কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
আপনি সম্ভবত কর্মক্ষেত্রে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে শুনেছেন। কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক আপনাকে অনেক কিছুতে এগিয়ে রাখে। সহকর্মীদের সাথে আপনার সুসম্পর্ক, টিমের কাছ থেকে আরও ভালভাবে সহযোগিতা পাওয়া এবং একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।
সেই সাথে আপনাকে অবশ্যই যে সেক্টরে কাজ করছেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রফেশনালদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরীর ইতিবাচক প্রচেষ্টা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। ভালো সম্পর্কের অন্যতম হাতিয়ার হলো বিশ্বাস। সুসম্পর্ক একদিনের বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে আপনার একটি অসচ্ছ পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে মুহুর্তে শেষ করে দিতে পারে।
অনেকের মাঝে একটা প্রবনতা দেখা যায় যে কর্মক্ষেত্র বা যে সেক্টরের হয়ে কাজ করছে সেখানকার সহকর্মী বা প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে যায়। একটি কাজ ”নিজে একাই করে ফেলবো” এমন ধারনা তৈরি হয়ে যায় অনেকের মাঝে। আসলে অন্যের সাহায্য ছাড়া এককদমও এগুনো যাবে না, এই বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরী। দলের ভেতর সুসম্পর্ক থাকলে কর্মক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়বেঃ
-
কার্যকর টিমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবেঃ
দলের সদস্যদের মধ্যে ভাল কাজের সম্পর্ক থাকা মানেই হলো কাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব যা কাঙ্খিত ফলাফল পেতে সহায়তা করে। ভাল সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বচ্ছ যোগাযোগ এবং সততা জড়িত, যা একটি দল হিসাবে কাজ করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
কর্মক্ষেত্রে মনোবল বৃদ্ধি করেঃ
দলের মধ্যে পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকলে যেকোন ধরনের দ্বন্দ্বকে সহজভাবে মোকাবেলা করা যায় কারন প্রত্যেকেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করেন। পাশাপাশি যেকোন কঠিন সময়কেও সকলে মিলে মোকাবেলা করার সাহস পায় কারন প্রত্যেকের মাঝে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস অটুট থাকে।
-
প্রডাক্টিভিটি এবং কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়ঃ
একটি কর্মক্ষেত্র সবসময় আশা করে তার কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি সবসময় উর্ধমূখী থাকবে এবং কাজের পরিবেশ ইতিবাচক হবে। কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি তখনই সম্ভব যখন পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকে।
-
ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
দলের ভেতর সুসম্পর্ক পারস্পারিক জ্ঞান এবং দক্ষতার শেয়ারিংকে বাড়িয়ে দেয়। কাজের ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে পড়লে অন্যজন তখন তাকে টেনে উপরে নিয়ে আসে।
-
সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবেঃ
দলের ভেতর যদি সুসম্পর্ক না থাকে তাহলে কর্মক্ষেত্রে সবাই শুধু সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারবে। কেউ সমাধান খুঁজে পাবে না। সবাই শুধু অন্যকে দোষারোপ করবে। কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা থাকবে না। আর সৃজনশীলতার অভাবে বছর শেষে ফলাফলেও কোন পরিবর্তন আসবে না।
- অহেতুক সমালোচনা থাকবে নাঃ
যেহেতু সকলের মাঝে বিশ্বাস অটুট আছে তাই কেউ ভুল করলে অন্যজন সেটি শুধরে দেবে।
কর্মক্ষেত্রে সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি এবং সেই সাথে কর্মীর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের টেকসই অর্জন নির্ভর করে একজন কর্মী কেমন করে সহকর্মীদের সাথে পারস্পারিক সম্পর্ক এবং সৌহার্দ বজায় রেখে কাজ রেখে নিজের কাজ সম্পন্ন করছেন।
তবে সুসম্পর্ক তৈরীতে প্রয়োজন আত্মসচেতনা, সময় এবং ধৈর্য। নিন্মে করেকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো যার সঠিক অনুশীলন আপনাকে সহকর্মী এবং আপনার সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরীতে সাহায্য করবেঃ
- যোগাযোগে সকল সময় নিজেকে স্বচ্ছ রাখুন।
- প্রায়ই সহকর্মীদের সাথে বা আপনার নির্ধারিত সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন।
- ধারাবাহিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজের মধ্যে ধারাবাহিকতা নিয়ে আসুন।
- আপনাকে যেন চিহ্নিত করা যায় নির্দিষ্ট কোন দক্ষতা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে।
- যেকোন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
- নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞান এবং দক্ষতা অন্যের সাথে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন জ্ঞান এবং দক্ষতা শেয়ার করলে তা কমে না বরং বহুগুণে বেড়ে যায়।
- সবসময় ইতিবাচক থাকা এবং সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক আলোচনায় অংশ নেয়া সুসম্পর্কে স্থাপনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
- কারো সম্পর্কে পেছনে কথা বলা (backbite) থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, নীতি এবং দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
- কোন কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিয়ে যথা সময়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোন কিছু অস্পষ্ট থাকলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে ইতিবাচক প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।
সুসম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে সেই বিশ্বাসের জায়গায় যেন কোন আঁচড় না লাগে। আমার খুব পছন্দের একটি ইংরেজী উক্তি আছে “Believing Everybody is Dangerous but believing nobody is more dangerous”.