দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গ্রামে ছোট্ট পরিবার নিয়ে এক সময় বাস করতো লি কিম। লি কিমের বাবা বেঁচে ছিলেন না এবং পরিবারে তাঁর মা, দাদী ও এক কিশোরী বোন ছিল। লি কিম যখন বিয়ের যোগ্য হয়েছিলেন তখন তাঁর মা তাঁর জন্য উপযুক্ত কনে খোঁজার কাজটি করেছিলেন। অনেক যোগাযোগের পর তিনি একটি মেয়েকে সনাক্ত করলেন তার ছেলের জীবনসঙ্গী হিসেবে।
উভয় পক্ষই বিবাহে সম্মতি জানালে, বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হলো। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য বিয়ের জন্য কাজ শুরু করে দিলেন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজ বেছে নিলেন এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছিল। লি কিম বললেন আমি আমার বিয়ের স্যুটের দায়িত্ব নিলাম এবং এটি আমিই অর্ডার দেবো। সবাই খুব ব্যস্ত, আনন্দিত কারন বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ের হচ্ছে যে অনেক ছোট বয়স থেকেই পরিবারের হাল ধরেছে এবং সকলের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে। সবাই চাচচ্ছিল লি কিমের বিয়েতে যেন কোন কমতি না থাকে। লি কিম সহ পরিবারের সবাই বিভিন্ন কাজে এতোটাই ব্যস্ত ছিলো বিয়ের দুদিন আগে হঠাৎ লি কিমের মাথায় এলো যে বিয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে বিয়ের স্যুট সেটিই সে অর্ডার দিতে ভুলে গেছে। তড়িঘড়ি করে সে বাড়ির কাছের একটি দর্জির দোকানে গেলো এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। দর্জি তার বিপদের কথা শুনলেন এবং রাজি হলেন এতো অল্প সময়ের মধ্যেও বিয়ের স্যুট বানিয়ে দিতে। বিয়ের অন্যান্য কাজ শেষ করে লি কিম বিয়ের আগের রাত ৯ টার দিকে দর্জি দোকানে গিয়ে হাজির এবং ততক্ষণে দর্জি দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। লি কিমকে দেখে দোকান খুলে তার স্যুটটি দিলেন এবং বললেন এই স্যুটটি গায়ে দিয়ে দেখবার জন্য। লি কিম বলেন এখনো অনেক কাজ বাকি আছে তাই তিনি একবারে বাড়িতে গিয়েই পরে দেখবেন।
রাতের খাবার শেষ করে লি কিম চিন্তা করলেন যে একবার পরে দেখি স্যুটটি কেমন হয়েছে। স্যুটটি পরেই লি কিমের মন খারাপ হয়ে গেলো। স্যুটের প্যান্ট প্রায় তিন ইঞ্চি বড় হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই কে দেখালেন এবং সবাই মন খারাপ করে যার যার কাজে চলে গেলেন। লি কিমও মন খারাপ করে কাপড়গুলো আলমিরাতে রেখে দিলেন।
অনেক রাতে মায়ের ঘুম ভেঙে গেলো এবং চিন্তা করলেন আমার ছেলের কাল এতো বড় একটি আনন্দের দিন আর তার ছেলেকে তিন ইঞ্চি লম্বা প্যান্ট পড়তে হবে আর আমি মা হিসেবে সেটা কিভাবে দেখবো? মা ঘুম থেকে উঠলেন, সুই-সুতা-কাচি বের করলেন এবং প্যান্টটিকে তিন ইঞ্চি ছোট করে ভাঁচ করে রেখে আবার শান্তি ঘুমাতে গেলেন।
প্রিয় ছোট বোনেরও ঘুম আসছিল না এবং চিন্তা করছিল আমার বড় ভাইয়ের জন্য কাল এতো বড় একটি আনন্দের দিন আর ভাইকে কেমন বোকার মতো দেখা যাবে এবং সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে! বোন ঘুম থেকে উঠলো, সুই-সুতা-কাচি বের করলো এবং প্যান্টটিকে তিন ইঞ্চি ছোট করে ভাঁচ করে রেখে আবার আনন্দে ঘুমাতে গেলো।
লি কিমের প্রিয় দাদী জেগেছিলেন অনেক রাত পর্যন্ত কারন তারও ঘুম আসছিল না এবং তিনিও চিন্তা করছিলেন আমার নাতীর কাল এতো বড় একটি আনন্দের দিন আর তাকে তিন ইঞ্চি লম্বা প্যান্ট পড়তে হবে আর আমি দাদী হিসেবে সেটা কিভাবে দেখবো? দাদী ঘুম থেকে উঠলেন, সুই-সুতা-কাচি বের করলেন এবং প্যান্টটিকে তিন ইঞ্চি ছোট করে আবার ভাঁচ করে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেলেন।
পরের দিন সকালে যখন লি কিম ঘুম থেকে উঠে স্যুটটি গায়ে দিলেন, তখন তাঁর মুখের অবস্থা ভয়ংকর দেখাচ্ছিল যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর প্যান্টের এখন আরও খারাপ অবস্থা – ৬ ইঞ্চি ছোট!
হয়তো লি কিম তার বিবাহের দিনটির কথা সাড়া জীবনেও ভুলবেন না।
আমাদের জীবনে যোগাযোগের (Communication) গুরুত্ব অপরিসীম। উপরের ঘটনাতে কাউকেই সরাসরি দোষারোপ করা যাবে না কারন কারোই উদ্দেশ্য খারাপ ছিলো না। যে জায়গাতে ভুল হয়েছে তা হলো ছোট্ট একটি বার্তা “আমি প্যান্টটি ঠিক করে রেখে দিয়েছি“। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা যোগাযোগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভকে ভুলে যাই যেমনঃ
এই পাঁচটি স্তম্ভকে আমরা অনেকেই এক করতে পারি না। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের অতি সাধারন কাজও নষ্ট হয়ে যায় সামান্য যোগাযোগর ভুলের কারনে। কোন মানুষকে কোন প্রক্ষেপটে কোন বার্তাটি দেবার প্রয়োজন এবং সেই বার্তাটি দেবার আগে সে বিষয়ে ভালো করে শুনবার চেষ্টা করা হয়েছে কিনা বা সব কিছু ঠিক আছে শুধুমাত্র আমার দেহের ভাষার গড়মিলের কারনে যোগাযোগের পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলাফল ব্যর্থতা!
সেজন্য বলা হয় যোগাযোগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুত্র হলো “সঠিকভাবে বুঝে নেয়া এবং সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া”। এই সুত্রটি যিনি নিয়মিত অনুশীলন করবেন তার কাছে ব্যর্থতা শব্দটি হবে অস্বাভাবিক কারন অনুশীলনে সবই সম্ভব
নীচের এই ভিডিওটি মনোযোগ দিয়ে শুনলে আপনারা অনেক কিছু ধরতে পারবেন বলে আশা রাখছি:
গল্পটি গুগল থেকে সংগৃহীত। অনুবাদ এবং সারমর্ম লেখক: কে এম হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট
2 Comments
Communication is an essential/crucial part of our everyday life if we want to be successful. So, evey success depends on good communication. And this is the main reason not to be successful /getting job of our new generation because they can’t make effective communication.
সঠিকভাবে বুঝে নেয়া এবং সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া”
অনুশীলনে সবই সম্ভব (Communication)
I’m Practicing…….Thank you very much Sir to sharing with us.