আমেরিকান সিনেমা সমালোচক পাওলিন ক্যায়েলের বিখ্যাত একটি উক্তি “When there is will, there is way” আমরা সবাই কম বেশী জানি। যার বাংলা অনুবাদ হতে পারে ”ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়”। আসলে আমরা যা করতে চাই সেটা যদি নিজে বিশ্বাস না করি অথবা আমিই পারবো, এই মনোবল যদি আমার ভেতরে নাড়া না দেয় তাহলে ইচ্ছা থাকলেও উপায় বের হবে না। এটাই স্বাভাবিক প্রথম দিকে খুব কষ্ট হয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনে এবং অনেক সময় মনোবল বা ধৈর্য ধরে রাখাটা আমাদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তখন প্রজাপতির মতো এই ফুল থেকে সেই ফুলে উড়ে বেড়াই।
প্রজাপতি এতটাই বিভ্রান্তিকর চরিত্রের যে আমরা বুঝতেই পারি না সে এখন কোন ফুলের উপর গিয়ে বসবে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে প্রজাপতি চরিত্রের মানুষরা বিশ্বাস অর্জনে অনেক বাধার সম্মোখিন হয়। অথবা সহজভাবে বললে বিষয়টি এমন দাড়ায় যে গতকাল আপনাকে একটি কাজ করতে দেখলাম এবং বেশ ভালো লাগলো। আজ চিন্তা করলাম আপনার সাথে দেখা করে সেই কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কাছে গিয়ে দেখি আপনি কাজটিই বন্ধ করে দিয়ে আরেকটি নতুন কাজ শুরু করেছেন। ছোট্ট একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। অনেকদিন ধরেই একটি ছেলেকে আমি ফলো করছিলাম। ওর ক্রিয়েটিভ কাজ বিশেষ করে গ্রাফিক্স সেন্স, ভিজ্যুয়ালাইজেশন, কালার কনসেপ্ট আমাকে মুগ্ধ করতো। একদিন স্বীদ্ধান্ত নিলাম ওকে অফিসে চায়ের দাওয়াত দেবো এবং আমি কিভাবে ওর সাথে কাজ করতে পারি সে বিষয়ে আলাপ করবো। নম্বর জোগার করে আমি ফোন দিলাম এবং যথারীতি ধাক্কা খেলাম। সে পেশা পরিবর্তন করেছে (কি পেশা বেছে নিয়েছে সেটা আর এখানে নাই বা বলি)। অতএব যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম ”ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়”, এই ইচ্ছাটিকেই আমাদের গভীরে গিয়ে খুজে বের করতে হবে। আমরা প্রতিদিন যে হারে ফেসবুকের কল্যানে প্রতি মুহুর্তে অনুপ্রানিত হচ্ছি এবং যে হারে আমাদের ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটাচ্ছি। সেই একই হারে আমাদের চারপাশের পরিচিতরাও বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের “ইচ্ছার” এই গতিশীল চরিত্রের কারনে ”উপায়ও” খেই হারিয়ে ফেলছে। আপনার “ইচ্ছার” প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ”উপায়” আজ এসে দ্যাখে আপনি গতকালের ইচ্ছাটিই পরিবর্তন করে ফেলেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমার ”ইচ্ছার” এই গতিশীল চরিত্র থেকে বের করে স্থির চরিত্রে রুপান্তরিত করবো কিভাবে?
- প্রায় ১০ বছর আগে আমি জাপানিজ একটি কনসেপ্টের সাথে পরিচিত হই যা এখন প্রায় অনেকেই জানেন ইকিগাই (IKIGAI)। এই কনসেপ্টির ব্যাপারে আপনারা খুব সহজেই গুগল করে বিস্তারিত ধারনা নিতে পারেন। সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়, যে ইচ্ছাটি আপনাকে স্বাভাবিক ৬/৭ ঘন্টার বেশী ঘুমাতে দেয় না। ব্রেইনের ভেতর সবসময় একটি অটো এলার্ম কাজ করে। ইকিগাই (IKIGAI) কনসেপ্টে চারটি মূল স্তম্ভের কথা বলে (১) “কোন ইচ্ছাটি বেশী ভালোবাসেন”, (২) ” ইচ্ছাটি আপনি নিজে বেশী ভালো পারেন কিনা”, (৩) “সমাজে ইচ্ছাটির চাহিদা আছে কিনা”, (৪) “ইচ্ছাটি আপনাকে উপার্জনে সাহায্য করবে কিনা”। বিশ্বব্যাপী ইকিগাই (IKIGAI) সমাদৃত হয়েছে। তবে এককভাবে বের করতে পারলে তো খুবই ভালো, যদি সমস্যা হয় তাহলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন নিরপেক্ষ মেন্টনশীপের।
- দু-ধরনের মেন্টরশীপ আমরা দেখতে পাই। পেইড এবং কমপ্লিমেন্টরি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে বেশী জোর দেবো। সম্পর্ক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বচ্ছতা যা আসলে বিশ্বাস তৈরিতে কাজ করে। ধরুন আপনি একজনকে ফেসবুকে বা লিংকডইনে নক করলেন। যদি তিনি আপনার মেসেজটি দেখেন তাহলে উত্তর দেবার আগে তিনি অবশ্যই আপনার প্রোফাইল ভিজিট করবেন। আপনার প্রোফাইলটি যদি স্বচ্ছ না হয় তাহলে আপনি উত্তর পাবেন না।
- কয়েক ধরনের চরিত্র আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে । তবে সবচেয়ে পছন্দনীয় চরিত্র হচ্ছে “DOER” বা যিনি সময়ের অপেক্ষা না করে কাজে নেমে যান, শেখেন এবং প্রয়োগ করেন। Doer কে খুব সহজেই চিনতে পারেন কমপ্লিমেন্টরি মেন্টরশীপ সার্ভিস প্রোভাইডাররা। আপনি Doer কিনা সে বিষয়টিতে তারা খুব সচেতন। মনে রাখতে হবে গঠনহীন সমালোচক বা নেতিবাচক মনোভাবের মানুষকে কেউই পছন্দ করে না। নেতিবাচক কনটেন্টকে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে কিন্তু আসল কাজে হাত বাড়াবে না। নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলটিতে গঠনহীন সমালোচক বা নেতিবাচক মনোভাবের তকমা লাগিয়ে দেই।
- ইংরেজীতে একটি কথা আছে “A Goal without Plan is just a Wish (পরিকল্পনা ছাড়া লক্ষ্য কেবল একটি ইচ্ছা”)। এই কথাটি থেকে আমরা বুঝতে পারছি ইকিগাই (IKIGAI) এর মাধ্যমে নির্ধারিত ইচ্ছাকে মেন্টরশীপের মাধ্যমে লক্ষ্যতে রুপান্তর করতে হবে।
- এখন অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে মেন্টর পাওয়া যায় না। তখন কি করবো? অবজার্ভ শব্দটি এখানে প্রযোজ্য হবে তখন। প্রচুর রিসার্চ করতে হবে। প্রচুর প্রশ্ন করতে হবে গুগলকে এবং ইউটিউভকে। দেশে বা বিদেশে বিখ্যাত মানুষেরা কিভাবে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়েছেন তার পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনা করার সময় অবশ্যই কাগজ ও কলম সাথে রেখে সংগে সংগে লিখে ফেলতে হবে। তারপর স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছকের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। “আজ না কাল করবো” নামক ব্যাধী থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।
- পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাদের বা কোন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্য আপনার লাগবে তারও একটি তালিকা আপনার করতে হবে। তারপর শুরু হবে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ। সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অবশ্যই নির্ধারন করতে হবে ”উইন-উইন কৌশল”। প্রচুর পরিমানে ফিজিক্যাল এবং ভার্চুয়াল উপস্থিতি বাড়াতে হবে। অতএব যত বেশী পারা যায় বিভিন্ন ইভেন্টে (ফিজিক্যাল এবং ভার্চুয়াল) অংশগ্রহন করতে হবে (যদি মজা করে বলি তাহলে বলবো আমন্ত্রন না জানালে, আমন্ত্রন চেয়ে নিতে হবে)। হিংসা বা অহংকার নামক ভাইরাস থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হবেই। অতএব নিজের ক্ষুদা প্রথমে নিজেকে মেটাবার চেষ্টা করতে হবে, তারপর মানুষ আপনার ইচ্ছাশক্তি দেখে সামনে এগিয়ে আসবে নিজেদের প্রয়োজনেই। একটি প্রশ্ন রেখে শেষ করছি “আপনার ইকিগাই (IKIGAI) কি আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভব হবে”?