Orange White Modern Daily Podcast YouTube Thumbnail

৯০ দিনের স্মার্ট চ্যালেঞ্জঃ ৭টি টিপস মেনে চলুন ২০২৫ সালকে সাফল্যময় করতে

২০২৫ সালকে আপনার ক্যারিয়ারের সেরা বছর বানাতে আপনি কি প্রস্তুত? চলুন একটি ৯০ দিনের স্মার্ট চ্যালেঞ্জ নিই যা আপনার পেশাগত পরিধি, খ্যাতি, আয় এবং সঞ্চয় বাড়াতে সাহায্য করবে। এই তিনটি মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সঠিক পরিকল্পনা আপনার পুরো বছরের পথ নির্ধারণ করে দিতে পারে।

আমি ৭টি সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ উল্লেখ করছি, যা আপনি ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে বাস্তবায়ন করতে পারেন:


১. পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারন করুন (প্রথম দিন থেকেই শুরু করুন)

কোনো কিছু করার আগে, সময় নিয়ে নিজের জন্য একটি পরিষ্কার এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য ঠিক করুন। ২০২৫ সালে আপনি কী অর্জন করতে চান? ক্যারিয়ার, খ্যাতি এবং আর্থিক লক্ষ্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট হোন।

  • লক্ষ্য লিখুন: যেমন, আপনার লিংকডইনে ১0০০ নতুন কানেকশন তৈরি করুন, আয়ের ১০% সঞ্চয় করুন, বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন।
  • লক্ষ্যকে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করে নিন: আপনার পুরো বছরের লক্ষ্য ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে নিন।

“আপনি যখন জানেন কোথায় যেতে চান, তখন প্রতিটি পদক্ষেপ অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।”


২. আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডকে উন্নত করুন

আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড মানে অন্যরা আপনাকে পেশাগতভাবে কীভাবে দেখে। এখন থেকেই আপনার ব্র্যান্ড এমনভাবে গড়ে তুলুন, যা আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

  • লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করুন: সাম্প্রতিক অর্জন, দক্ষতা এবং সার্টিফিকেশন যোগ করুন।
  • জ্ঞান শেয়ার করুন: সপ্তাহে একবার ব্লগ বা ভিডিও বা আর্টিকেল পোস্ট করে আপনার দক্ষতা প্রদর্শন করুন।
  • সক্রিয় নেটওয়ার্কিং করুন: ইন্ডাস্ট্রি-সম্পর্কিত গ্রুপে যোগ দিন বা ইভেন্টে অংশ নিন (ভার্চুয়াল হলেও)।

“আপনার খ্যাতি হলো আপনার ক্যারিয়ারের মুদ্রা—এটিকে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করুন।”


৩. চাহিদাসম্পন্ন একটি দক্ষতা শিখুন

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে বা যে বিষয়ে আপনার বেশী আগ্রহ, এমন একটি চাহিদাসম্পন্ন নতুন দক্ষতা যোগ করার জন্য এটিই সেরা সময়।

  • দক্ষতা নির্ধারণ করুন: এটি হতে পারে ডাটা অ্যানালাইসিস, পাবলিক স্পিকিং, বা অ্যাডভান্সড এক্সেল।
  • অনলাইন কোর্স করুন: কোর্সেরা Coursera), উদেমি (Udemy), Goedu.ac বা লিংকডইন লার্নিং-এর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত শিখতে পারেন।
  • প্র্যাকটিস শুরু করুন: ৯০ দিনের মধ্যে শিখে তা আপনার কাজ বা সাইড প্রজেক্টে প্রয়োগ করুন।

“আপনার যত বেশি দক্ষতা থাকবে, আপনি তত বেশি মূল্যবান হয়ে উঠবেন।”


৪. আয়ের নতুন উৎস তৈরি করুন

আপনার আয় বাড়াতে হলে চাকরির পাশাপাশি কোন আরেকটি সাইড ইনকাম বা প্যাসিভ আয়ের অপশনগুলো অনুসন্ধান করুন।

  • ফ্রিল্যান্স করুন: আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো প্ল্যাটফর্মে আপনার দক্ষতা অফার করুন।
  • দক্ষতাকে অর্থে রূপান্তর করুন: শেখানো বা কনসালটিং শুরু করুন।
  • স্মার্ট ইনভেস্ট করুন: বিনিয়োগ অপশন খুঁজুন।

“আয়ের বৈচিত্র্য শুধু স্মার্ট নয়—এটি আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়।”


৫. ব্যয় ট্র্যাক করুন এবং সঞ্চয় শুরু করুন

আপনার আর্থিক উন্নয়ন নির্ভর করে আপনি কীভাবে অর্থ পরিচালনা করছেন তার উপর। এই তিন মাসে আপনার ফিনান্স ঠিক করতে কাজ শুরু করুন।

  • একটি বাজেট তৈরি করুন: আপনার মাসিক আয় এবং ব্যয়ের তালিকা করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান: এমন জিনিসে খরচ সীমিত করুন, যা খুব একটা মূল্য যোগ করে না।
  • স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় শুরু করুন: আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রতি মাসে সঞ্চয়ে রাখুন।

“কত উপার্জন করেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কতটুকু রাখতে পারেন তা গুরুত্বপূর্ণ।”


৬. একজন মেন্টর বা অ্যাকাউন্টেবিলিটি পার্টনার খুঁজুন

কেউ আপনাকে গাইড করলে বা আপনার কার্যক্রমের দায়িত্ব নিলে, আপনার ক্যারিয়ার দ্রুত এগিয়ে যায়।

  • মেন্টর খুঁজুন: আপনার ক্ষেত্রে যাকে আপনি অনুকরণ করেন, তার কাছে পরামর্শ চান।
  • অ্যাকাউন্টেবিলিটি তৈরি করুন: সহকর্মী বা বন্ধুর সাথে একে অপরের অগ্রগতি নিয়মিত চেক করুন।
  • একটি গ্রুপে যোগ দিন: একই লক্ষ্য থাকা একটি গ্রুপে যোগ দিন।

“যখন কেউ আপনাকে গাইড করে বা উৎসাহ দেয়, তখন সফল হওয়া সহজ হয়।”


৭. প্রতি মাসে পর্যালোচনা এবং সমন্বয় করুন

প্রতি মাসের শেষে কিছু সময় নিয়ে আপনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন।

  • জয় উদযাপন করুন: ছোট হলেও আপনার অর্জনগুলোকে আপনি নিজেই স্বীকৃতি দিন।
  • ভুল বিশ্লেষণ করুন: কী কাজ করেনি এবং কেন তা বুঝুন।
  • পরিকল্পনা সামঞ্জস্য করুন: আপনার শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী মাসের পরিকল্পনা সংশোধন করুন।

“পর্যালোচনা অভিজ্ঞতাকে জ্ঞানে পরিণত করে।”


২০২৫ সালকে স্মার্টভাবে শুরু করুন

২০২৫ সালের প্রথম ৯০ দিন আপনার পেশাগত উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারে। পরিষ্কার লক্ষ্য, ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, আর্থিক শৃঙ্খলা এবং নতুন দক্ষতা শেখার উপর ফোকাস করলে আপনি আপনার পরিধি, খ্যাতি এবং আয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।

আপনি কি এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত? আসুন, ২০২৫-কে উন্নয়ন এবং সফলতার বছর বানাই!

📧 ক্যারিয়ার কোচিং বা পেশাগত প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করুন: [email protected] 🚀 আমরা একসাথে আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করব!

Blog Banner for Website Content (1)

কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানোর ১০টি কৌশল

চাকরি পাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হলো চাকরিটিকে দীর্ঘ সময় ধরে টিকিয়ে রাখা। অনেকেই মনে করেন চাকরি পেয়ে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, চাকরি ধরে রাখতে প্রয়োজন আরও দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, এবং সঠিক কৌশল। যে যত দ্রুত এই বিষয়টি উপলব্ধি করবে, সে তত দ্রুত কর্মজীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

নিচে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হলো, যা চাকরি টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে:

দক্ষতা উন্নয়ন (Skill Development): এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৭% নিয়োগকর্তা মনে করেন কর্মীরা যদি নিয়মিতভাবে নতুন দক্ষতা শেখে, তাহলে তাদের চাকরি দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা সহজ হয়। নতুন প্রযুক্তি এবং জ্ঞান আয়ত্ত করার জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হবে। উদাহরণ: এক কর্মী নিয়মিত নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা শিখছে এবং এটি তার কোম্পানিতে নতুন প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই দক্ষতা তাকে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills): কর্মক্ষেত্রে ৯০% সমস্যা দুর্বল যোগাযোগের কারণে হয়। স্পষ্ট, সঠিক এবং যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারা কর্মস্থলে দীর্ঘস্থায়ী সফলতার চাবিকাঠি। উদাহরণ: এক কর্মী মিটিংয়ে তার আইডিয়া পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করে এবং সহকর্মীদের সঠিকভাবে নির্দেশনা দেয়, যার ফলে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা (Time Management): ৮৯% কর্মচারী সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে চাকরির ঝুঁকির মুখে পড়ে। সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা এবং সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো পেশাগত সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণ: এক কর্মী তার কাজের সময়সূচী অনুযায়ী প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে টাস্কগুলো সম্পন্ন করে, যা তাকে সময়মতো ডেডলাইন মেনে কাজ শেষ করতে সাহায্য করে।

সহনশীলতা (Adaptability): দ্রুত পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারার ক্ষমতা কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সফলতার জন্য অপরিহার্য। ৭৫% প্রতিষ্ঠান এমন কর্মীদের মূল্য দেয় যারা দ্রুত পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। উদাহরণ: কোম্পানি হঠাৎ নতুন সফটওয়্যারে রূপান্তর করল। কর্মীটি দ্রুত নতুন সফটওয়্যারটি শিখে নিয়েছে এবং নিজের কাজের দক্ষতা ধরে রেখেছে, যেখানে অন্যরা পিছিয়ে পড়েছিল।

দলগত কাজ (Teamwork): একক কাজের চেয়ে দলগত কাজ ৩০% বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। সঠিকভাবে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন দ্রুত হয়। উদাহরণ: এক কর্মী তার সহকর্মীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করছে এবং তাদের সহায়তায় প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তার দলগত কাজের দক্ষতাকে নিয়োগকর্তা প্রশংসা করেছে।

নেতৃত্বের গুণাবলী (Leadership Qualities): নেতৃত্ব প্রদর্শনের ক্ষমতা একজন কর্মীর পদোন্নতি ৬৫% পর্যন্ত দ্রুত করে। সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী একজনকে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য করে তোলে। উদাহরণ: একটি জটিল প্রকল্পে এক কর্মী নিজে থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে পুরো দলের মধ্যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং সফলভাবে প্রকল্পটি সম্পন্ন করেছে। এই নেতৃত্বের জন্য তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-Solving Skills): ৭০% নিয়োগকর্তা এমন কর্মী চান যারা সমস্যা সমাধানে দক্ষ। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কর্মস্থলে অমূল্য। উদাহরণ: এক কর্মী প্রকল্পের মাঝপথে প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করার নতুন উপায় বের করেছে, যা কোম্পানির জন্য সময় এবং অর্থ উভয়ই সাশ্রয় করেছে।

 আত্মবিশ্বাস (Confidence): আত্মবিশ্বাসী কর্মীরা প্রায় ৬০% ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী হয়। সঠিক আত্মবিশ্বাস কর্মক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক। উদাহরণ: মিটিংয়ে এক কর্মী নতুন আইডিয়া উপস্থাপন করে যা কোম্পানির জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে। তার আত্মবিশ্বাস তাকে অন্যদের সামনে বিশিষ্ট করে তুলেছে।

 ফিডব্যাক গ্রহণ (Receiving Feedback): নিয়মিত ফিডব্যাক গ্রহণ করে তা থেকে শেখার মনোভাব কর্মজীবনে উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কর্মদক্ষতা ৫০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ: এক কর্মী নিয়মিত তার সুপারভাইজারের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে নিজের ভুলগুলো সংশোধন করেছে এবং পরবর্তীতে তার কাজের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

নেটওয়ার্কিং (Networking): নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে ৮৫% চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। ভালো নেটওয়ার্ক থাকার ফলে ক্যারিয়ারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়। উদাহরণ: এক কর্মী ইন্ডাস্ট্রি কনফারেন্সে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে, যেখানে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন, যার মাধ্যমে তিনি একটি বড় ক্লায়েন্টের সাথে চুক্তি করতে সক্ষম হন।

উপসংহার: চাকরি টিকিয়ে রাখা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সঠিক দক্ষতা এবং পরিকল্পনা থাকলে এটি সহজ হয়ে যায়। উপরের ১০টি পয়েন্ট অনুসরণ করলে কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

Blue Dark Professional Geometric Business Project Presentation

প্রবাসীদের সম্মান একটি জাতীয় দায়িত্ব


আমি যখনই মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, বা মালয়েশিয়া ভ্রমণ করি, তখন প্রায়ই সেইসব নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করি, যারা আমাদের বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেন। তাদের কাছ থেকে যে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া আমি পেয়েছি তা হলো, আমাদের বাংলাদেশি মানুষদের অত্যন্ত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা খুব দ্রুত নতুন ভাষা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়, তা আরবি হোক, মালয় ভাষা বা ইংরেজি। নিয়োগকর্তারা আরও জানান যে, যদিও বেশিরভাগ বাংলাদেশি কর্মীরা কম বা কোনো দক্ষতা ছাড়াই বিদেশে যান, তবে তারা খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা প্রায়ই বলি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির অক্সিজেন। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠাচ্ছে। কিন্তু বিনিময়ে আমরা তাদের জন্য তেমন কিছুই করি না। আমি মনে করি, আমরা আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রদর্শন করি না। যখনই আমি বিদেশে ভ্রমণের জন্য বিমানবন্দরে যাই, তখন প্রায়ই দেখি আমাদের প্রবাসী ভাইদের অসহায়ত্ব। তাদের প্রতি বিমানবন্দরে সামান্য মমতাও লক্ষ্য করা যায় না।

একটি ছেলে যখন প্রথমবারের জন্য বিদেশে পরিশ্রমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে, তখন থেকেই তার যন্ত্রণা শুরু হয়। বিমানবন্দরে বিশাল লাইন, আনসারদের দুর্ব্যবহার, বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় বিমানের টিকিট কাউন্টারের অসদাচরণ, ফর্ম ফিলাপের জটিলতা, ইমিগ্রেশন পুলিশের হয়রানি এবং বিমানে উঠতেই বিমানবালাদের অবজ্ঞা—এই সবই তাকে প্রথম ধাপেই হতাশ করে। কিছু যাত্রী তো এসব দেখে মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশিরা আদব কায়দা শিখলো না!” আর দালালের মিথ্যা প্রলোভনে তারা বিদেশের মাটিতে পা রাখার পরই শুরু হয় তাদের দুর্ভোগ।

২০২৩ সালে সৌদির রিয়াদ শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর হঠাৎ করেই দেখি, কোনো এক জটিলতায় আমার হোটেল বুকিং ক্যানসেল হয়ে গেছে, তখন সময় ছিল ভোর ৩টা। এক পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালককে বললাম আমাকে কোনো হোটেলে নিয়ে যেতে। হোটেলে পৌঁছানোর পর দেখি সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি জোরে ডাকলাম, তখন একজন বাংলাদেশি ভাই বেরিয়ে এলেন। আমি তাকে দেখেই বুঝতে পারলাম তিনি বাংলাদেশি, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন না যে আমি বাংলাদেশি। তিনি হিন্দিতে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী সমস্যা?” আমি তাকে বললাম, “ভাই, আপনি কি বাংলাদেশি?” তিনি বললেন, “জি, কুমিল্লার লোক। ১০ বছর ধরে রিয়াদে আছি।” এরপর তিনি এক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে অনেক সহায়তা করলেন এবং আমি যতদিন রিয়াদে ছিলাম, প্রতিদিনই আমার খোঁজ নিলেন এবং সাহায্য করলেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশিরা অনেকভাবে প্রতারিত হয়। এমন অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা একই ছাদের নিচে বছরের পর বছর আছেন, কিন্তু বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি ভাবলাম, পৃথিবীর যেসব দেশ রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল, তারা তাদের প্রবাসীদের জন্য কী ধরনের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে? কয়েকটি দেশের উদ্দ্যোগের চিত্রঃ

১. ফিলিপাইন:

ফিলিপাইন সরকার তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন সুরক্ষা এবং কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে। প্রবাসী ফিলিপিনো কর্মীদের (Overseas Filipino Workers) জন্য তারা “ওভারসিজ ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” (OWWA) গঠন করেছে। এই সংস্থা প্রবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বীমা, শিক্ষা, এবং পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে। এছাড়াও, প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সেবা প্রদান করা হয়।

 ২. ভারত:

ভারত সরকার প্রবাসীদের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। “প্রবासी ভারতীয় দিবস” (Pravasi Bharatiya Divas) উদযাপনের মাধ্যমে প্রবাসীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়া, ভারতীয় প্রবাসীদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করার জন্য “ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট ফান্ড” গঠন করা হয়েছে। প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা হয়।

৩. মেক্সিকো:

মেক্সিকো সরকার তাদের প্রবাসী নাগরিকদের কল্যাণের জন্য “ইন্সটিটিউট অব মেক্সিকানস অ্যাব্রড” (IME) গঠন করেছে। এই সংস্থা প্রবাসী মেক্সিকানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং আইনগত সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও, প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

৪. সিঙ্গাপুর:

সিঙ্গাপুর সরকার তাদের প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের জন্য বিশেষ বীমা এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, “ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড” (EDB) প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ এবং নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে।

৫. চীন:

চীন সরকার তাদের প্রবাসী নাগরিকদের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। “ওভারসিজ চাইনিজ অ্যাফেয়ার্স অফিস” (OCAO) প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে। এছাড়াও, প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ এবং ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করা হয়।

 

প্রবাসী ভাইদের উন্নয়নে আমার কিছু প্রস্তাবনা:

  •  প্রবাসী কল্যাণ ফান্ডের সম্প্রসারণ ও সেবা বৃদ্ধি: প্রবাসীদের কল্যাণে এবং জরুরি প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ফান্ডের আকার ও সেবার পরিধি বাড়ানো।
  • নতুন উদ্যোগ ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি: প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে বিশেষ সুবিধা ও প্রণোদনা প্রদান।
  • বীমা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা: প্রবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা সহ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যাতে বিদেশে অবস্থানকালে তারা নিরাপদ বোধ করে।
  • প্রবাসী উদ্যোক্তা নেটওয়ার্ক গঠন: প্রবাসী উদ্যোক্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে এবং যৌথভাবে কাজ করার জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
  • গ্লোবাল বাংলাদেশি বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা: বিশ্বজুড়ে থাকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যা ব্যবসায়িক সুযোগ ও বিনিয়োগকে প্রসারিত করবে।
  • প্রবাসীদের দক্ষতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগানো: প্রবাসীদের অর্জিত দক্ষতা ও জ্ঞানকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা।
  • বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ: প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ, দ্রুত এবং সাশ্রয়ী করতে ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্স সেবার উন্নতি করা।
  • রেমিট্যান্সের জন্য বিশেষ ইনসেন্টিভ প্রদান: প্রবাসীদের আরও রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিশেষ বোনাস বা কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা।
  • প্রবাসীদের দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত করা: প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসার জন্য এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত করা।
  • ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন: দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের জন্য একটি বিশেষ ফান্ড তৈরি করা।
  • চিপ লেবার শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করা: প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাদেরকে “চিপ লেবার” হিসেবে অভিহিত করা বন্ধ করা এবং তাদের মর্যাদা বাড়ানো।
  • হাই ইনকাম নিশ্চিত করার জন্য কারিগরি দক্ষতা নিশ্চিত করা: প্রবাসী শ্রমিকদের উচ্চ আয়ের কাজে নিয়োগের জন্য কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
  • আরপিএল এবং আরসিসি এর সহজীকরণ ও প্রচার করা: প্রবাসীদের দক্ষতা স্বীকৃতি ও উন্নয়নে আরপিএল (Recognition of Prior Learning) এবং আরসিসি (Recognition of Current Competency) প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং প্রচার করা।
  • এয়ারপোর্টে আলাদা সেবা নিশ্চিত করা: প্রবাসীদের বিমানবন্দরে সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সেবা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা কাউন্টার ও দ্রুত সেবা ব্যবস্থা চালু করা।
  • প্রবাসী কার্ড প্রদান: প্রবাসীদের জন্য একটি বিশেষ কার্ড প্রদান করা, যার মাধ্যমে তারা ভিআইপি/সিআইপি সুবিধা ও মর্যাদা পেতে পারেন।

 

উপসংহার:

প্রবাসীরা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে যে বিশাল অবদান রাখছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমাদের উচিত তাদের উন্নয়নে আরও উদ্যোগী হওয়া। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি এবং সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা তাদের জীবনকে আরও সহজ এবং মর্যাদাপূর্ণ করতে পারি।

Red Marketing YouTube Thumbnail

দেশের স্বার্থ সবার আগেঃ বাংলাদেশ-সমর্থক নীতি

আমরা সবাই জাপানের উন্নয়নের গল্প মাঠে, ঘাটে, ক্লাসে আলাপ করতে পছন্দ করি। তাহলে আজকের লেখাটি ঐদেশের একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, জাপান পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। তবে জাতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ও নিজস্ব স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখার মানসিকতা থেকেই তারা দ্রুত পুনর্গঠনের পথে হাঁটে। দেশীয় প্রযুক্তি, শিল্প, এবং সংস্কৃতিকে বিকশিত করে জাপান নিজেদের বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী করে তোলে। জাপানের এই গল্প আমাদের শেখায় যে, যখন একটি জাতি নিজস্ব স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এবং একতাবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যায়, তখন তারা যেকোনো বিপর্যয় থেকে পুনর্জন্ম নিতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের জন্যও জাপানের এই প্রো-জাপানীজ নীতিই পথ নির্দেশক হতে পারে, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে।

 আমরা সবাই বিশ্বাস করি যে একটি জাতির অগ্রগতির মূল শক্তি হলো তার নিজস্ব স্বার্থের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা। আমি পৃথিবীর যত উন্নত দেশে গিয়েছি সেখানে দেখেছি কিভাবে তারা সবাই দেশের স্বার্থ সবার আগে” রেখে উন্নয়নের যাত্রা নির্ধারণ করে। “দেশের স্বার্থ সবার আগে” এই মূলমন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে আমরাও একটি প্রো-বাংলাদেশ (Pro-Bangladesh) নীতি গ্রহণ করতে পারি, যা আমাদেরকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। রাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি।

আমি অনেক বছর ধরেই ”প্রো-বাংলাদেশ” নিয়ে ব্যক্তিগত গবেষণা করছি। বিশদভাবে বর্ননার আগে চলুন একটু বোঝার চেষ্টা করি প্রো-বাংলাদেশের মূল উদ্দেশ্য কি? ”প্রো-বাংলাদেশ” হলো জাতীয় স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখা এবং বিদেশী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। আমরা জানি যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো নিজেদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যেমন আমেরিকা, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম এমনকি ভারত। আমাদেরকেও ঠিক একইভাবে নিজেদের স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

প্রো-বাংলাদেশ নীতি বা “দেশের স্বার্থ সবার আগে” নিয়ে আলোচনা করলে উদাহরণ হিসেবে ভিয়েতনামের নাম চলে আসবেই। ভিয়েতনাম তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ নীতিতে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনাম স্বাধীন ও বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যেখানে অন্যান্য দেশের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে এবং সবসময় জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা স্থানীয় শিল্প এবং স্বনির্ভরতাকে গুরুত্ব দেয়, যদিও বিদেশি বিনিয়োগকেও স্বাগত জানায়। এছাড়াও, জাতীয় ঐক্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় তারা জাতীয়তাবাদী নীতি প্রয়োগ করে। সার্বিকভাবে, প্রো-ভিয়েতনাম নীতির মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব এবং সংস্কৃতির সুরক্ষায় কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আমি মনে করি বাংলাদেশের ” প্রো-বাংলাদেশ” নীতিকে ঢেলে সাজাবার এখন সময় এসেছে যেখানে আমরা ৬টি বিষয়কে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দিতে পারি। যেমনঃ

১. অর্থনৈতিক দিক থেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়া প্রো-বাংলাদেশ নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হবে। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, একটি লোভনীয় ভৌগলিক অবস্থান আছে, কর্মক্ষম মানবসম্পদ আছে। আমরা আমাদের উৎপাদনশীলতার ওপর যদি একটু জোর দেই এবং “দেশের স্বার্থ সবার আগে” এই স্লোগানটিকে যদি মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আমার বিশ্বাস একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি আমরা গড়ে তুলতে পারবো। কয়েকটি জায়গায় আমাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে যেমনঃ

  • তরুণের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে আমাদের। এতে করে আমরা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে পারব। কোন একটি সভায় একজন গবেষক বলেছিলেন বিদেশ থেকে তৈরি পন্য শুধু আমদানী করা হয় না বরং সাথে বেকারত্ত্বকেও আমদানী করা হয়।
  • দুর্ভাগ্যবশত আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি দেশী পন্য কিনে হন ধন্য্। এটি সম্ভবত বিজ্ঞাপনের প্রচার বার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমাদের দেশীয় পণ্য ও সেবাকে প্রাধান্য দিয়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ” ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে হবে, যাতে দেশের মানুষ দেশীয় পণ্য কেনার প্রতি উৎসাহিত হয়।
  • আমাদের উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়।

২. আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের মনোভাব প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে, যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শক্তি যোগাবে। স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পর, এখন সময় এসেছে স্বাধীনতায় প্রত্যেকের অবদানের সঠিক উপস্থাপন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় দেশপ্রেম ও নৈতিকতা অন্তর্ভুক্ত করার। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে আমরা বিশ্বে আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারি।

৩. আমাদের দেশের রাজনীতিতে প্রো-বাংলাদেশের চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে দেশে মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চার অভাব রয়েছে, এবং তরুণরা রাজনীতিকে শুধুমাত্র দলভিত্তিক কার্যক্রম, সভা, সেমিনার, মিছিল, হরতাল হিসেবে দেখে। এ কারণে তারা রাজনীতিকে ঝামেলা মনে করে এবং বলে, “আমি রাজনীতি পছন্দ করি না।” কিন্তু সত্যিকার অর্থে রাজনীতি মানে দেশের উন্নয়নের প্রতি সচেতন থাকা, যা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা উপলব্ধি করে থাকেন কিন্তু সেভাবে তরুনদের রাজনীতিতে অবদান রাখার ব্যপারে অনুপ্রেরণা দেন না। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হতে হবে বিদেশি কোনো দেশ বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা, বরং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা। আমাদের সব সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে হতে হবে, কোনো বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে নয়। দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সুশাসন ও জবাবদিহিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণের আস্থা বাড়ে এবং দেশপ্রেমের ভিত্তি মজবুত হয়।

৪. জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিনির্ধারকদের উচিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। প্রতিরক্ষা খাতে স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের স্বার্থ রক্ষার কৌশল গ্রহণ করা।

৫. আমাদের দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা সবই আছে কিন্তু দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ, কর্মক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তি নির্ভর কোনো কর্মদক্ষতার মডেল নেই। তাই প্রতিবছর ২০ লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরিবাজারে প্রবেশ করছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। অনেকে মজার ছলে বলেন ”বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেকার তৈরি কারখানায় পরিনত হচ্ছে।” বাংলাদেশীরা মেধাবী শুধুমাত্র চাকরি বা উদ্যোক্তা উন্নয়নের ইকোসিস্টেমের সার্পোটের অভাবে তারা কাঙ্খিত সাফল্য পাচ্ছেন না। উদাহরণস্বরুপ সিঙ্গাপুরের কথা বলা যায়। সিঙ্গাপুর চাকরি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের ইকোসিস্টেমের সাপোর্ট অত্যন্ত শক্তিশালী। সিঙ্গাপুরের সরকার উদ্যোক্তা এবং নতুন ব্যবসার উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে, যা দেশটিকে এশিয়ার অন্যতম প্রধান স্টার্টআপ হাব হিসেবে গড়ে তুলেছে। সরকার “স্টার্টআপ এসজি” এবং “এসইএস ফিউচার” এর মতো প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা, পরামর্শ এবং নেটওয়ার্কিং সুযোগ প্রদান করে। এছাড়াও, সিঙ্গাপুরের উন্নত অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা উদ্যোক্তাদের সফলতার জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। দেশটির বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলো নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে উৎসাহিত করে। এই শক্তিশালী ইকোসিস্টেমের ফলে সিঙ্গাপুর শুধু এশিয়ার নয়, বরং বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য একটি মডেল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যতের মূল চালিকা শক্তি। তাদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করা দেশের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিনির্ধারকদের উচিত শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আধুনিকীকরণ, এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সহায়ক হবে।

৬. দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। নীতিনির্ধারকদের উচিত এমন নীতি তৈরি করা যা দেশের সব শ্রেণীর মানুষকে উন্নয়নের অংশীদার করে তোলে। গ্রামীণ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

৭. বাংলাদেশের অর্থনীতির অক্সিজেন বলা হয় প্রবাসী ভাইবোনদের। প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের অর্থনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের কর্মসংস্থান, দক্ষতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার অবদান আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। “দেশের স্বার্থ সবার আগে” প্রো-বাংলাদেশ নীতির আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুবিধা বৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়নে তাদের কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় যেমনঃ প্রবাসী কল্যাণ ফান্ডের সম্প্রসারণ ও সেবা বৃদ্ধি, প্রবাসী উদ্যোক্তা নেটওয়ার্ক গঠন, প্রবাসী দক্ষতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগানো, বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ সহজীকরণ, প্রবাসীদের দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত করা, ইত্যাদি। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য আরপিএল (Recognition of Prior Learning) এবং আরসিসি (Recognition of Current Competency)’র মতো আন্তর্জাতিক মডেলগুলোর দিয়ে প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা যাতে তারা স্বল্প আয় থেকে উচ্চ আয়ে স্থানান্তরিত হতে পারে।

উপসংহার

পরিশেষে বলবো, প্রো-বাংলাদেশ নীতি আমাদেরকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করবে না, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গর্বিত এবং ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করবে। বিদেশি প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে শিখব, যা একটি স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে আমাদের স্থান সুসংহত করতে হলে “দেশের স্বার্থ সবার আগে”—এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সঠিক এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই নীতি আমাদেরকে একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর, এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি নীতি, এবং প্রতিটি পদক্ষেপে জাতীয় স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখা হলে আমরা আমাদের জাতির ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করতে পারব। নীতিনির্ধারকদের এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা সময়ের দাবি, এবং এর সফল বাস্তবায়নই আমাদের জাতির উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

 

লেখক:

কে এম হাসান রিপন

নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

ইমেইলঃ [email protected]

Blue Modern Stock Market Investment Advice Youtube Thumbnail (4)

জেনারেশন জেড: নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত কিন্তু ফোকাসের চ্যালেঞ্জ

অনেকে মনে করেন জেনারেশন জেড গ্রুপের বয়স কম তাই তারা লীডারশীপ রোল সহজে মানিয়ে নিতে পারবে না! এটা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে কারা এই GEN Z? GEN Z বা Generation Z মূলত তারা যাদের জন্ম ৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিক এবং ২০১০-এর প্রথম দিকে। আসুন দেখে নেই তাদের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যঃ

  • তারা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে বড় হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে অত্যন্ত পারদর্শী এবং ক্রিয়েটিভ আইডিয়া খুব দ্রুত বের করতে পারে।
  • Gen Z হলো সবচেয়ে জাতিগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় প্রজন্মের মধ্যে একটি। তারা অন্তর্ভুক্তি (Inclusive) এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দেয়। খেয়াল করে দেখবেন যেকোন সংকটে সবার আগে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে এই GEN Z.
  • তারা শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং প্রায়শই ক্যারিয়ার সচেতনতা, স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতিকে গুরুত্ব দেয়।
  • Gen Z সামাজিক এবং পরিবেশগতভাবে সচেতন এবং সবসময় সক্রিয়ভাবে টেকসই (Sustainability) অর্জনের জন্য অনুশীলন করে।
  • এই প্রজন্মের অনেকেই উদ্যোক্তা বা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। সেজন্য Gen Z এর ভেতর ব্যবসায়ী হয়ে উঠার প্রবনতা বেশী লক্ষণীয়।
  • তারা প্রকৃত এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ পছন্দ করে। ভুলভাল বুঝিয়ে GEN Z কে সন্তুষ্ট করা যাবে না। তাদের কাছে বিশ্বাস এবং বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে বেড়ে ওঠার কারণে GEN Z অভিযোজনযোগ্য (Adaptive) এবং পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে খুব সহজে।

যারা মনে করেন জেনারেশন জেড লীডারশীপ রোল সহজে মানিয়ে নিতে পারে না, আমি তাদের সাথে একমত নই। তবে GENZ’র একটা সমস্যা হলো ফোকাস ধরে রাখতে না পারা। GENZ’র সাথে যদি একজন GEN X (যাদের জন্ম ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ এর ভেতর) বা GEN Y (যাদের জন্ম ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর ভেতর) দেওয়া হয় যারা তাদের মতো করে সচ্ছতার সাথে যোগাযোগ করবে, তাহলে GEN Z এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

 

About Author———————————————————————

K M Hasan Ripon is a prominent figure in the field of career development and entrepreneurship in Bangladesh. Hasan Ripon is an example of expertise, serving as the Executive Director of Bangladesh Skill Development Institute (BSDI), the Managing Director of Global Entrepreneurship Network Bangladesh, and the Vice President of Start and Improve Your Business Foundation of Bangladesh.

Hasan Ripon has worked as a consultant for over 300 national and international organizations, accumulating a wide range of experiences. He has inspired over 100,000 youth and graduating students at Bangladesh’s 150+ public and private Universities, colleges and polytechnics, as well as over 20 international universities. As a skills activist and inspiring speaker, he has a social media following of over 3 million people.

Brown How to Become a Travel Coach Blog Banner (23)

Goal-setting checklist for Fresh Executives

আমরা অনেক সময় দেখতে পাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যখন কেউ চাকরি বাজারে প্রবেশ করেন তখন তাদের মধ্যে অনেকেই হিমসিম খান তাল মেলাতে গিয়ে। অনেকে আবার তাল মেলাতে না পেরে স্বপ্নের চাকরি পেয়েও ধরে রাখতে পারে না। এমন প্রফেশনালও আছে যারা দীর্ঘদিন একটি সেক্টরে কাজ করেছেন কিন্তু চাকরি পরিবর্তন করে নতুন সেক্টরে যাওয়ার কারণে প্রফেশনালিজম দেখাতে পারছেন না।

মনে রাখবেন যেখানেই কাজ করেন না কেনো, ব্যক্তিগত টার্গেট খুব জরুরী। টার্গেট না থাকলে চাকরিতে সফলতা আসবে না। আর প্রতিষ্ঠান সবসময় নিজেরটা দ্যাখে আগে। প্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে মাসে ৫০০০০ হাজার টাকা বেতন দেয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই সেই বেতনের কমপক্ষে ৩ গুণ পরিমান অর্থ বা সমপরিমান ভ্যাল্যু এনে দিতে হবে। কর্মক্ষেত্র সবসময় কর্মঠ, ইতিবাচক এবং সক্রিয় কর্মীকে ভালোবাসে।

নীচের এই স্যাম্পল টেবিলটি তাদের জন্য যারা মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে নতুন চাকরিতে ঢুকেছেন অথবা তাদের জন্য যারা দীর্ঘদিন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর নতুন আরেকটি চাকরিতে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাল মেলাতে পারছেন না।   

যেখানে আপনি উন্নতি করতে চান

নির্দিষ্ট লক্ষ্য সমাপ্তির সময়সীমা করণীয় পদক্ষেপ

অগ্রগতি পর্যালোচনা

দক্ষতা উন্নয়ন

প্রেজেন্টেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট

৬ মাস

  • ইউটিউভ ব্যবহার করে মাইক্রোসফ্ট পাওয়ার পয়েন্টে দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
  • প্রেজেন্টেশন স্কিল উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্লাব বা সোসাইটির মেম্বারশীপ নেয়া।
  • বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা।
  • নিজের ভিডিও নিজে করে ইউটিউভ চ্যানেলে আপলোড করে অন্যান্যদের ফিডব্যাক নেয়া।

 

দ্বি-সাপ্তাহিক আত্ম-মূল্যায়ন

নেটওয়ার্কিং

পেশাগত নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা।

চলমান

  • বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ভলেন্টিয়ার কাজে অংশ নেয়া।
    লিঙ্কডইনের বিভিন্ন প্রফেশনাল গ্রুপে যোগদান করা
  • প্রতি মাসে সহকর্মীদের সাথে বাইরে খেতে যাওয়া, বন্ধুত্বপূর্ন পরিবেশে সময় কাটানো।
  • সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রফেশনালদের সাথে যোগযোগ করে তাদের কাছ থেকে কফি মিটিংয়ের অনুমতি চাওয়া।
  • অন্তত প্রতিমাসে নতুন ৫ জন নতুন প্রফেশনালের সাথে মিটিং করা।

মাসিক নতুন যোগাযোগের পর্যালোচনা

পারফরম্যান্স

বর্তমান পজিশনে সাফল্য অর্জন

চলমান

 

  • আপনার বসের সাথে মাসিক পারফরম্যান্স লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
  • নিয়মিত বস এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেয়ার চেষ্টা করুন
  • প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নিন।
  • নিজ থেকে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট সেট করুন যা সাধারন মানুষ নিতে ভয় পেয়ে থাকে।

মাসিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা

মেন্টরশিপ

একজন মেন্টর খুঁজে পাওয়া

৩ মাস

  • আপনার কর্মক্ষেত্রে একজন সম্ভাব্য মেন্টর চিহ্নিত করুন
  • তথ্যমূলক আলোচনার জন্য তার সাথে যোগাযোগ করুন
  • তিনি যেনো আপনার ক্যারিয়ার মেন্টর হতে সম্মতি দেন সেজন্য তাকে রাজি করান।

নিয়মিত মেন্টরের সাথে যোগাযোগ

সার্টিফিকেশন

প্রাসঙ্গিক সার্টিফিকেশন অর্জন

১ বছর

  • আপনি যে সেক্টর বা যে বিভাগে কাজ করছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন কি হতে পারে সেটা নিয়ে গবেষণা করুন। এক্সপার্টদের পরামর্শ নিন।
  • সার্টিফিকেশন কোর্সে ভর্তি হন।
  • সাপ্তাহিক পড়াশোনার সময় বরাদ্দ রাখুন।

কোর্স সমাপ্তি ও পরীক্ষার তারিখ ট্র্যাকিং

লিডারশিপ উন্নয়ন

লিডারশিপ দক্ষতা উন্নত করা

১ বছর

  • আপনি যে প্রজেক্টে কাজ করছেন তার টিমের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করুন।
  • আপনার টিমের সদস্যরা যেখানেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
  • প্রতি মাসে একটি লিডারশিপ বই পড়ুন
  • লিডারশিপ উন্নয়ন ট্রেনিংয়ে অংশ নিন।

ত্রৈমাসিক লিডারশিপ দক্ষতা মূল্যায়ন

ব্যক্তিগত এবং কর্ম জীবনের ভারসাম্য

একটি স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখুন

চলমান

  • আপনার কাজের সময়সীমা সেট করুন।
  • পরিবারের জন্য সময় নির্ধারন করুন।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্যের যত্ন নিন যেনো ঘন ঘন অসুস্থতার কারনে ছুটি নিতে না হয়।
  • ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য একটি বাস্তবিক রুটিনের মধ্যে থাকুন।
  • প্রতি তিনমাসে একবার ছুটি নেয়ার চেষ্টা করুন এবং পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যান।

সাপ্তাহিক প্রতিফলন এবং সমন্বয়

উপরের টেবিলটি একটি স্যাম্পল। এটি বুঝে নিজের জন্য একটি টেবিল বানিয়ে ভালোভাবে অনুসরণ এবং অনুশীলন করার চেষ্টা করুন। নিজের সাথে সৎ থেকে যদি টেবিলটি ফলো করে ব্যক্তিগত টার্গেট সেট কবার পর বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে আপনার সফলতা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ ঠেকাতে পারবে না।

 

——————————————————————————xxx———————————————————————————————-

About The Author: K M Hasan Ripon (
K. M. Hasan Ripon is a distinguished figure and a leading career mentor in Bangladesh, recognized for his expertise as an entrepreneurial ecosystem builder and employability specialist. He currently holds key positions, serving as the Executive Director of Bangladesh Skill Development Institute (BSDI), Managing Director of Global Entrepreneurship Network Bangladesh, Executive Director of Daffodil Education Network, and Vice President of Start and Improve Your Business Foundation of Bangladesh.
With a wealth of experience, he has consulted for over 100 national and international organizations, providing training for executive development in areas such as communication, leadership, customer service, team building, negotiation, and problem-solving. Hasan Ripon’s extensive reach includes visits to 64 districts in Bangladesh and travels to 40 countries as a speaker and workshop facilitator. He has inspired over 100,000 youth and graduating students in 100+ public and private universities and polytechnics in Bangladesh, as well as more than 20 international universities.
Hasan Ripon is widely recognized on social networks, with a fan following exceeding 3 million, as a skills activist and inspirational speaker. His previous roles include serving as a short-term consultant at the World Bank, consultant for Industry 4.0 (HTS) at a2i, ICT Division (government agencies), master trainer and industry assessor (CBT&A) at ILO, convener of the National Board of CYFI Bangladesh, and a fellow of the Royal Society of Arts (FRSA). He also previously served as the local president of JCI Bangladesh (Dhaka Central).

Author Contact: [email protected]

Brown How to Become a Travel Coach Blog Banner (21)

২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে হারিয়ে গেছে প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি চাকরি

ইউএস ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকস এর মতে বিশ্বে প্রায় ১২ হাজারের মতো স্বীকৃত পেশা আছে। এর প্রায় ‍অধিকাংশই প্রথম থেকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আইএলও’র রিপোর্টে দেখা যায় প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্তু বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি নতুন জব সৃষ্টি হয়েছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সার্ভেতে দেখা যায় ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অটোমেশনের জন্য প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি জব হারিয়ে গেছে।

বর্তমানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) উন্নয়নের ফলে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আরো প্রায় ৮০ কোটি জব হারিয়ে যাবে। যখন আমরা মোটে ভাবা শুরু করেছি এআই (AI) নিয়ে, এর মধ্যে চলে আসতে শুরু করেছে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (AGI).

এজিআই হলো একটি অনুমানভিত্তিক কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যা মানুষের মতো সাধারণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হবে। তারমানে যা দাড়াবে মানুষ যেভাবে জ্ঞান আহরনের মাধ্যমে ভবিষ্যত ক্যালকুলেশন করতে পারে। ঠিক একইভাবে এজিআই মানুষের মতো কোনো সম্ভাব্য সমস্যার আগাম সমাধান করতে পারবে।

 

 

আমি ব্যক্তিগত গবেষণা করে দেখতে পাচ্ছি নিকট ভবিষ্যতে কিছু জব থাকবেই না। যেমনঃ

১. সাধারণ ম্যানুফ্যাকচারিং জব
২. ডেটা এন্ট্রি
৩. রেগুলার গ্রাহক সেবা
৪. সাধারণ টেলিমার্কেটিং
৫. ক্যাশিয়ারের চাকরি
৬. সাধারন হিসাবরক্ষক
৭. ম্যানুফ্যাকচারিং এ্যাসেমব্লি লাইন
৮. সাধারন গ্রাফিক্স ডিজাইন
৯. প্রুফ রিডার
১০. নিরাপত্তা কর্মকর্তা
১১. অনুবাদক/দোভাষী
১২. নিয়মিত অ্যাডমিন জব
১৩. নিয়মিত এইচআর জব
১৪. টিকিট এবং রিজার্ভেশন
১৫. নিয়মিত ট্যুর গাইড
১৬. ক্লারিকাল জব

২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে মাত্র ৫৫ লক্ষ মানুষ কম্পিউটারের বেসিক ব্যবহার জানেন যেমন এমএস ওয়ার্ড, ফেসবুক এবং ইউটিউভসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাধারণ কিছু এ্যাপের ব্যবহার। ২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপ অনুসারে মাত্র ৩৮৫০০ জন মানুষের কম্পিউটারের উপর উচ্চতর টেকনিক্যাল দক্ষতা যেমন প্রোগ্রামিং স্কিল আছে।

এটা আমাদের জন্য সতর্ক সংকেত। যেখানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশ উন্নত প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করেছে সেখানে আমরা এখনো ধরে রাখতে চাচ্ছি গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি এবং করতে চাচ্ছি সেই বিংশ শতাব্দীর চাকরি। প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশুনা করতেই হবে বিশেষ করে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে।

এই মুহুর্তে যে জ্ঞানটি সবচেয়ে প্রয়োজন হবে সামনের দিনগুলোর জন্য সেটি হলো এআইকে প্রম্পটিং করা। বর্তমানে আমরা এআইকে ব্যবহার করছি নকল করার উদ্দেশ্যে। যেমন ছ্রাত্রছাত্রীরা নকল করছেন তাদের এ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে, অফিসের কর্মীরা করছেন তাদের অফিসের কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা বর্তমানে এআই দ্বারা চালিত হচ্ছি। আসলে হওয়ার কথা ছিলো আমাদের দ্বারা এআই পরিচালিত। প্রম্পটিং নিয়ে পড়াশুনা করুন এখনই।

আমি একটি কোর্স ইউটিউভে আপলোড করেছি পারলে করে আসুন। অথবা আরো অনেক কোর্স পাবেনম সময় থাকতে করে ফেলুন। এতো দ্রুত সময় সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলছে পড়ে সময় পাবেন না। তখন আপনার কান্না দেখারও কারো সময় থাকবে না।

——————————————————————————xxx———————————————————————————————-

About The Author: K M Hasan Ripon (
K. M. Hasan Ripon is a distinguished figure and a leading career mentor in Bangladesh, recognized for his expertise as an entrepreneurial ecosystem builder and employability specialist. He currently holds key positions, serving as the Executive Director of Bangladesh Skill Development Institute (BSDI), Managing Director of Global Entrepreneurship Network Bangladesh, Executive Director of Daffodil Education Network, and Vice President of Start and Improve Your Business Foundation of Bangladesh.
With a wealth of experience, he has consulted for over 100 national and international organizations, providing training for executive development in areas such as communication, leadership, customer service, team building, negotiation, and problem-solving. Hasan Ripon’s extensive reach includes visits to 64 districts in Bangladesh and travels to 40 countries as a speaker and workshop facilitator. He has inspired over 100,000 youth and graduating students in 100+ public and private universities and polytechnics in Bangladesh, as well as more than 20 international universities.
Hasan Ripon is widely recognized on social networks, with a fan following exceeding 3 million, as a skills activist and inspirational speaker. His previous roles include serving as a short-term consultant at the World Bank, consultant for Industry 4.0 (HTS) at a2i, ICT Division (government agencies), master trainer and industry assessor (CBT&A) at ILO, convener of the National Board of CYFI Bangladesh, and a fellow of the Royal Society of Arts (FRSA). He also previously served as the local president of JCI Bangladesh (Dhaka Central).

Author Contact: [email protected]

Presentation1

360 Degree Personal Branding

এখন আপনি যে অবস্থায় আছেন সেখান থেকেই ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং শুরু করে দিন। আগামী তিন মাস নীচের ১৫টি ধাপ অনুশীলন এবং অনুরসণ করুন। নিজেই ফলাফল দেখতে পাবেন। প্রথমে নিজের ঢোল নিজেরই বাজাতে হয়। তারপর সেই আওয়াজ যখন মানুষের ভালো লাগতে শুরু করে তখন সেই ঢোল অন্যরা বাজাতে শুরু করে।

ভিজিটিং কার্ডঃ

আপনি এখন যেখানেই আছেন, নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য একটি ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে ফেলুন। অনেকেই ভাববেন এখনও চাকরি বা ব্যবসা যোগাড় করতে পারিনি, ভিজিটিং কার্ড বানাবো কিভাবে? মনে রাখবেন ভিজিটিং কার্ড হলো আপনার অনুপস্থিতিতে আপনাকে মনে করিয়ে দেবার কাজ করে। অতএব গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করে এরকম একটি দোকানে গিয়ে নিজের প্রফেশনাল ছবি, আপনার নাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেটার নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, আপনি যে কাজটি খু্ব ভালো পারেন সেটার টাইটেল লিখে আকর্ষণীয় ভিজিটিং কার্ড তৈরি করুন এবং যার সাথেই কথা হবে তাকে গর্বের সাথে কার্ডটি দিন।

ফেসবুকঃ

স্পষ্ট ব্যক্তিগত প্রফেশানাল ছবি, কভার ফটো, এবং আপনার সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য ফেসবুকের About Section-এ যুক্ত করুন। মনে রাখবেন ফেসবুক আপনার মার্কেটিং টুলস ছাড়া আর কিছু না। অতএব ব্যক্তিগত আবেগ থেকে বেড়িয়ে নিজেকে প্রচার করার কাজে ব্যবহার করুন ফেসবুককে। আপনার জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অন্য মানুয়ের সাথে শেয়ার করুন। আজেবাজে মন্তব্য, ছবি, ভিডিও শেয়ার করে আপনার ফেসবুককে ডাস্টবিনে রুপান্তর করবেন না। আর যেহেতু ফেসবুক সম্পূর্ণ মার্কেটিং টুলস হিসেবে ব্যবহারিত হয় তাই যতটা সম্ভব এটিকে উন্মুক্ত রাখুন প্রফেশনাল কন্টেন্ট দিয়ে।

লিঙ্কডইনঃ

স্পষ্ট ব্যক্তিগত প্রফেশানাল ছবি, কভার ফটো, আপনার দক্ষতা, এবং কাজের ইতিহাসের তালিকা এবং রেফারেন্স সহ একটি সম্পূর্ণ লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করুন। গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপে যোগ দিন এবং চাকরি বা ব্যবসা সম্পর্কে আপনি যা জানেন তা শেয়ার করুন। মনে রাখবেন লিংকডইন হলো সুযোগ তৈরির কারখানা। অতএব শুধু প্রোফাইল তৈরি করে বসে থাকলে চলবে না।

ইউটিউবঃ

আপনার দক্ষতা দেখানোর জন্য ইউটিউব একটি চমৎকার মাধ্যম। আজকেই ইউটিউভে আপনার একটি চ্যানেল তৈরি করুন। তারপর নিজের দক্ষতা, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করুন। মনে রাখবেন মানুষকে আপনি যতো দিবেন, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে তত ফেরত দেবেন। তবে আপনার পারসোনালিটি নষ্ট হয় এমন কোন কিছু না করা যাবে না। ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগীতা থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে।

ব্লগঃ

আপনার সেক্টরের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আপনি যা জানেন তা শেয়ার করতে ব্লগ লিখুন এবং সোস্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, লিংকডইনে শেয়ার করুন। আপনি যদি ক্রমাগত উচ্চ-মানের লেখনীর মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান ও বিকাশে সাহায্য করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার সেক্টরের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি হয়ে উঠবেন।

সিভিঃ

একটি আকর্ষণীয় এবং মার্জিত সিভি তৈরি করুন যা আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কৃতিত্বকে মানুষের কাছে ফুটিয়ে তুলবে। যদি আগে থেকেই আপনার সিভি তৈরি করা থাকে তাহলে সেটিকে নিয়মিত আপডেট করুন। তারপর সেই সিভি সম্পর্কে প্রফেশনালদের কাছ থেকে লিংকডইনের মাধ্যমে মতামত নেবার চেষ্টা করুন।

ভিডিও সিভিঃ

এইচআরদের কাছে এই মুহুর্তে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হচ্ছে ভিডিও সিভি বা ভিডিও রিজুমে। ভিডিও সিভি হচ্ছে আপনার নিজের সম্পর্কে ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বলবেন। সংক্ষেপে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিন, আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের তালিকা করুন এবং আপনি আপনার সেব্টর সম্পর্কে কতটা জ্ঞান রাখেন তা নিয়ে কথা বলুন এবং রেকর্ড করুন। তারপর সেটিকে ইউটিউভ এবং লিংকডইনের মাধ্যমে প্রচার করে ছড়িয়ে দিন। যেহেতু সোস্যাল মিডিয়া বর্ডারমুক্ত তাই কার চোখে যে আপনার ভিডিও রিজুমে পড়বে সেটা আপনি নিজেও বলতে পারবেন না।

কর্মশালা এবং সেমিনারঃ

আপনার দক্ষতার সাথে যুক্ত বিষয়গুলোতে কর্মশালা এবং সেমিনার আয়োজন করুন বা সেগুলোতে অংশ নিন। এটি আপনাকে আরও বেশি মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করবে।

নেটওয়ার্কিংঃ

নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য অনলাইন এবং আউটডোর উভয় ইভেন্টে অংশ নিন। আপনার মতো একই সেক্টরে কাজ করেন এমন মানুষের সাথে পরিচিত হন এবং নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিন।

হাসুন এবং খুশি থাকুনঃ

আপনি মনোভাব কেমন সেটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন অনলাইনে বা আউটডোরে চলাফেরা করেন তখন হাসুন, উচ্ছ্বসিত থাকুন এবং ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। খুব সিরিয়াস বা জোকার টাইফের মানুষ ওয়ান টাইম প্রয়োজনে বেশী কাজে লাগে। তাদের সাথে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে আগ্রহী নন।

কোল্ড ইমেলঃ

আপনি যখন সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট, বস, বা চাকরিদাতাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তখন ব্যক্তিগতভাবে কোল্ড ইমেল লিখে পাঠিয়ে দিন। কোল্ড ইমেল হলো এমন যা প্রাপকের কাছে তাদের অনুমতি ছাড়াই পাঠানো হয়। যেমন আপনি কোন ইভেন্টে গিয়ে কারো সাথে পরিচিত হলেন এবং তিনি আপনাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছেন। এখন আপনি বাড়িতে ফিরে তাকে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং স্বল্প ভাষায় নিজেকে ইমেইলের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিলেন। খেয়াল করে দেখুন আপনি প্রতি সপ্তাহে অনেক ইমেল পেয়ে থাকেন কিন্তু সেগুলোকে কখনো ব্যবহার করেননি।

মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে নিজের পরিচয় দিনঃ

ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করতে চ্যাট এ্যাপ ব্যবহার করুন। আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন এবং মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নিজের পরিচয় তুলে ধরুন ইতিবাচক এবং স্বল্প ভাষায়।

কোল্ড এসএমএসঃ

আপনি যখন সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট, বস, বা চাকরিদাতাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তখন ব্যক্তিগতভাবে কোল্ড এসএমএস লিখে পাঠিয়ে দিন। কোল্ড এসএমএস হলো এমন যা প্রাপকের কাছে তাদের অনুমতি ছাড়াই পাঠানো হয়। যেমন আপনি কোন ইভেন্টে গিয়ে কারো সাথে পরিচিত হলেন এবং তিনি আপনাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়েছেন। এখন আপনি বাড়িতে ফিরে তাকে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং স্বল্প ভাষায় নিজেকে এসএমএসের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

নিজের পোষাক পরিচ্ছদ ঠিক রাখুনঃ

পোষাক যেটাই পড়ুন না কেনো অবশ্যই সেটি পরিষ্কার হতে হবে। মানানসই হতে হবে।

দুঃখের কথা শেয়ার না করে দক্ষতার কথা শেয়ার করুনঃ

আমরা প্রায়ই দেখতে পাই কমেন্টে বা পোস্টে নিজের দুঃখ বা হতাশার কথা অবলিলায় বলে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার অন্যের বদনাম বলে বেড়াচ্ছেন। এতে আপনার যদি ১% কাজের সুযোগ থাকতো সেটিও হবে না।

Presentation1

আপনার নতুন বছরের লক্ষ্য বা টার্গেট কি হওয়া উচিত?

আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে ২০২৩ সাল শেষ হতে। এইতো সেদিন শুরু হয়েছিলো ২০২৩ কিন্তু আর কয়েক ঘন্ট পরেই চলে আসবে নতুন বছর। অতএব আর একমূহুর্ত দেরী না করে নতুন বছরের টার্গেট সেট করতে নেমে পড়ুন। এই ব্লগে আমি কিছু আইডিয়া দিয়ে রাখলাম। আপনারাও শেয়ার করুন নতুন আইডিয়া। যাতে হাজারো মানুষের উপকারে আসে।

 

দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যঃ
নতুন দক্ষতা অর্জন বা আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্যগুলোর সাথে প্রাসঙ্গিক বিদ্যমান দক্ষতাগুলোকে আপগ্রেড করার প্রতিশ্রুতি নিন। বিভিন্ন কর্মশালায় যোগ দিন, অনলাইনের মাধ্যমে প্রফেশনাল কোর্সে অংশ নিন বা আপনার সেক্টরে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য বিভিন্ন সার্টিফিকেশন কোর্সে অংশ নিন।

 

নেটওয়ার্কিং লক্ষ্যঃ
আপনার প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক প্রসারিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। বিভিন্ন কর্পোরেট ইভেন্টগুলোতে অংশ নিন, লিংকডইনের মাধ্যমে প্রফেশনালদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন এবং অর্থপূর্ণ সংযোগ তৈরি করতে প্রফেশনাল কথোপকথনে নিজেকে যুক্ত করুন।

 

চাকরি খোঁজার কৌশলঃ
যদি আপনার চাকরির প্রয়োজন হয় বা বর্তমান চাকরি পরিবর্তনের প্রযোজন হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরীর কাজ শুরু করে দিন। অনেক কাজ করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। যেমন আপনার সিভি আপডেট করুন এবং প্রফেশনালদের দিয়ে চেক করিয়ে নিন, আপনার লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করুন, আপনার কাঙ্খিত পজিশনের কাজের বিবরণী পর্যালোচনা করে সেইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যক চাকরিতে আবেদন করুন।

 

স্বাস্থ্য এবং সুস্থতাঃ
আপনার মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিন। আপনার কর্মজীবনের যাত্রায় সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে নিয়মিত ব্যায়াম, মননশীলতার অনুশীলন এবং পর্যাপ্ত ঘুম অন্তর্ভুক্ত করুন।

 

আর্থিক পরিকল্পনাঃ
আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ব্যাক্তিগত বাজেট তৈরি করুন। ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার পরিবর্তন বা অপ্রত্যাশিত আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে কৌশলগতভাবে সঞ্চয় করুন এবং সম্ভব হলে বিনিয়োগ করুন।

 

কর্ম-জীবনের ভারসাম্যঃ
মনে রাখবেন কর্ম জীবনের ভারসাম্যের কোন বিকল্প নেই। যিনি সারাদিন কাজ বা সারাদিন আনন্দ করে বেড়ান তিনি আসলে নিজ হাতে ক্যারিয়ারের ক্ষতি করছেন। এমনভাবে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করুন যাতে কাজের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ আসে এবং সেই অর্থ দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত আগ্রহ বা শখ পূরণ করতে পারেন।

 

 

মনে রাখবেন, কেবল নতুন বছরের রেজোলিউশন সেট করাই মূখ্য বিষয় নয় বরং সেগুলোকে অর্জনের জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিতভাবে আপনার অগ্রগতি মূল্যায়ন করুন এবং আপনার ক্যারিয়ারের বিকাশের সাথে সাথে আপনার লক্ষ্যগুলোকে মানিয়ে নিন।

——————————————————————————xxx———————————————————————————————-

About The Author: K M Hasan Ripon
K. M. Hasan Ripon is a distinguished figure and a leading career mentor in Bangladesh, recognized for his expertise as an entrepreneurial ecosystem builder and employability specialist. He currently holds key positions, serving as the Executive Director of Bangladesh Skill Development Institute (BSDI), Managing Director of Global Entrepreneurship Network Bangladesh, Executive Director of Daffodil Education Network, and Vice President of Start and Improve Your Business Foundation of Bangladesh.
With a wealth of experience, he has consulted for over 100 national and international organizations, providing training for executive development in areas such as communication, leadership, customer service, team building, negotiation, and problem-solving. Hasan Ripon’s extensive reach includes visits to 64 districts in Bangladesh and travels to 40 countries as a speaker and workshop facilitator. He has inspired over 100,000 youth and graduating students in 100+ public and private universities and polytechnics in Bangladesh, as well as more than 20 international universities.
Hasan Ripon is widely recognized on social networks, with a fan following exceeding 3 million, as a skills activist and inspirational speaker. His previous roles include serving as a short-term consultant at the World Bank, consultant for Industry 4.0 (HTS) at a2i, ICT Division (government agencies), master trainer and industry assessor (CBT&A) at ILO, convener of the National Board of CYFI Bangladesh, and a fellow of the Royal Society of Arts (FRSA). He also previously served as the local president of JCI Bangladesh (Dhaka Central).
Building-positive-workplace-relationships

What should be the relationship with colleagues in the workplace?

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

আপনি সম্ভবত কর্মক্ষেত্রে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে শুনেছেন। কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক আপনাকে অনেক কিছুতে এগিয়ে রাখে। সহকর্মীদের সাথে আপনার সুসম্পর্ক, টিমের কাছ থেকে আরও ভালভাবে সহযোগিতা পাওয়া এবং একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

সেই সাথে আপনাকে অবশ্যই যে সেক্টরে কাজ করছেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রফেশনালদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরীর ইতিবাচক প্রচেষ্টা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। ভালো সম্পর্কের অন্যতম হাতিয়ার হলো বিশ্বাস। সুসম্পর্ক একদিনের বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে আপনার একটি অসচ্ছ পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে মুহুর্তে শেষ করে দিতে পারে।

অনেকের মাঝে একটা প্রবনতা দেখা যায় যে কর্মক্ষেত্র বা যে সেক্টরের হয়ে কাজ করছে সেখানকার সহকর্মী বা প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে যায়। একটি কাজ ”নিজে একাই করে ফেলবো” এমন ধারনা তৈরি হয়ে যায় অনেকের মাঝে। আসলে অন্যের সাহায্য ছাড়া এককদমও এগুনো যাবে না, এই বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরী। দলের ভেতর সুসম্পর্ক থাকলে কর্মক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়বেঃ

  • কার্যকর টিমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবেঃ

    দলের সদস্যদের মধ্যে ভাল কাজের সম্পর্ক থাকা মানেই হলো কাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব যা কাঙ্খিত ফলাফল পেতে সহায়তা করে। ভাল সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বচ্ছ যোগাযোগ এবং সততা জড়িত, যা একটি দল হিসাবে কাজ করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • কর্মক্ষেত্রে মনোবল বৃদ্ধি করেঃ

    দলের মধ্যে পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকলে যেকোন ধরনের দ্বন্দ্বকে সহজভাবে মোকাবেলা করা যায় কারন প্রত্যেকেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করেন। পাশাপাশি যেকোন কঠিন সময়কেও সকলে মিলে মোকাবেলা করার সাহস পায় কারন প্রত্যেকের মাঝে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস অটুট থাকে। 

  • প্রডাক্টিভিটি এবং কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়ঃ

    একটি কর্মক্ষেত্র সবসময় আশা করে তার কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি সবসময় উর্ধমূখী থাকবে এবং কাজের পরিবেশ ইতিবাচক হবে। কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি তখনই সম্ভব যখন পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

  • ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

    দলের ভেতর সুসম্পর্ক পারস্পারিক জ্ঞান এবং দক্ষতার শেয়ারিংকে বাড়িয়ে দেয়। কাজের ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে পড়লে অন্যজন তখন তাকে টেনে উপরে নিয়ে আসে।

  • সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবেঃ

    দলের ভেতর যদি সুসম্পর্ক না থাকে তাহলে কর্মক্ষেত্রে সবাই শুধু সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারবে। কেউ সমাধান খুঁজে পাবে না। সবাই শুধু অন্যকে দোষারোপ করবে। কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা থাকবে না। আর সৃজনশীলতার অভাবে বছর শেষে ফলাফলেও কোন পরিবর্তন আসবে না।

  • অহেতুক সমালোচনা থাকবে নাঃ
    যেহেতু সকলের মাঝে বিশ্বাস অটুট আছে তাই কেউ ভুল করলে অন্যজন সেটি শুধরে দেবে।



কর্মক্ষেত্রে সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি এবং সেই সাথে কর্মীর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের টেকসই অর্জন নির্ভর করে একজন কর্মী কেমন করে সহকর্মীদের সাথে পারস্পারিক সম্পর্ক এবং সৌহার্দ বজায় রেখে কাজ রেখে নিজের কাজ সম্পন্ন করছেন।

তবে সুসম্পর্ক তৈরীতে প্রয়োজন আত্মসচেতনা, সময় এবং ধৈর্য। নিন্মে করেকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো যার সঠিক অনুশীলন আপনাকে সহকর্মী এবং আপনার সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরীতে সাহায্য করবেঃ

  • যোগাযোগে সকল সময় নিজেকে স্বচ্ছ রাখুন।
  • প্রায়ই সহকর্মীদের সাথে বা আপনার নির্ধারিত সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন।
  • ধারাবাহিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজের মধ্যে ধারাবাহিকতা নিয়ে আসুন।
  • আপনাকে যেন চিহ্নিত করা যায় নির্দিষ্ট কোন দক্ষতা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে।
  • যেকোন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
  • নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞান এবং দক্ষতা অন্যের সাথে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন জ্ঞান এবং দক্ষতা শেয়ার করলে তা কমে না বরং বহুগুণে বেড়ে যায়।
  • সবসময় ইতিবাচক থাকা এবং সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক আলোচনায় অংশ নেয়া সুসম্পর্কে স্থাপনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
  • কারো সম্পর্কে পেছনে কথা বলা (backbite) থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, নীতি এবং দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
  • কোন কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিয়ে যথা সময়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোন কিছু অস্পষ্ট থাকলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে ইতিবাচক প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।

সুসম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে সেই বিশ্বাসের জায়গায় যেন কোন আঁচড় না লাগে। আমার খুব পছন্দের একটি ইংরেজী উক্তি আছে “Believing Everybody is Dangerous but believing nobody is more dangerous”.