বছর আসে বছর যায়। এটাই সৃষ্টির শুরু থেকে হয়ে আসছে এবং হতে থাকবে। জীবন থেকে ৩৬৫ দিন নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আর এই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের যুগে এখন তো সময় যেন আমাদের সাথে মাইকেল বোল্টেকে অনুকরণ করে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড় প্রতিযোগীতায় নেমেছে। ২০১২ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস এ অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে ৩ ঘন্টার যাত্রা বিরতি হলো। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বসে আছি। সময় আর কাটে না। তার ঠিক ৭ বছর পর কেপটাউন থেকে বাংলাদেশে ফিরবো, মাঝখানে দোহা এয়ারপোর্টে ৯ ঘন্টার যাত্রা বিরতি। দুই ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এয়ারপোর্টের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে কাজ করা শুরু করলাম। হঠাৎ শুনলাম ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট। মনে হলো মুহুর্তের মধ্যে ৯ ঘন্টা কেটে গেছে। এই হলো বর্তমানের সময়ের গতি।
এখন চাইলেই সময় নষ্ট করা যায় কিন্তু চাইলেই সময়ের সদ্বব্যবহার করা যায় না। সময়ের সদ্বব্যবহারের জন্য চাই সময়ের পরিকল্পিত ব্যবহার। না হলে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের রাতে আমরা একটি বছর কে বিদায় দিয়ে নতুন আর একটি বছর কে আমন্ত্রণ জানাবো। আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারনা প্রায় কাজ করে আর সেটি হলো আমরা মনে করি নতুন বছর মনে হয় আমাদের চাহিদাকে আপনা আপনি ঠিক করে দেবে। আমরা মনে মনে প্ল্যান করি, অনেক পরিকল্পনা করি কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে অবহেলা করি। সাধারনত পুরানো বছরের শেষের দিকে আমাদের অবকাশ যাপন শুরু হয়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মজা, শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতেই নতুন বছরের প্রথম মাসের অর্ধেকটা কেটে যায়। আর সেই সাথে সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাবতো আছেই। আমাদের পরিকল্পনা কল্পনাতেই রয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন ক্যারিয়ার প্ল্যান বছরের শুরুতেই করা উচিত যার জন্য প্রয়োজন সচেতন এবং খোলা মন।
বর্তমানে আমরা একটু এগিয়ে আছি কারন আমরা এমন এক সময় অবস্থান করছি যখন আমাদের যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সাথে সহায়ক ভুমিকা পালনের জন্য আছে প্রযুক্তি। মানুষ চাইলেই সব পারে কিন্তু সমস্যা হলো আমরা জানিই না আমি কি চাই, আমার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, বাস্তবায়নের জন্য কি কি দরকার এবং কাদেরকে দরকার। মানুষের ধর্ম হলো চাপে না পড়লে কিছুই করতে পারে না। যদিও এর মধ্যেও ব্যাতিক্রম আছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভেতর থেকে শক্তি উৎপন্নের জন্য প্রয়োজন একটা ধাক্কা। প্রত্যেকের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করার সময় চারটি প্রশ্ন করা অত্যন্ত জরুরী। যে চারটি প্রশ্ন তিনি নিজে নিজেকে করবেন এবং উত্তর বের করার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় মেন্টরের সহায়তায় উত্তর বের করা যেতে পারে তবে সঠিক মেন্টর খুজে বের করতে না পারলে আবার হীতে বিপরীত হতে পারে। প্রশ্ন চারটি হচ্ছেঃ
- ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী হবার জন্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কি হতে হবে বলে আপনি মনে করছেন? প্রথম প্রশ্নটি একটু জটিল এবং চিন্তা করে বের করার মতো। অনেকে আবার বলেন চাইতে তো সমস্যা নেই এবং চাইবোই যখন তখন কোন বাছ বিচার করবো না। তবে এতটুকু মনে রাখতে হবে ক্যারিয়ারে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারে এমন জিনিস কামনা করাই শ্রেয়। তবে এই প্রশ্নটির উত্তর বের করতে হলে সবার আগে নিজেকে জনতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজন আত্মমূল্যায়ন এবং গবেষণা ।
- শীর্ষ তিনটি লক্ষ্য কি আপনি নির্ধারন করতে পারেন? উপরের চাহিদাগুলো আপনার ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত করতে কোন তিনটি শীর্ষ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে আপনার বাস্তবায়ন করতে হবে। তার একটা কর্মপরিকল্পনা বের করতে হবে।
- নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন বা অর্জনের জন্য কী ধরণের শিক্ষা বা উপকরন আপনার প্রয়োজন? আপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে আপনার কি কোন ধরনের শিক্ষা বা প্রশিক্ষনের প্রয়োজন আছে কিনা। বা কোন মেন্টর বা পরামর্শদাতার প্রয়োজন পড়বে কিনা, সেটা নির্ধারন করাটা অত্যন্ত জরুরী।
- লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে, আপনার কী নতুন কোন সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন? এক্ষেত্রে আপনি একটি ছক তৈরি করে কোন কোন মানুষের সাহায্য বা সহযোগীতা আপনার প্রয়োজন তার একটি তালিকা আপনি করে নিতে পারেন। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার বা কাদের সহযোগীতায় আপনি করবেন বা এমন কে বা কারা আছেন যারা আপনাকে পেশা ভিত্তিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। অথবা খুজে বের করা এমন কারা আছেন যারা আপনাকে সাহায্য করবেন সেখানে যেতে যেখানে আপনি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৌছতে চাচ্ছেন।
প্রশ্নগুলো অত্যন্ত সাধারন এবং অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যেই আপনাকে বলেছেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি এখনও সময় নিয়ে যথাযথভাবে পরিকল্পনা করা এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সময় বের করতে পারেননি। ধরে নিন ২০২০ সাল আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর এবং এখন থেকেই কাজ করতে হবে যেন ২০২৫ এর মধ্যে আপনি সেই জিনিসগুলো আপনার ক্যারিয়ারে সংযুক্ত করবেন যেগুলো আপনাকে ব্যস্ত এবং সুখী করতে পারবে। মনে রাখবেন আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন ততোক্ষনে ২০২০ সাল চলমান এবং অচিরেই চলে আসবে আরেকটি ৩১ ডিসেম্বর। তাই উত্তর বের করুন, কাজ করুন, লেগে থাকুন, সাফল্য আসবেই। আর সবসময় মনে রাখতে হবে অনুশীলনে সবই সম্ভব।
ক্যারিয়ারে যেকোন সহযোগীতার প্রয়োজন হলে মনে রাখবে আপনার পাশে আছে আপনাদের ভাই কে এম হাসান রিপন এবং তার কর্মস্থল বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (বিএসডিআই)। কোন ধরনের সংকোচবোধ না করে আমাদের ফোন করুন (+৮৮ ০১৭১৩৪৯৩২৪৩) অথবা ইমেইল করুন ([email protected]).
S
অসাধারন স্যার। আমার সপ্ন উদ্যক্তা হওয়ার আর এটার জন্য যতটুকু সম্ভব সংগ্রাম করে যাব। লক্ষ যখন একটাই সেটা আমাকে পূরন করতেই হবে। আপনার প্রত্যকটা ব্লগ আমার খুব ভালো লাগে এবং আমি অনুসরন করি।