহন করছে অনলাইন ক্লাসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সময় হয়নি। করোনা তার তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সবাই সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছি। সমস্যাতো আসবেই। থমকে যাবার অবকাশ নেই। হঠাৎ মনে হলো কর্মের সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। ফলাফল যা বের হলো তাতে আমিও কিছুটা অবাক হলাম। ড্যাফোডিল পরিবারের স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে

  • লকডাউনের প্রথম ৯০ দিনে প্রায় ৬০ হাজার ক্লাস সম্পন্ন হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে
  • গড়ে প্রতি ক্লাসে উপস্থিতি ছিলো ৬৮%
  • এই হিসেবে ড্যাফোডিল পরিবারের ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রতিদিন ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে।
  • অভিভাবক সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৫০টিরও বেশী
  • অনলাইনেই সম্পন্ন হয়ে কুইজ, ক্লাস টেষ্ট, পরীক্ষা, এ্যাসাইমেন্ট,
  • দেশ-বিদেশের বিখ্যাত প্রফেশনালদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০ অধিক ওয়েবইনার।
  • প্রায় ৩০০ সহকর্মী মিলে যার যার ঘরে অবস্থান করে আমরা আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি তিনটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট (হেকাথনের আদলে করোনাথন, অনলাইন লার্নিংকে সবার মাঝে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য অনলাইন লার্নিং সামিট এবং ঘরে বসে মেধাভিত্তিক কাজ করা সম্ভব এই সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরে তরুনদের চাকরির সুযোগ তৈরি করবার জন্য আয়োজন করা হলো ভার্চুয়াল জব ফেস্ট)। এই তিনটি ইভেন্টে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের আরো প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
  • সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমরা প্রায় ৩০০০ সহকর্মীরা একে অপরের সাথে মিলে গত ৯০ দিন কাজ দিলাম, কাজ করলাম কিন্তু কারো সাথে সরাসরি দেখা হলো। সবাই যার যার ঘরে বসে যার যার কাজ সম্পাদন করলাম। এটাই একসময় অসম্ভব ছিলো যা বর্তমানে বাস্তব।

এতো বিশাল কর্মযজ্ঞের মাঝে হঠাৎ ড্যাফোডিল পরিবারের মনে হলো কেননা আমরা এমন একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করি যার মাধ্যমে অন্যরাও অনায়সে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সূচনা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য Blended Learning Center, কলেজ-পলিটেকনিকের জন্য college.ac এবং স্কুলের জন্য schoolbd.ac । এই প্ল্যাটফলমগুলো বাংলাদেশের যেকোন স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

আসলে পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যেকোন পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাবার এক বিরাট ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা তা বুঝি না। একটা সময় যা ছিলো অসম্ভব তা এখন বাস্তব। সামনের পৃথিবী হয়তো আরো অজানা, দুর্বোধ্য। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তার সেই শক্তিশালী উপমার উপর “মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা”। সুতরাং থেমে যাবার তো উপায় নেই। চলতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে।

—————————————– X ——————————————

লেখকঃ-

কে এম হাসান রিপন

ড্যাফোডিল পরিবার

Home Office

অফিসের আদলে হোম অফিস

ধানমন্ডিতে একটা বড় খেলার মাঠ ছিলো। আমরা সবাই চিনতাম আবহানী মাঠ নামে। সকাল-বিকাল সবসময় আবহানী মাঠে। সবচেয়ে মজার ছিলো বৃষ্টির দিনে। কাদা মাঠে ফুটবল খেলা। ফুটবলতো আর হতো না, কাদা ছিটানো হতো বেশী। আবহানী ক্লাবের সব স্টার ফুটবালার সকাল বিকেল অনুশীলন করতেন। আমরা দাড়িয়ে বা গ্যালারীতে বসে দেখতাম আর অপেক্ষা করতাম কখন তাদের মিস করা বল আমাদের কাছে আসবে আর আমরা নিজেকে ম্যারাডোনা ভেবে শট করবো। এই শট করা নিয়ে বন্ধুদের সাথে প্রায়ই ঝগড়া লেগে যেতো। ৯০ এর বিশ্বকাপের পর অতি উৎসাহিত হয়ে নিজের নাম লেখালাম একটি ক্লাবে। যথারিতি বিকেল ৩টায় নিজের কেডস, ট্রাউজার এবং টি-শার্ট পড়ে প্রাকটিস সেশনে যোগ দিলাম। প্রাকটিস শেষে কোচ ডেকে বললেন কেমন লাগলো? আমি বললাম গলিতে যেভাবে খেলে মজা পাই তেমন পাইনি। তিনি বললেন বাসায় গিয়ে ফুলবলের জন্য নির্ধারিত জার্সি, ‍সর্টস, বুট, শিন গার্ড কিনে তারপর কাল প্রাকটিসে যোগ দেবে। আমি তো বাসায় ফিরেই বাবাকে সাথে নিয়ে স্টেডিয়ামের স্পোর্টস শপে গিয়ে সব গুলো কিনে তারপর প্রাকটিসে যোগ দিলাম। প্রাকটিস শেষে কোচ বললেন নিজেকে ম্যারাডোনার মতো লেগেছে? আসলেই ফুটবল খেলার জন্য নির্ধারিত সাজসজ্জা, পোশাক এবং মানসিক প্রস্তুতি আমার ভেতরের পুরো অনুভুতি পরিবর্তন করে দিয়েছে।

প্রত্যেক পেশার জন্যই রয়েছে নির্ধারিত সাজসজ্জা, পোশাক, পরিবেশ, উপকরণ এবং মানসিক প্রস্তুতি। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব আমাদের বেশ কিছু শব্দের সাথে পরিচিত করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ব্যবহারিত হচ্ছে ভার্চুয়াল অফিস বা হোম অফিস। অফিস বলতেই আমরা বুঝি একটি পরিশীলিত কাজের পরিবেশ যেখানে মানুষ মানুষের সাথে মিলে কাজ করবে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারনে আমরা অনেকেই আমাদের সেই চিরাচরিত অফিসে যেতে পারছিনা যার ফলে অনেকেই আজ তার বাড়িকেই অফিস বানিয়ে ফেলেছেন। শুরুতেই যে ভূমিকা দিয়ে শুরু করেছিলাম আমার ফুটবল ক্লাবের সাথে যুক্ত হবার গল্প এবং কিভাবে আমি সঠিক সাজসজ্জা, পোশাক এবং মানসিক প্রস্তুতির পরিবর্তনের মাধ্যমে সঠিকভাবে খেলার মধ্যে ঢুকতে সক্ষম হয়েছিলাম। ঠিক একইভাবে আমরা যারা বাসায় অফিস করছি তারা যদি নির্ধারিত সাজসজ্জা, পোশাক, পরিবেশ, উপকরণ এবং মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজে যোগ দিতে পারি তাহলে আমাদের মেধাভিত্তিক কাজের অগ্রগতি অনেক বৃদ্ধি পাবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অধিকাংশ মেধাভিত্তিক কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব এবং এটি আমি দায়িত্ব নিয়েই বলতে চাই। তবে তার জন্য প্রয়োজন উন্নত মানাসিকতা। আমার ব্লগের এ পর্যায়ে আমি মেধা ভিত্তিক কাজের সাথে যারা ইতিমধ্যে জরিত আছেন এবং বাসায় বসে কর্মক্ষেত্রের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই।

মানসিক প্রস্তুতিঃ

  • এই মুহুর্তে যেহেতু সবাই কোভিড-১৯ নিয়ে চিন্তিত তাই প্রচুর পরিমানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত খবর মিডিয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করা আমাদের জন্য অনেক সময় কষ্টকর হয়ে যায়। তাই আমি চেষ্টা করি এই সংক্রান্ত খবর বা ব্লগ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি উল্লেখ করে দিয়েছেন। সেগুলো মেনে চলবার চেষ্টা করি। অযথা খবর বা ব্লগের মধ্যে নিজেকে যুক্ত করে উদ্বেগ বাড়াতে চাই না।
  • ইতিবাচক চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরী এবং ইতিবাচক চিন্তা করেন যারা তাদের সাথে সম্পর্ক এবং আলাপ আলোচনায় যুক্ত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
  • দেশ-বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আর্টিক্যাল প্রকাশ করেছে সেগুলো পড়তে পারলে উন্নত মানসিকতার চর্চাটা কিছুটা সহজ হয় এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে কিভাবে কাজ করা যায় তার একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।

PeopleTalk Online What is Mental Fitness and How Does it Work ...

শারীরীক প্রস্তুতিঃ

মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি শারীরীক সুস্থতাও অত্যন্ত জরুরী। এই মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হলো ডিসিপ্লিন। “Early to Bed & Early to Rise” এই উক্তিটি সবচেয়ে মূল্যবান। বাসায় বসেই ঘাম ঝড়াবার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্যালোরিকে বার্ন না করে ঘুমাতে না গেলেই ভালো। ঘরে বসে কিভাবে সহজেই ঘাম ঝড়াতে হয় তার অনেক পরামর্শ ইউটিউবে বা গুগলে আছে। ভালোভাবে দেখে এবং এই বিষয়ে অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে শুরু দেয়া যেতে পারে। আমি যে কাজটি করেছি তা হলো একজন চিকিৎসক বন্ধুর সাথে আলোচনা করে আমার শারীরীক সুস্থতার জন্য একটি চার্ট তৈরি করে নিয়েছি।

Employee Engagement Archives - Gympass | Blog

হোম অফিস স্থাপনঃ

  • আমাদের এখন অনেকেরই বাসায় বসে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা বাসার বিভিন্ন জায়গায় বসে কাজ করছি। কেউ বিছানাকেই বানিয়ে ফেলেছেন অফিস। কেউবা লিভিংরুমের সোফাতেই চালাচ্ছেন অফিসের কাজ। শুরুর দিকে আমিও তাই করেছি এবং ধীরে ধীরে যখন বুঝতে শুরু করলাম এটিই হবে নিউ নরমাল যেখানে কিছু কাজ হবে বাড়িতে এবং কিছু কাজ হবে কর্মক্ষেত্রে (হাইব্রিড মডেল), তখন একটি নিদৃষ্ট জায়গা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করলাম। আমার কাছে মনে হয় অফিসের কাজের জন্য কর্মক্ষেত্রের অনুভুতি পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। সেজন্য ঘরের যেকোন একটি অংশকে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার হোম অফিস এবং বাড়ির সবাইকে মনে করিয়ে দিতে পারেন যে বাড়ির এই অংশটি আপনার হোম অফিস। সবাই যেন সতর্ক থাকে আপনার কাজের পরিবেশ ঠিক রাখবার জন্য।

হোম অফিস উপকরণঃ

  • মনে রাখতে হবে আপনার কর্মক্ষেত্রের আদলেই হতে হবে আপনার হোম অফিস (যদি সম্ভব হয়)। তার মানে একটি টেবিল থাকবে যার উপর আপনি আপনার ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ রাখবেন।
  • একটি চেয়ার যেটি আপনার ব্যাক পেইন হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
  • টেবিলের উপর আপনি চাইলে একটি টেবিল ল্যাম্প রাখতে পারেন যেটি আপনার ফেসলাইট হিসেবে ব্যবহারিত হবে। পাশাপাশি পড়তেও আপনাকে সাহায্য করবে। এখন যেহেতু আমাদের প্রায়ই ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নিতে হয় তাই ফেসলাইট অনেক কাজে আসে এবং প্রফেশনালিজম প্রকাশ করে। সাথে একটি ফাইল কেবিনেট থাকলে ভালো হয়।
  • অফিসের প্রয়োজনীয় সকল কিছুই আসলে আপনার টেবিলের উপর থাকবে যেমন মোবাইল, চার্জার, কলম, খাতা ইত্যাদি। টেবিলের উপর আপনি চাইলে একটি মানিপ্ল্যান্ট রাখতে পারেন বা আমি অনেককে দেখেছি ছোট এ্যাকুরিয়াম রাখতে। এটি আপনার মনকে সজীব করতে সাহায্য করবে।
  • মনে রাখতে হবে কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থানকে মজবুদ করতে উপরের আয়োজনগুলো জরুরী। তাই সম্ভব হলে এই প্রাথমিক বিনিয়োগ করতে হবে। উপরের কোন কিছুই যদি সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত ঘরের টি-টেবিল, একটি চেয়ার এবং ঘরের একটি অংশকে নির্ধারিত করে শুরু দিন আপনার অফিসের আদলে স্থাপিত হোম অফিস।

17 Items You Need to Set up an Efficient Home Office

হোম অফিস সাজসজ্জা ও পোশাকঃ

আমি একদিন আমার হোম অফিসে বসে কাজ করছিলাম এবং বিদেশী একটি প্রতিনিধি দলের সাথে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক যথা সময়ে মিটিংয়ে অংশ নিলাম। হঠাৎ মিটিং যিনি হোস্ট করছিলেন তিনি সবাইকে বললেন আপনারা যার যার ওয়েবক্যাম অন করুন এবং পরিচয় দিন। আমিতো একদম অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি অফিসের পোশাকে ছিলাম না। তো আমি বাধ্য হয়েই অফিসের পোশাক (শার্ট এবং প্যান্ট) এবং সাজসজ্জা করে ওয়েবক্যাম অন করে মিটিং সম্পন্ন করলাম। কিন্তু তারপর মনে হলো অন্য ধরনের একটা অনুভুতি পেলাম। সত্যিকারের অফিসে বসলে যেমন মাথায় নতুন নতুন ধারনার জন্ম নেয় ঠিক তেমনই অনুভুতি কাজ করছিল। তারপর থেকে সকালে হোম অফিসে যোগ দেবার আগে আমি আমার পোশাক (শার্ট এবং প্যান্ট) এবং সাজসজ্জার (চুলটা অন্তত ঠিক রাখা) বিষয় নিশ্চিত করি। এটি একধরনের মানসিক সংযোগ আপনার হোম অফিসের সাথে।

Efficient Virtual Collaboration | Smart Meetings

হোম অফিস হার্ডওয়্যার/সফ্টওয়্যার

  • অবশ্যই আপনাকে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ ব্যবহার করতে হবে কারন অনেক মেধা ভিত্তিক কাজ ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ ছাড়া সহজ হবে না। ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে অবশ্যই সাউন্ড এবং ওয়েবক্যাম থাকতে হবে।
  • ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
  • স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ সাথে সংযোগ তৈরি করতে হবে। স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কিভাবে স্মার্টলী ব্যবহার করা যায় তার অসংখ্য ভিডিও ইউটিউভে আছে, আপনার দেখে নিতে পারেন।
  • কয়েকটি এ্যাপ্লিকেশন অত্যন্ত জরুরী যেমন ক্রোম ব্রাউজার (অনেক এ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা গুগল ক্রোম), ওয়াটসএ্যাপ, জুম, বিজয় বা অভ্র (বাংলায় লিখবার জন্য) ইত্যাদি। এছাড়া যার যার পেশা ভিত্তিক সফ্টওয়্যার তো থাকবেই।
  • গুগল আপনার জন্য অনেক বড় একটি রিসোর্স। আপনাকে খুব ভালো জানতে হবে জিমেইলের ব্যবহার, গুগল ড্রাইভের ব্যবহার, গুগলের মাধ্যমে ফরম তৈরি, গুগল ফ্রি ওয়েবসাইট, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ডক, শীট, এবং স্লাইড ইত্যাদি। মাত্র বছরে ১৬০০ টাকা খরচ করলেই আপনি পেতে পারেন ১০০ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ।
  • ফেসবুক বা লিংকডইনের মাধ্যমে আমরা এতোদিন শুধুমাত্র ছবি বা ভিডিও দেখতাম বা আপলোড করতাম। এখন আমাদের এই টুলসগুলোকে ব্যবহার করে মেধাভিত্তিক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
  • একজন সাধারন প্রফেশনাল হিসেবে আপনাকে অবশ্যই অতিসাধারন কিছু এডিটিং জানাটা অত্যন্ত জরুরী। এটি আপনাকে পরনির্ভশীলতা থেকে পরিত্রান দেবে। সেজন্য ইউটিউভের মাধ্যমে ইলাস্ট্রেটর এবং ফটোশপের কিছু সাধারন কাজ শিখে নিতে পারেন। এছাড়া ভিডিও এডিটিংয়ের উপরও রয়েছে অনেক ভিডিও। আপনাকে শুধু একটি প্রশ্ন করতে হবে ইউটিউভকে।
  • এছাড়া কেউ যদি খুব ভালো করে মাইক্রসফ্ট ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ারপয়েন্ট এবং গুগলকে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে তার অন্তত ৫০ ভাগ মেধাভিত্তিক কাজ ভার্চুয়ালী করা সম্ভব।

ভার্চুয়ালী মেধাভিত্তিক কাজ করার কথা মাথায় এলেই অনেকেই মনে করেন লক্ষাধিক টাকার বিনিয়োগ। আসলে আমাদের হাতের কাছে থাকা অতি সাধারন এ্যাপ্লিকেশন বা সফ্টওয়্যার দিয়েই আমরা আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড খুব সহজেই চালিয়ে নিয়ে যেতে পারি। প্রয়োজন শুধুমাত্র উন্নত মানসিকতার অনুশীলন এবং হাতের কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অতি সাধারন টুলস যা আমরা অপ্রয়োজনে ব্যবহার করেছি এতোদিন।

অনুশীলনে সবই সম্ভব | Practice makes everything perfect


লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

Presentation1

পক্ষপাতদুষ্ট নেতৃত্ব

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসী কিছু সাথী ছিলেন কিন্তু তিনি শেষের দিকে এসে একটু বেশী আবেগী হয়ে ঝুকে পড়ে ছিলেন প্রধান সেনাপতী মীর জাফরের দিকে। অনেকের অনেক বারণ করা স্বত্ত্বেও বাংলার শেষ নবাব সিদ্ধান্ত নিলেন যেটা প্রধান সেনাপতী মীর জাফর বললেন। তারপরের পরিণতি আমরা সবাই জানি কিন্তু যেটি নবাব সিরাজউদ্দৌলা জানতে পারেননি তা হলো আমাদের পরবর্তী ২০০ বছরের বৃটিশ গোলামী এবং নবাব পরিবারের করুন পরিনতি। অন্যদিকে মীর জাফর এবং তার পরিবারের অবস্থার পরিনতিও কিন্তু করুন ছিলো। নেতৃত্বেরর বিষয়ে লিখতে গেলেই যে দুটি শব্দ আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আসে তা হলো আবেগ এবং এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবার দক্ষতা। একসাথে বললে আবেগীয়-দক্ষতা। আমি খুব কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে লেখাটিকে কঠিন করবার চেষ্টা করবো না আমার পাঠকদের জন্য। আবেগীয়-দক্ষতা বলতে আমি যা বুঝেছি ”নিজের আবেগকে বুঝে তারপর নিয়ন্ত্রন করে অন্যের আবেগের ভাষাকে নিজের জন্য অনুবাদ করা যা আমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবে।

Using Emotional Intelligence Training in daily life - The Yellow Spot

আমরা যদি বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের দিকে নজর দেই তাহলে দেখবো এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা আবেগীয়-দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দলকে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আবার এর ব্যতিক্রমও আমরা দেখতে পাই যেখানে আবেগীয়-দক্ষতার অভাবে নেতৃত্বের স্থানে বসেও সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেতৃত্বের আসনে আসীন হওয়ার অর্থ হলো আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে যেমনঃ

  • সঠিক স্থানে সঠিক ব্যক্তিকে নির্ধারন করা।
  • কাজকে বিভিন্নভাগে ভেঙে ফেলা।
  • সঠিক ব্যক্তিকে কাজটি বা কাজগুলি বুঝিয়ে দেয়া।
  • সঠিক সময়ে কাজ ডেলিগেট করা।
  • কাজের অগ্রগতি অনুসরণ করা।
  • প্রতি মুহুর্তে কাজের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা।
  • সঠিক সময়ে কাজটি বা কাজগুলি বুঝে নেয়া।
  • সঠিক সময়ে কাজ এবং কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মূল্যায়ন করা।
  • কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মতামত প্রদান করা।
  • দলের ভেতর সমন্বয় সাধন করা এবং কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে সেটা আগেই চিহ্নিত করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান করা।
  • ভবিষ্যতকে বর্তমানে বসে পর্যালোচনা করা এবং সেই মতে সকলের সাথে আলোচনা করা।
  • কেউ পিছিয়ে পড়লে তাকে টেনে তুলে ধরে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া।

উপরের যে কাজ গুলোর কথা বলা হলো তার বাইরেও আরো অনেক কাজ একজন লীডারকে করতে হয়। এক কথায় নেতৃত্ব মানেই সিদ্ধান্ত গ্রহন। আসলে লীডার মূলত অভিভাবকের মতো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। আমার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লীডারকে প্রচুর পরিমানে শুনতে হয় সকলের কথা সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য। যে কেউ যে কোন সময়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে অথবা কোন একটি ক্যারিশম্যাটিক গুণের কারনে নেতৃত্বের আসনে উপবিষ্ট হতে পারেন। তখনই আসলে প্রকৃতপক্ষে আবেগী-দক্ষতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। আবেগী-দক্ষতার অভাবে উপরের যে কাজগুলোর কথা বললাম এবং শেষের দিকে শ্রবন করবার জন্য যে ধৈর্যের প্রয়োজন সেটা ব্যহত হয়। তখনই আমরা পক্ষপাতদুষ্ট নেতৃত্বের সাথে পরিচিত হই।

The Impact of Unconscious Bias on Leadership Decision Making ...

নেতৃত্বের নেতিবাচক পক্ষপাতিত্ব প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। অধিকাংশ সময় লীডার বুঝতেই পারেন না যে তিনি নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের স্বীকারে পরিনত হচ্ছেন। পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সচেতনতা একজন লীডারের জন্য অত্যন্ত জরুরী। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাঝে

  • সম্পর্কের অবনতি ঘটে,
  • অবিশ্বাস জন্ম নেয়,
  • অনমনীয়তা বৃদ্ধি পায়,
  • কাজের ভেতর স্থিরতা চলে আসে,
  • অসন্তোষ সহ আরো বিভিন্ন বিষয় দেখা দেয়।

নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই তবে পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা একজন লীডারকে সাহায্য করে যোগ্যকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে। আবেগীয় দক্ষতাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে নেতৃত্বের দুর্বলতাকে অন্য কেই ব্যবহার করতে পারবে না। প্রত্যেক লীডার যদি আবেগীয় দক্ষতাকে প্রকৃতভাবে অনুশীলন করতে পারে এবং নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে তাহলেই কর্মক্ষেত্রে

  • বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের মাঝে সহযোগিতা বেড়ে যাবে,
  • নমনীয়তা পরিলক্ষীত হবে,
  • প্রগতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের টার্নওভার কমে যাবে,
  • উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে,
  • কর্মীদের মাঝে অভিযোগ কমে যাবে, যার ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টিও বৃদ্ধি পাবে।

লীডারশীপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মূল্যায়ন এবং এর উপরই নির্ভর করে অগ্রগতি। কিন্তু আবেগীয় দক্ষতার অভাবে নেতিবাচক পক্ষপাতিত্বের স্বীকার হয়ে যেটা যেভাবে দেখার কথা সেটা সেভাবে না দেখে অন্যভাবে দেখা শুরু হয়। সমস্যাটা হয় এখানেই। আমি কতটুকু বোঝাতে পেরেছি আমার এই ব্লগ থেকে সেটি বলতে পারবো না তবে নেতিবাচক পক্ষপাতিত্ব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। না হলে সঠিকভাবে মূল্যায়ন কোনভাবেই সম্ভব হবে না।


লেখকঃ

কে এম হাসান রিপন,

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

AHA Blog2

Become Cultured Working in Remote Workstation

The forward-thinking /future-focused organizations have already taken the initiative of the home office using the technology and struggling to fit in the pandemic situation. It is such a sudden challenge for which the organizations and employees were not at all ready and they had to face it without any notice. So the employees faced two challenges together:

  • Ensuring productivity using technology
  • To fit with the new Working Environment

While facing the above challenges, the management has to identify the solution for the following:

  • How to Help
  • Where to Help
  • Believing that Employees really need the Help

The following points may help the organizations to go forward:

  • First of all, organizations need to help the employees to develop the mindset of the home office.
  • Give the training on the implemented solution
  • Helping them to set an environment of office tasks.

Also, organizations need to develop a trust culture among the employees.

Employees also face the following challenges:

  • Maintaining productivity
  • Fitting themselves in the working environment

It is true that the pandemic situation will be over but the organizations which will be able to survive during this period will have a great advancement in the future.  The employees can take the following measures to stay safe from any threats in their professional life:

  • Should take training on home office operation tools
  • Try to be positive
  • Give a break on daily routines
  • Develop more bonds with coworkers
  • Should know the effective use of Smartphones
  • Should Know Proper Use of Social Media
  • Should develop the soft skills which will help them to tackle environmental challenges
  • Should Know the recommended documentation process of the organizations
  • New CRM tools
  • Should have the ability to ensure the productivity tackling the issues at home office cultures.
  • Timely reporting on work progress
  • Visibility on recommended channels
  • Upgrading knowledge of relevant industries

Most importantly effective communication with the management through the prescribed channels would make a huge impact on employee’s performance.

 

Author

Amena Hasan, Sr. Assistant Director, Daffodil International University

And also a creative content developer and working as a Business Communication Expert. Currently, she is holding the office of the national president of CYFI, Google Educators Group (Dhaka).

New Normal

“নিউ নরমাল” কর্ম বা কর্মক্ষেত্রের রুপ কেমন হতে পারে!

গত দু-মাস ধরে দুটি শব্দ বার বার শুনছি ”নিউ নরমাল”। গুগলকে প্রশ্ন করতেই সে জানালো এর আগেও এই শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সালে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা গ্রাস করেছিল প্রায় পুরো বিশ্বকে। তখন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ”নিউ নরমাল” শব্দ দুটি সংযুক্ত করেছিলেন মন্দা পরতর্তী ব্যবস্থাপনা নির্ধারন করতে গিয়ে। বর্তমানের এই কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট মহামারীতে যখন সমগ্র বিশ্ব আক্রান্ত তখন আরেকবার আমাদের সামনে এসে দাড়িয়েছে ”নিউ নরমাল“। অতীতে যে বিষয়গুলো অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হতো সেটাই যখন দৈনন্দিন কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে নিয়মে পরিনত হয় তখনই সেটাকে বলা যায় ”নিউ নরমান”। তবে সময় যত সামনের দিকে এগিয়ে যায় ”নিউ নরমাল” তত দ্রুত “নরমালে” পরিনত হয়। এক সময় মা’র কাছে শুনেছি আমার বাবা কোথাও বেশী দিনের জন্য গেলে চিঠি লিখে জানাতেন ”আমি ঠিক মতো পৌছেছি”। তারপর চিঠির পরিবর্তে এলো ল্যান্ডফোন, পুরো সিস্টেম পাল্টে গেলো। তখন বাড়িতে ফোন করে জানাতেন ”আমি ঠিক মতো পৌছেছি”। এখন কোথাও গেলে বাসা থেকে কিছুক্ষন পর পর ফোন আসে “এখন কোথায়”। এর মাঝে আবার টেলিগ্রামের সাথে মানুষের পরিচয় হয়। যেহেতু চিঠি পৌছুতে সময় নিতো প্রায় একমাস (কখনো কখনো), তাই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে টেলিগ্রাম আসতো “Father Sick, Come Early”। পরবর্তীতে যার রুপান্তর আমরা দেখতে পাই এসএমএস (Short Message Service)

শুনেছি প্রথম শিল্প বিপ্লবের পর যখন শিল্পায়নের যুগ শুরু হলো তখন কারখানা থেকে একদল কর্মী নিয়োগ দেয়া হতো শ্রমিকদের ঘুম থেকে উঠাবার জন্য। পরবর্তীতে অ্যালার্মঘড়ি আসার পর তখনকার নরমাল হয়ে গেলো নিউ নরমাল এবং কিছু মানুষ হয়ে গেলো বেকার আর কিছু মানুষের হলো কর্ম পরিবর্তন। মানুষের মধ্যে একটি দল আছে যাদের সমগ্র জীবনের প্রচেষ্টাই হলো যে কোনভাবেই হোক নরমালকে চ্যালেঞ্জ করা। আবার অন্যদলের কাজ হচ্ছে যেকোন ভাবেই হোক নরমাল কে আকড়ে ধরে থাকা এবং স্বাভাবিকভাবে নরমাল কে আকড়ে ধরে থাকা মানুষদেরই বিজয় হয় (কিছুদিনের জন্য) যদি না প্রাকৃতিকভাবে কোন বিপর্যয় এসে উপস্থিত না হয়। একটি আর্টিক্যালে পড়েছি একসময় প্লেগের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে বিজ্ঞানী নিউটন কোয়ারেন্টিনে চলে যান তার গ্রামের বাড়িতে এবং কোন একদিন দুপুরের খাবারের পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আপেল গাছের নিচে আর তখনই তার মাথার উপর পড়ে একটি বড় আপেল এবং আমরা পেয়ে যাই নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র (সঠিক কিনা জানি না তাও উল্লেখ করলাম, আপনারা গুগল ঘেটে বের করতে পারেন চাইলে)।

What's Ecommerce's New Normal? Become a Future Leader

বর্তমানে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারনে আমাদের সামনে আবার উপস্থিত হয়েছে ”নিউ নরমান” যার মানে হচ্ছে স্বাভাবিক বা গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচলনা করা (সেটা মন থেকে হোক বা মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হোক)। আমাদের সবারই প্রয়োজনের স্বার্থে মেনে নিতে হচ্ছে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় একবার যেটি অভ্যাসে পরিনত হয় তা পুনরায় না করাটা কষ্টের। মানে হচ্ছে নতুন নিয়মে যা করে আসছি সেটা হয়তো সম্পূর্ন পরিবর্তন নাও হতে পারে।

মার্চের শুরুর দিকে আমরা বুঝতে শুরু করি এতোদিন যেভাবে স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে এসেছি সেটা পাল্টে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন দেশের প্রফেশনালদের দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েবইনারে আমরা অংশ নিয়েছি কিন্তু সেই ওয়েবইনার যখন আমাদেরই করতে হচ্ছে এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই তখন ব্যাপারটি প্রথম দিকে ছিল অবাক করার মতো। তার চেয়ে বড় কথা যারা ”পারি না” বা ”হবে না” বলে নিশ্চিত ছিলেন তাদেরও দেখতে পাচ্ছি স্বাচ্ছ্যন্দে অনলাইনের সাথে মিশে গেছেন। এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন অনলাইন ইন্টারেক্টিভ মিটিং টুলস যেমন গুগল মিট, জুম, গো-টু-মিটিং, গো-টু-ওয়েবইনার, ওয়েবএক্স, মাইক্রসফ্ট মিটিং, স্ট্রিমইয়ার্ড, বি-স্ট্রিম, বি-লাইভ বা বিগ-ব্লু-বাটন ইত্যাদি ভার্চৃয়াল মিটিং প্লেসের সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছি। জব বা প্রজেক্ট ট্রাকিং হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কাস্টমার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে ভার্চুয়ালী, এইচআর ব্যবস্থাপনা হচ্ছে প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে। এ সকল অনলাইন ইন্টারেক্টিভ টুলসগুলোই আসলে নিউ নরমাল টুলস হিসেবে আমাদের সামনের দিনে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য বিষয় হয়ে দাড়াবে।

How to run a productive virtual meeting - Ideas

৪ মাস আগেও বাংলাদেশে ই-কমার্স বা ই-বিজনেস ছিল সৌখিনতা আজ তা বাস্তবতা। ৪ মাসে আগেও ভার্চুয়ার অফিস বা হোম অফিস ছিলো ”ভালো একটি ব্লগ পড়বার জন্য” কিন্তু এখন তা বাস্তবতা। অনেকে ইতিমধ্যেই চিন্তা করা শুরু করেছেন কি দরকার এতো টাকা খরচ করে অফিস ভাড়া নেবার। প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে শেয়ারিং অফিস বা শেয়ারিং ওয়ার্কস্টেশন হতে পারে একটি কার্যকরি সল্যুশন। হয়তো এমন হবে পাঁচতলা ভবনে ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যেখানে শুধুমাত্র জরুরী কিছু কাজের জন্য আসা হবে।

আমি চিন্তা করছিলাম যে কি কি কারনে আমরা অফিসে একসাথে বসে কাজ করি। বড় একটি লিষ্ট আমার সামনে চলে আসলো। আমরা সাধারনত অফিসে যে কাজগুলো করি তা হলোঃ

  • রেজিস্ট্রি খাতায় নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করি যার ভিত্তিতে বেতন নির্ধারিত হয়।
  • অফিসিয়াল ইমেল করি অফিসে বসে
  • সভা বা আলোচনায় অংশ নেই
  • নথিপত্র ঠিক করি এবং সংরক্ষণ করি
  • কাজের ট্র্যাকিং করি
  • চাকরীর জন্য সাক্ষাৎকার নেই বা দেই
  • কর্মীদের বার্ষিক মূল্যায়ন করি
  • গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন করি
  • কাজের প্রতিবেদন তৈরি করি এবং জমা দেই
  • আর্থিক হিসাব-নিকাশ করি
  • প্রস্তাবনা খসড়া তৈরি করি এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেই
  • প্রচারমূলক কনটেন্ট তৈরি করি
  • সোস্যাল মিডিয়া পরিচালনা করি
  • অনুষ্ঠান আয়োজন করি
  • এইচআর ক্রিয়াকলাপ করি
  • পণ্য / পরিষেবা সমীক্ষা করি ইত্যাদি।

এর বাইরেও আরো অনেক কিছু তালিকায় আসতে পারে। গতানুগতিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে উপরের কাজগুলো ম্যানুয়ালি করতে হবে কারন অনলাইনে সবগুলোকে নিয়ে আসতে গেলে প্রয়োজন হবে সফ্টওয়্যার, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা, স্টোরেজ সহ বিভিন্ন কিছুর। আমার নিজের বিশ্বাসও ছিল তাই। আমি এই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছি এবং বিভিন্ন উন্নত দেশে এর প্রয়োগও দেখেছি কিন্তু এই প্যান্ডেমিকের ভেতর আমি এবং আমার পুরো টিম ব্যবহার করলাম “ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিস”। আপনারা যারা আমার আর্টিক্যাল পড়ছেন তারা চাইলেই ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারদের সম্পর্কে গুগলের মাধ্যমে ধারনা নিতে পারেন।

Virtual meetings: TrueConf -

একটা সময় ধারনা করা হতো যে আপনার পুরো অফিসের কার্যক্রম প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে গেলে সম্ভবত অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং যেটি একটি সময় পর্যন্ত বাস্তবতা ছিল। যাকে আমরা বলতাম On Premises Software (On Prem)” মানে সফ্টওয়্যার যার সাথে আপনার ম্যানেজ করতে হবে হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, নিরাপত্তা, স্টোরেজ সবকিছু। প্রয়োজন হতো মোটা অংকের বিনিয়োগ, লোকবল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার। সাধারন ভাষায় বললে আপনার বাড়িতে আপনিই খাবার তৈরি করে খাবেন তার পর নিজেই সংরক্ষন করবেন। তখন আমরা ভাবলাম এতো ঝামেলাতে না গিয়ে ম্যানুয়ালী অপারেশনই ভালো। গ্লোবালী বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করলেন “Infrastructure As A Service (IAAS)” যার মানে হলো সফ্টওয়্যার আপনার, হার্ডওয়্যার অন্যের। এখানে কিছু মানুষ আগ্রহী হলেন কারন বিনিয়োগের পরিমান কমে গেলো এবং নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত হলো। সহজভাবে বললে বাইরে থেকে রেডী ফুড এনে ঘরে গরম করে খাওয়া। এরপরও পরোপুরী ম্যানুয়াল অপারেশন থেকে বের হতে পারিনি। এবার বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করে বের করলেন “Platform as a Service (PAAS)” মানে হলো আপনার বাড়িতে শুধু ডাইনিং টেবিল এবং পানি থাকলেই হলো, বাকিটা সব ভেন্ডরের (ফুডপান্ডা থেকে বার্গার চলে আসার মতো বিষয়)। চতুর্থ শিপ্ল বিপ্লবের অন্যতম একটি বড় বিষয় হচ্ছে অগ্রগামীতা। মানুষ প্রতিনিয়ত চিন্তা করে বের করছেন আরো কিভাবে সহজ করা যায় ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত দৈনন্দিন কার্যক্রম। কারন আমাদের সামনে আছে প্রযুক্তি। আমাদের সামনে চলে আসলো “Software As A Service (SAAS পদ্ধতি)” যেটি সত্যিকার অর্থে আমাদের অনলাইন বা ভার্চুয়াল অফিসের স্বাদ দিচ্ছে। সহজ ভাষায় খাবার খাচ্ছি কিন্তু লোকেশন মূখ্য নয়। উদাহরন স্বরুপ ISP (Internet Service Provider), ব্যবহারের উপর ব্যান্ডউইথ চার্য দিচ্চেন।

Definitive Guide to Understanding IaaS, PaaS, and SaaS | Super Admins

ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিসের স্বাদ আমরা যারা অগ্রগামীতাকে অনুশীলন করছি তারা সত্যিকার অর্থে পেতে শুরু করেছি। যেখানে কর্মীরা তাদের ঘরে বসেই নিশ্চিত করছেন টিমওর্য়াকের মাধ্যমে কোয়ালিটি ওয়ার্কস। টিম লীডার জানতে পারছেন প্রতিষ্ঠানে কার অবস্থান কোন পর্যায় এবং কর্মী তার নিজের মাসিক আমলনামা নিজেই বিবেচনা করতে পারছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

Cloud Solutions - InBuilding

আগামী ‍দিনের ব্যবসা হবে আরো গতিসম্পন্ন যেখানে দৈহিক উপস্থিতি মূখ্য হবে না। অধিকাংশ পদ বা পদবীর সাথে যুক্ত হবে ভার্চুয়াল শব্দটি। বেকারত্বের হার হ্রাস পাবে কারন ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে যে কেউ যেকোন জায়গা থেকে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবেন। হয়তো একজন মানুষ দৈনিক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করবেন। মেধা ভিত্তিক কাজ বৃদ্ধি পাবে, শ্রমের মূল্য বেড়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত যদি তুলে ধরি তাহলে বলবো নিউ নরমালে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা টিকে থাকবে এবং কারা ঝড়ে পড়বে। নিঃসন্দেহে ”হবে না’র তালিকা বড় কিন্তু অগ্রগামী ব্যবসা বা মানুষের কাছে হবে’র তালিকা তার চেয়েও বড়। তবে এখানে ইমোশনের জায়গাটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে যেহেতু দৈহিক উপস্থিতি হচ্ছে না। তাই বাস্তবতা এবং আবেগের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা বাড়তে থাকবে।

সবশেষে বলবো নিউ নরমাল অনিবার্যই ছিল তবে কোভিড-১৯ এর গতি বৃদ্ধি করেছে। তাই নিউ নরমাল কে নিয়ে ট্রল নয় বরং বাস্তবতার আলোকে আমি কিভাবে আলিঙ্গন করবো তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। হতে পারে আগামীকালই আমার অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জকে আমাকে মোকাবেলা করতে হবে।

(বি:দ্রঃ ক্লাউড ভিত্তিক অনলাইন অফিস বিষয়ে আরো অনেক বিষয় উল্লেখ করা যায় তবে আর বাড়াতে চাচ্ছি না। যদি কারো আগ্রহ থাকে আমার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি বিনামূল্যে সহযোগীতা করবো।)

 

লেখকঃ কে এম হাসান রিপন,

প্রতিষ্ঠাতা, 1.40 Knowledge Initiative এবং নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

ফোনঃ ০১৭১৩৪৯৩২06 | ইমেইলঃ [email protected]

How to remain happy in Life

How to remain HAPPY in Life

Defining Happiness in the general sense is easy, most of the time we tend to give attention to the thing that we want or crave for long to win it. To measure Happiness, we need to define it first but the definition also varies from person to person and ages. To a kid, happiness means chocolate, to a teen it means to get a book or bi-cycle, to a young man/woman, it means to get admission in the desired subject, to get a job after student life or to get a car/beautiful home, etc. To others, it may be living a healthy or hassles free life is called happiness. For some people, it means destroying everything. Also the definition of happiness changes as we grow old. The song which sounds to me like an annoying chorus that is the melody to a today’s kid. Also, the Nobel Prize-winning psychologist defined it happiness with four levels: Subjective, Genetic, Emotional, and Senses. But in every case, sustainability or wellness is attached and the actual happiness is proved to have in giving back to family/society/community. Happiness is no longer a feeling rather it is shown as a practice (Practice makes Perfect). Remaining happy is art or challenge to all of us. Also, we have three brains:

  • REPTILE Brain: Reptile Brain is for basic stuff. For example, the stress we can fight, flight, or freeze, in happiness we smile.
  • MAMMAL Brain: It is for emotions, as we help one another, show anger to other people, helping one another.
  • HUMAN Brain: Basically it gives us insight, cooperation, discovering, increase of intelligence.

Triune Brain: The Reptilian, Mammalian and Neo-Cortex

Our Brains always grow; whichever part we nurture it will grow. So happiness is a choice also. In a minute we have the choice of becoming happy or anger and if we show anger we are exactly loosing 60 seconds time from our life. It is connected with the feeling of Self Satisfaction as well. It is to do the best that we can do by exploring our full potential. Also, happiness comes by focusing on what we have not on what we do not have. Since life is a journey, not the destination that we always think of, and here every moment is a gift for us all and a great attitude can always lead to a great experience. Do we really smile when we see someone? Or we do wait until a smile comes from another person? We have to exchange a smile and it is a choice for us all.

To remain happy in life it takes just a few things to consider-

  • Be simple & Be Grateful
  • Focus on what you can give not on what you deserve to take
  • Whatever you do, give your 100%, own it
  • Be honest so that you don’t need to tell lie to hide anything
  • Believe in Integrity, Care others, be with family

Accept the truth that life is all about winning and losing. True Fact is that happiness will not come from the advice that we receive from others. We know ourselves and we know our limitations and potentiality. We have to find it from us. As a whole, happiness is a person’s own choice, to make life happy or sad by his own acts. So I want to conclude with the question “Are you happy wherever you are now?”

Enjoy the song….

Author

Mr. K M Hasan Ripon, Writer, Public Speaker, Skill Development Activist for Industry 4.0 | Soft Skills | Entrepreneurship Development

All Photo credit by: www.freepik.com