Getting old is not a problem (1)

Plan Like a King

As an executive, you are a leader in your organization. You are responsible for guiding your company to success and achieving your goals. One of the most important tools you have at your disposal is your ability to plan.

Just like a king planning his next conquest, an executive must also plan in order to conquer their targets. A well-crafted plan can provide direction, focus, and clarity to your team, and it can help you stay on track and achieve your goals.

The first step in the planning like a king is to set clear and specific goals. These goals should be aligned with the overall mission and vision of your organization, and they should be measurable so that you can track your progress.

Once you have set your goals, it’s time to develop a strategy. This is where you map out the steps you need to take in order to achieve your goals. A good strategy should be flexible and adaptable to changing circumstances, and it should be communicated clearly to your team.

Next, you need to assemble your team. Just like a king needs his loyal subjects to help him conquer new territories, an executive needs a team of talented and motivated individuals to help achieve the goals. It’s important to assemble a diverse team with different skills and perspectives, as this will help to ensure that all angles are covered.

As you move forward with your plan, it’s important to stay focused and stay the course. Just like a king must remain focused on his goal of conquest, an executive must also remain focused on their goals in order to achieve success. This means that you need to be willing to make tough decisions and take calculated risks.




Finally, it’s important to measure and track your progress. This will help you to identify areas where you need to improve and adjust your plan. It will also help you to stay motivated and on track.

In conclusion, planning like a king is essential for any executive who wants to conquer their targets. By setting clear and specific goals, developing a strategy, assembling a team, staying focused, and measuring progress, you can position yourself and your organization for success.

Getting old is not a problem

Getting OLD is not a problem, Thinking OLD is a Problem!

It is true that getting older is not a problem in and of itself, but rather it is the tendency to think and act in a way that is rooted in the past that can become a problem. When individuals or organizations become too focused on the past and become resistant to change, it can limit their ability to adapt to new circumstances and opportunities.

When individuals or organizations adopt a “thinking old” mindset, they may become resistant to change, which can limit their ability to adapt to new circumstances and opportunities. This can lead to stagnation, a lack of progress, and missed opportunities. Furthermore, it can also limit the ability to innovate and create new ideas.

On the other hand, if individuals or organizations can maintain a growth mindset, they can continue to learn, grow, and adapt as they age. By staying open to new ideas and perspectives, embracing change, and fostering a culture of innovation and learning, they can continue to be successful in the long term.

We can put a sample case here:

This can be seen in the examples of companies like Nokia and General Motors, who, despite being well-established and successful brands, were ultimately left behind in the market due to their inability to adapt and evolve.

Nokia, for example, was once the dominant player in the mobile phone market. However, as the market shifted towards smartphones, Nokia failed to adapt and was overtaken by companies like Apple and Samsung, who were able to capitalize on this new technology.

Similarly, General Motors was once one of the world’s largest and most successful car manufacturers. However, as the market shifted towards electric and autonomous vehicles, General Motors failed to adapt and invest in these new technologies, ultimately leading to its decline.

In both cases, these companies were unable to adapt to changes in the market and failed to innovate, which ultimately led to their decline. This illustrates the importance of organizations being open to new ideas and perspectives, embracing change, and fostering a culture of innovation in order to stay competitive and succeed in the long term.

Thinking old can lead to a number of negative consequences, such as:

  1. Motionlessness: When individuals or organizations become too focused on the past, they may stop learning and growing, which can lead to motionlessness and a lack of progress.
  2. Inability to adapt: When individuals or organizations are too focused on the past, they may be unable to adapt to new challenges and opportunities, which can make it difficult for them to be successful in the long term.
  3. Lack of innovation: When individuals or organizations become too focused on the past, they may lose their ability to think creatively and develop new ideas, which can limit their ability to innovate.
  4. Missed opportunities: When individuals or organizations become too focused on the past, they may miss out on new opportunities that could benefit them.

It is important for individuals and organizations to stay open to new ideas and perspectives, even as they get older. This can be done by actively seeking out new information and experiences, embracing change, and fostering a culture of innovation and learning. By doing so, they can continue to grow, adapt, and evolve to meet the ever-changing needs of the world around them.

In summary, growing older is not a problem, but thinking old can be. It is important for individuals and organizations to actively work to overcome the tendency to think and act in a way that is rooted in the past and to adopt a growth mindset in order to stay innovative and competitive in today’s fast-paced world.

Building-positive-workplace-relationships

What should be the relationship with colleagues in the workplace?

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

আপনি সম্ভবত কর্মক্ষেত্রে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে শুনেছেন। কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক আপনাকে অনেক কিছুতে এগিয়ে রাখে। সহকর্মীদের সাথে আপনার সুসম্পর্ক, টিমের কাছ থেকে আরও ভালভাবে সহযোগিতা পাওয়া এবং একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

সেই সাথে আপনাকে অবশ্যই যে সেক্টরে কাজ করছেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রফেশনালদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরীর ইতিবাচক প্রচেষ্টা থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। ভালো সম্পর্কের অন্যতম হাতিয়ার হলো বিশ্বাস। সুসম্পর্ক একদিনের বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে আপনার একটি অসচ্ছ পদক্ষেপ দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে মুহুর্তে শেষ করে দিতে পারে।

অনেকের মাঝে একটা প্রবনতা দেখা যায় যে কর্মক্ষেত্র বা যে সেক্টরের হয়ে কাজ করছে সেখানকার সহকর্মী বা প্রফেশনালদের সাথে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে যায়। একটি কাজ ”নিজে একাই করে ফেলবো” এমন ধারনা তৈরি হয়ে যায় অনেকের মাঝে। আসলে অন্যের সাহায্য ছাড়া এককদমও এগুনো যাবে না, এই বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরী। দলের ভেতর সুসম্পর্ক থাকলে কর্মক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো চোখে পড়বেঃ

  • কার্যকর টিমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবেঃ

    দলের সদস্যদের মধ্যে ভাল কাজের সম্পর্ক থাকা মানেই হলো কাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব যা কাঙ্খিত ফলাফল পেতে সহায়তা করে। ভাল সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বচ্ছ যোগাযোগ এবং সততা জড়িত, যা একটি দল হিসাবে কাজ করার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • কর্মক্ষেত্রে মনোবল বৃদ্ধি করেঃ

    দলের মধ্যে পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকলে যেকোন ধরনের দ্বন্দ্বকে সহজভাবে মোকাবেলা করা যায় কারন প্রত্যেকেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করেন। পাশাপাশি যেকোন কঠিন সময়কেও সকলে মিলে মোকাবেলা করার সাহস পায় কারন প্রত্যেকের মাঝে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস অটুট থাকে। 

  • প্রডাক্টিভিটি এবং কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়ঃ

    একটি কর্মক্ষেত্র সবসময় আশা করে তার কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি সবসময় উর্ধমূখী থাকবে এবং কাজের পরিবেশ ইতিবাচক হবে। কর্মীদের প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি তখনই সম্ভব যখন পারস্পারিক সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

  • ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

    দলের ভেতর সুসম্পর্ক পারস্পারিক জ্ঞান এবং দক্ষতার শেয়ারিংকে বাড়িয়ে দেয়। কাজের ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে পড়লে অন্যজন তখন তাকে টেনে উপরে নিয়ে আসে।

  • সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবেঃ

    দলের ভেতর যদি সুসম্পর্ক না থাকে তাহলে কর্মক্ষেত্রে সবাই শুধু সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারবে। কেউ সমাধান খুঁজে পাবে না। সবাই শুধু অন্যকে দোষারোপ করবে। কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা থাকবে না। আর সৃজনশীলতার অভাবে বছর শেষে ফলাফলেও কোন পরিবর্তন আসবে না।

  • অহেতুক সমালোচনা থাকবে নাঃ
    যেহেতু সকলের মাঝে বিশ্বাস অটুট আছে তাই কেউ ভুল করলে অন্যজন সেটি শুধরে দেবে।



কর্মক্ষেত্রে সুসম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি এবং সেই সাথে কর্মীর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের টেকসই অর্জন নির্ভর করে একজন কর্মী কেমন করে সহকর্মীদের সাথে পারস্পারিক সম্পর্ক এবং সৌহার্দ বজায় রেখে কাজ রেখে নিজের কাজ সম্পন্ন করছেন।

তবে সুসম্পর্ক তৈরীতে প্রয়োজন আত্মসচেতনা, সময় এবং ধৈর্য। নিন্মে করেকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো যার সঠিক অনুশীলন আপনাকে সহকর্মী এবং আপনার সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরীতে সাহায্য করবেঃ

  • যোগাযোগে সকল সময় নিজেকে স্বচ্ছ রাখুন।
  • প্রায়ই সহকর্মীদের সাথে বা আপনার নির্ধারিত সেক্টরের প্রফেশনালদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন।
  • ধারাবাহিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজের মধ্যে ধারাবাহিকতা নিয়ে আসুন।
  • আপনাকে যেন চিহ্নিত করা যায় নির্দিষ্ট কোন দক্ষতা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে।
  • যেকোন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
  • নিজের ব্যক্তিগত জ্ঞান এবং দক্ষতা অন্যের সাথে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন জ্ঞান এবং দক্ষতা শেয়ার করলে তা কমে না বরং বহুগুণে বেড়ে যায়।
  • সবসময় ইতিবাচক থাকা এবং সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক আলোচনায় অংশ নেয়া সুসম্পর্কে স্থাপনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
  • কারো সম্পর্কে পেছনে কথা বলা (backbite) থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের নিয়ম, নীতি এবং দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
  • কোন কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিয়ে যথা সময়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। কোন কিছু অস্পষ্ট থাকলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে ইতিবাচক প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।

সুসম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে সেই বিশ্বাসের জায়গায় যেন কোন আঁচড় না লাগে। আমার খুব পছন্দের একটি ইংরেজী উক্তি আছে “Believing Everybody is Dangerous but believing nobody is more dangerous”.

White Gray Simple How To Make Yourself Look Good Youtube Channel Art (1)

11 Most important Hard Skills and Soft Skills for every professional

যে ১১টি হার্ডস্কিলস এবং সফ্টস্কিলস আপনাকে সবার থেকে এগিয়ে রাখবে!

একটি বিষয় সবসময় প্রফেশনালদের মনে রাখতে হয়, যেকোন কর্মক্ষেত্রে নিজের অনর্ভুক্তির জন্য কোন একটি বিষয়ে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। যাকে আমরা দক্ষতা হিসেবে জানি। দক্ষতা মানেই হলো কোন কাজ আপনি নিজ হাতে করতে সক্ষম। উদাহরন হিসেবে বলা যায় মাইক্রোসফট এক্সেল।

আপনি যদি মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারেন বা ডাটা এ্যানালাইসিস করতে সক্ষম হন, তবেই আপনি আত্মবিশ্বাস অনুভব করবেন। দক্ষতা দুই ধরনের হয়ে থাকে পরিমাপযোগ্য এবং অপরিমাপযোগ্য। বহুলভাবে যাকে আমরা হার্ড স্কিল এবং সফ্টস্কিল হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি।

হার্ড স্কিল পরিমাপযোগ্য! এর কারন হলো এর ফলাফল তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়। যেমন বেসিক এডিটিং স্কিল অথবা পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরি করা বা কোন প্রকল্পের জন্য রিপোর্ট তৈরি করা। সফ্টস্কিল হলো অপরিমাপযোগ্য যার অর্থ হলো এটি একমাত্র অনুভব করা যায়।

যেমন আপনি যদি বলেন আপনার যোগাযোগ দক্ষতা ভলো বা আপনার মধ্যে লিডারশীল স্কিল আছে তাহলে সেটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে বেশ কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন হবে। কারন আপনার ভেতর সফ্টস্কিল আছে কিনা সেটা জানা যায় আপনার সাথে যারা একসাথে কাজ করছেন তাদের ফিডব্যাকের মাধ্যমে। সেজন্য অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে কর্মীর সফ্টস্কিল সম্পর্কে ধারনা পেতে প্রতিষ্ঠান সাধারনত থার্ড পার্টি ফিডব্যাকের উপর নির্ভর করেন।

 

নির্দিধায় বলতে পারি সফ্টস্কিল সব সেক্টরের জন্য প্রযোজ্য। হয়তো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষানিকটা পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু প্রয়োজনের দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রফেশনালদের মধ্যে অনেকেই এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে নিজেকে স্থানান্তর করেন। যে সেক্টরেই থাকুন না কেন সফ্টস্কিলসের কিন্তু কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। মূলত প্রধান ১০টি সফ্টস্কিলসের কথা আমরা শুনতে পাই বিশেষ করে চতুর্থ শিল্পের এই সময়টাতে যেমনঃ

  • Communication (যোগাযোগ),
  • Self-Motivation (স্ব-প্রেরণা),
  • Leadership (নেতৃত্ব),
  • Self-Responsibility (দায়িত্ববোধ,
  • Problem Solving (সমস্যা সমাধান),
  • Team Work (টিমওয়ার্ক),
  • Critical Thinking and Creativity (সৃজনশলতা),
  • Decision Making (সিদ্ধান্ত গ্রহন),
  • Ability to Work Under pressure ‍and Time Management (চাপ এবং সময় ব্যবস্থাপনার অধীনে কাজ করার ক্ষমতা)
  • Flexibility (নমনীয়তা)
  • Adaptability (অভিযোজনযোগ্যতা)
  • Negotiation and Conflict Resolution (আলোচনা এবং দ্বন্দ্ব সমাধান)

যেহেতু আমি শুরুতেই বলেছি সফ্টস্কিল সব সেক্টরের কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরী তাই এই দক্ষতাগুলোর প্রতি একটু বেশী গুরুত্ব দিতে পারলে কর্মক্ষেত্রে সকলেরর সাথে মিলে কাজ করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সফ্টস্কিলস অবশ্যই শেখা যায়। প্রতিষ্ঠিত কোন দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বা কোন এক্সপার্টের মাধ্যমে সফ্টস্কিলসের উপর বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করা যেতে পারে।

তবে সফ্টস্কিলসের উপর দক্ষতা বৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মসচেতনতা এবং পর্যবেক্ষনের (Observation) মাধ্যমে শেখা। আপনার কর্মক্ষেত্রে এমন অনেক সহকর্মীর সান্নিধ্য আপনি পেতে পারেন যারা সফ্টস্কিলসকে অনুশীলন করছেন। তাদের সাথে মেলামেশা বাড়িয়ে দিন, দেখবেন আপনার নিজের সফ্টস্কিলসেরও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।



হার্ডস্কিলসের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। হার্ডস্কিলস মূলত কর্মক্ষেত্র বা নির্দিষ্ট সেক্টরের উপর নির্ভর করে। মার্কেটিং, সেলস, ফাইন্যান্স বা এইচআর নিয়ে যারা বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদের প্রত্যেকেই ঐ সেক্টরের জন্য নির্ধারিত হার্ডস্কিলসে পারদর্শী হতেই হবে। তবে বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের

এই সময়ে কিছু হার্ডস্কিলস আছে যা একজন প্রফেশনালকে কর্মক্ষেত্রে বিরত্ব অর্জনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং সকল সেক্টরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করে। মূলত ১১টি হার্ডস্কিলস প্রত্যেক প্রফেশনালের জন্য অত্যন্ত জরুরী যেমনঃ

১. টেকনিক্যাল স্কিল:

  • বেসিক কোডিং (স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং),
  • সিআরএম প্ল্যাটফরম (কাস্টমারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার্থে ব্যবহারিত ওয়েব বেইজড সোল্যুশন),
  • রিসার্চ স্কিলস,
  • ট্রাবলস্যুটিং (কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, বেসিক নেটওয়ার্ক) ইত্যাদি।

২. কম্পিউটার স্কিলসঃ

  • মাইক্রোসফ্ট অফিস (ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট)
  • মাইক্রোসফ্ট প্রজেক্ট,
  • বেসিক ইমেইজ এডিটিং,
  • বেসিক গ্রাফিক্স ডিজাইন,
  • বেসিক ভিডিও এডিটিং,
  • গুগলিং,
  • ইমেইল, ‍
  • সোস্যাল মিডিয়া,
  • ওয়েব সাইট রিভিউং,
  • টাইপিং স্কিল,
  • অনলাইন স্টোরেজ (গুগল ড্রাইভ) ইত্যাদি।

৩. এ্যানালাইটিক্যাল স্কিলসঃ

  • ডাটা এ্যানালাইসিস,
  • ডাটা মাইনিং,
  • ডাটা প্রেজেন্টেশন,
  • এসপিএসএস,
  • ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট,
  • রিপোটিং স্কিলস, ‍
  • স্ট্র্যাটেজি স্কেচিং ইত্যাদি।

৪. মার্কেটিং স্কিলসঃ

  • সেলস স্কিলস,
  • এ্যাডভারটাইজমেন্ট,
  • কনজুমান রিসার্চ,
  • ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষ করে বেসিক এসইও (SEO),
  • পে পার ক্লিক (PPC),
  • সোস্যাল মিডিয়া পেইড মার্কেটিং,
  • কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট,
  • ইমেইল মার্কেটিং,
  • ইউএক্স/ইউআই ডিজাইন (UX/UI Design),
  • গুগল এ্যানাটিক্স,
  • ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।

৫. প্রেজেন্টেশন স্কিলসঃ

  • বিজনেস প্রেজেন্টেশন,
  • সেলস প্রেজেন্টেশন,
  • স্টোরি টেলিং,
  • গ্রাফ/চার্ট প্রেজেন্টেশন,
  • প্রোগ্রাম মডারেটিং ও উপস্থাপনা ইত্যাদি।

৬. ম্যানেজমেন্ট স্কিলসঃ

  • বিজনেজ ডোমেইন নলেজ (যে সেক্টরে কাজ করছেন, সেই সেক্টর সম্পর্কে জ্ঞান),
  • ব্যবসায়িক জ্ঞান,
  • বাজেটিং,
  • প্রকল্প ব্যবস্থাপনা,
  • নিয়োগ ব্যবস্থাপনা,
  • বেসিক আর্থিক পরিকল্পনা,
  • বেসিক অফিস ম্যানেজমেন্ট,
  • বেসিক প্রকিউরমেন্ট,
  • সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।

৭. প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্কিলসঃ

  • প্রজেক্ট সিডিউলিং,
  • প্রজেক্ট লাইফ সাইকেল ম্যানেজমেন্ট,
  • এ্যাজাইল সফ্টওয়্যার (Agile Software),
  • পারফরমেন্স ট্র্যাকিং,
  • ফাইন্যান্সিয়াল মডেলিং,
  • স্ক্র্যাম ম্যানেজমেন্ট (Scrum Management) ।

৮. রাইটিং স্কিলসঃ

  • নোট টেকিং,
  • বিজনেস লেটার/এপ্লিকেশন রাইটিং,
  • প্রফেশনাল ইমেইল রাইটিং,
  • বিজনেস রিপোর্ট রাইটিং,
  • প্রেস রিলিজ ড্রাপটিং,
  • স্ক্রিপট এডিটিং,
  • প্রজেক্ট প্রপোজাল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।

৯. ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিলসঃ

  • মাতৃভাষার পাশাপাশি যেকোন একটি বা দুটি ভাষায় পারদর্শীতা কর্মক্ষেত্রে সবসময় একধাপ এগিয়ে রাখে যেকোন প্রফেশনালকে। বাংলা ভাষার সাথে যদি ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা যায় তাহলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিজনেস কমিউনিকেশন স্কিলস।

১০. ডিজাইন স্কিলসঃ

  • এডোবি ফটোশপ,
  • এডোবি ইলাসট্রেটর,
  • এডোবি আফটার ইফেক্টস
  • ইনডিজাইন
  • ইউএক্স/ইউআই ডিজাইন (UX/UI Design),
  • ইউএক্স রিসার্চ,
  • ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন,
  • বেসিক এইচটিএমএল (HTML),
  • এ্যাক্রোব্যাট রিডার/এডিটিং,
  • টাইপোগ্রাফী,
  • প্রিন্ট লেআউট ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।

১১. ভেন্ডর সাটিফিকেশনঃ বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য বিভিন্ন দক্ষতার উপর ভেন্ডর সার্টিফিকেট প্রোভাইডার আছে যেমন এ্যাডোবি ডিজাইনের জন্য, মাইক্রোসফ্ট, পিএমআই (প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য), বৃটিশ কাউন্সিল (ইংরেজী ভাষার দক্ষতার জন্য) ইত্যাদি। এছাড়া বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফরম আছে যা অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে স্বীকৃত।

Corporate Work Blog Banner

To reach higher you have to save money! But how? Employability Skills Fact!

সঠিক সময়ে অর্থ জ্ঞান অর্জন করতে পারলে স্বপ্ন পূরণে আসতে পারে বাধা। ডাচ একটি প্রবাদ আছে “The art is not in making money, but in keeping it.” আমরা অসংখ্য উদাহরন দেখেছি যে অর্থ উপার্জিত হয়েছে পরিকল্পিতভাবে কিন্তু চলে গিয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। উপরের প্রবাদে শিল্প বলতে বোঝানো হয়েছে উপার্জনের পাশাপাশি সঞ্চয়ের পরিকল্পনাটা নিশ্চিত করা বেশী জরুরী। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে শিশু/কিশোর বয়স থেকেই। যদিও আমি মনে করি যখনই আপনি উপলদ্ধি করবেন যে সঞ্চয় করা অত্যন্ত জরুরী আপনার জন্য, তখনই শুরু করে দেবেন।



ডেভিড ওয়েলইভার ফাউন্ডার “Money Under 30”, তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন ৫০/৩০/২০ সূত্রের কথা যেখানে তিনি মাসিক আয়ের ৫০ ভাগ মৌলিক প্রয়োজনে, ৩০ ভাগ সে সমস্ত জায়গায় যেখানে স্বীদ্ধান্ত গ্রহণে বিচক্ষনতার প্রয়োজন এবং বাকি ২০ ভাগ সঞ্চয়। বাংলার মায়েদের মুষ্টি চালের কথা শুনেছেন, প্রতিদিন রান্নার চাল থেকে এক মুষ্টি চাল সঞ্চয় করা? আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই এক মুষ্টি চাল তুমি উঠিয়ে রাখো কেন? তিনি বলতেন বিপদের সময় কাজে লাগবে। সে বয়সে বিপদ শব্দের সাথে আমার তেমন পরিচয় হয়নি। আমার নানীকেও ঠিক এই কাজটি করতে দেখেছি।

আমার মা তার আলমিরার বিভিন্ন তাকে বিভিন্ন শাড়ির ভাজে টাকা লুকিয়ে রাখতেন। যদিও আমার মা জানতেন না যে আমি জানতাম কোন শাড়ির ভাজে কত টাকা আছে। আমার মা গোসলখানায় ঢুকলেই, আমি লুকিয়ে ১০ টাকা নিয়ে দোকানে চলে যেতাম। ছোটবেলায় বাবা কাছ থেকে মাটির ব্যাংক উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। প্রতিদিন বিকেলবেলা বাবা অফিস থেকে ফিরলে আমি মাটির ব্যাংক নিয়ে বাবার কাছে যেতাম। তিনি ১/২/৩/৫/১০ টাকা আমার ব্যাংকে ঢুকিয়ে দিতেন।

আমি অসংখ্য ক্যারিয়ারে সফল ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করেছি। দেখেছি প্রত্যেকেই অর্থ সাশ্রয়ের কথা সবার আগে চিন্তুা করে থাকেন। ছোট ছোট খরচও অপরিকল্পিতভাবে করেন না। একভাই তো বলেই ফেললেন, নিজের কামানো টাকা অপ্রয়োজনে খরচ করতে গায়ে লাগে। তবে বুদ্ধিমানেরা অন্যের কামানো টাকা থেকেও সঞ্চয় করতে ভোলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক ছাত্রের সাথে কথা হলো। সে প্রতিমাসে বাবার কাছ থেকে যা পায় সেখান থেকে প্রতিমাসে জমানোর চেষ্টা করে। এখন সে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছে, ইতিমধ্যে তার কাছে প্রায় ৪৪ হাজার টাকার মতো জমেছে। তার কৌশল ছিলো কোনদিন সে মেসে খালি পকেটে মেসে ফিরতো না এবং ডেবিট কার্ড দিয়ে কখনো সে একবারে সব টাকা তুলে ফেলতো না। পাশাপাশি টিউশনি এবং বিভিন্ন লেখালেখী করে যা কামাতো, সব নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমিয়ে রাখতো। তার প্ল্যান সে তার মা-বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে।

এখন আমাদের সঞ্চয়ের পরিকল্পনা থাকেনা বললেই চলে। একটাই অযুহাত, মৌলিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। সঞ্চয় করবো কখন। আসলে এই কথাটা আমি নিজেও অনেকবার বলেছি। ক্যারিয়ারে মাঝামাঝি সময়ে এসে কোন একটি বিপদে পড়ে বুঝতে পেরেছি সঞ্চয় কি জিনিস। তারপর স্বীদ্ধান্ত নিলাম সঞ্চয়ে মনোযোগী হবো। আমি বেশ কিছু স্বীদ্ধান্ত নিলামঃ

  • মৌলিক চাহিদা পূরণ প্রথম লক্ষ্য।
  • অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ।
  • ক্রেডিট কার্ড থাকবে তবে নিজের পকেটে নয়। নিজের পকেটে শুধু ডেবিট কার্ড।
  • একক ইনকামের উপর নির্ভরশীল না হওয়া। সেজন্য খুঁজে বের করলাম এমন কি দক্ষতা আছে যা আমি ব্যবহার করে উপার্যন বৃদ্ধি করতে পারি।
  • ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলে ফেললাম। তারপর মাসিক আয়ের মাত্র ২% কোন চিন্তাভাবনা না করে ব্যাংকে রাখা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে ২% থেকে ৫% তারপর দেড় বছরের মধ্যে ২০% বৃদ্ধি করলাম।
  • এই পদ্ধতি কাজে এলো। ঐ জমানো টাকা আমার কাজে লাগলো যখন ২০১৬ সালে মা, স্ত্রী ও কন্যাকে সহ পবিত্র হজ্জ্ব পালন করতে গেলাম।

আমি নিশ্চিত, আপনারা যারা আমার এই ব্লগ পড়ছেন তারা সবাই পরিপক্ক এবং কিছুটা বুদ্ধি রাখেন। তাই আবেগ দিয়ে আমার লেখাগুলো না পড়ে, বাস্তবতা মাথায় রেখে ব্লগটি পড়ুন। নিজেকে আপনি প্রশ্ন করুন, আসলেই কি আপনার পক্ষে সঞ্চয় করা সম্ভব নয়? অথবা আগামী ছয় মাসের মধ্যে আপনি কি সঞ্চয় শুরু করতে পারবেন না? অথবা আগামী একবছরের মধ্যে?

যদি মনে করেন সম্ভব তাহলে নীচের ধাপগুলো আপনি অনুসরণ করতে পারেন।

১. অর্থ সঞ্চয় শুরু করার প্রথম পদক্ষেপে আপনি এক্ষুনি মাইক্রোসফট এক্সেল খুলে “বেসিক পারসোনাল বাজেট” টেমপ্লেটটি খুলে আপনার প্রতিমাসে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার ফিক্সড ব্যয় বের করুন।

২. প্রতিমাসে আপনার আয়ের উৎসগুলো খুঁজে বের করুন। এবার আয় এবং ব্যয়ের মাঝে পার্থক্য বের করুন। যদি কোন উদ্বৃত্ত না থাকে তাহলে আয়ের উৎস সন্ধানে নেমে পড়ুন।

৩. খরচগুলোকে একটি তালিকার মধ্যে নিয়ে আসুন এবং একটু খুজে দেখুন কোন দিক দিয়ে খরচ কমানো যায় কিনা। অগ্রাধীকার অনুযায়ী খরচ করুন।

৪. একটি প্রবাদ আছে “আয় বুঝে ব্যয় করো” যা বর্তমানে পরিবর্তিত হয়ে বলা হয় “ব্যয় বুঝে আয় করো”। এর অর্থ হলো আপনার মাসিক খরচের সাথে সঞ্চয়ের জন্য ১০% বা ১৫% কে খরচ হিসেবে নির্ধারন করুন। এই ১০% আপনাকে হয় বর্তমান আয় থেকে খরচ হিসেবে বের করতে হবে। নয়তো ১০% আপনাকে নতুন উৎস থেকে আয় করতে হবে।

৫. লক্ষ্য ছাড়া কোন কিছু করা ঠিক নয়। তেমনি সঞ্চয়ও লক্ষ্য ছাড়া করা উচিত নয়। আপনি একটি লক্ষ্য নির্ধারন করুন। স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদী সঞ্চয় লক্ষ্য হতে পারে। দেশের বাইরে ঘুরতে যাবার জন্য বা বিদেশে পড়তে যাবার জন্য বা ফ্ল্যাটের ডাউন পেমেন্ট জমা দেবার জন্য। আবার কোন ব্যবসায় বিনিয়োগের লক্ষ্যেও সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করতে পারেন। একটি লক্ষ্য নির্ধারন করে শুরু দিন।

৬. ছোটবেলায় মাটির ব্যাংকে টাকা রেখে জমিয়েছি। বড় বেলায় অবশ্যই আপনাকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আপনার সঞ্চয় পার্টনার বানাতে হবে। অনেকে আছেন ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসেবে খুলে ফেলেন বা অনেকে কিস্তি ভিত্তিক সঞ্চয় আমানত হিসেবেও কোন একটি ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এছাড়া আরো অনেক উপায় আছে। অভিজ্ঞ কারো সাথে একটু পরামর্শ করে নিতে পারেন।

৬. আরেকটি উপায় হলো ব্যাংকের সাথে এমন একটি সিস্টেম করে নিতে হবে যেন আপনার নির্দিষ্ট পরিমান সঞ্চয়ের কিস্তি অটোমেটিক আপনার সাধারন সঞ্চয় একাউন্ট থেকে কেটে নেয়। অনেক সময় নিজের হাতে টাকা সঞ্চয় একাউন্টে রাখতে কষ্ট হয়। মনে হয় আচ্ছা আজকে এই জিনিসটা কিনে ফেলি, আগামী মাসে একসাথে দুইমাসেরটা একবারে জমা দিয়ে দেবো। সেই দুইমাস আর আসে না।

৭. কি পরিমান সঞ্চয় হচ্ছে সেটা নিরীক্ষণ করুন।

যাইহোক, সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং পরিকল্পনা দুইটাই থাকা চাই। তাই বলে আমি বলছি না জীবনকে একদম তেজপাতা বানিয়ে সঞ্চয় করতে হবে। সবই চলবে কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী। ধরুন আগামী শীতে ৭ দিনের জন্য কক্সবাজারের কোন একটি পাঁচতারকা হোটেলে অবকাশ যাপন করতে যাবেন। হিসেব করে দেখুন কত লাগবে। তারপর জমানো শুরু করে দিন। পরিশেষে আমার একটি পছন্দের প্রবাদ উল্লেখ করছি

“It’s not about how much money you make. It is about how you save it”

লেখকঃ

কে. এম. হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

ইমেইলঃ [email protected]

Yellow Rediscovering Amphibians Blog Banner

Growth Mindset

আমার এক সময় একটা সমস্যা হতো। আমার কাছে কেউ আইডি কার্ড চাইলেই মেজাজ গরম হয়ে যেতো, অপমানিত বোধ করতাম। ভাব এমন হতো যে আমার মতো মানুষের কাছে আইডি কার্ড চায় কেমন করে।

প্রায় ১৫ বছর আগের একটি ঘটনা। একবার উত্তরা থেকে মিরপুর আসতে প্রায় দুই ঘন্টা লেগে গিয়েছিলো। ঘামে পুরো শরীর ভেজা। একটি অফিসের গেট দিয়ে ঢুকতেই অল্প বয়সী এক নিরাপত্তারক্ষী মোটা গলায় আমাকে বলে আপনার আইডি কার্ড কই। আমার মাথায় পুরো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বলে কি? আমি কে এম হাসান রিপন, এই অফিসে প্রতিমাসে আসি, সেখানে এই ছোকড়া আমার কাছে আইডি কার্ড চায়!

মেজাজ গরম করে দিলাম একটা ধমক। পাশ থেকে আরেকজন সিনিয়র নিরাপত্তারক্ষী এসে বলল স্যার যান, মনে কিছু কইরেন না। তারপর যুদ্ধে জয়ী সেনাপতির মতো হেঁটে ভেতরে গেলাম। তারপর শুনলাম সেই অফিসে রুল জারী হয়েছে, গেট দিয়ে যেই ঢুকবে, তাকে আইডি কার্ড দেখাতে হবে।



তার কিছু দিন পর স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেলাম কম্পিটেন্সি বেইজড এডুকেশনের (Competency Based Education) উপর প্রশিক্ষণ নিতে। সাথে ছিলো আরো ১০ জন দেশী ভাই ও বোনেরা। আমাদের প্রশিক্ষক ছিলেন মি. জন আর্থার। প্রথমদিন টেইফ হান্টার ইন্সটিটিউটের (TAFE Hunter Institute) গেটের কাছে আসতেই দেখী সিকিউরিটি চেকপোস্ট। এইবার আর কোন ভুল হলো না। সবাই আইডি হাতে তালুতে নিয়ে রাখলাম। বিদেশ বলে কথা।

আমি মনে মনে ভাবছি, দেখি মি. জন আর্থার কি করে। ও আল্লাহ উনি দেখী আমাদের চেয়েও একধাপ এগিয়ে। উনি আইডি কার্ড ঝুলালেন গলায়। তারপর সিকিউরিটি দরজার কাছে আসতেই বিশাল আওয়াজ করে নিরাপত্তারক্ষী হেসে বললেন “গুড মর্নিং মি. আর্থার! মি. আর্থারও হাসি দিয়ে বললেন গুড মর্নিং! তারপর আইডি দেখালেন, সাথে থাকা ব্যাগও দেখালেন। তারপর পেছন পেছন আমরাও সবাই তাই করলাম।

তারপর চলে গেলাম তিন অথবা চার তলায়। দেখি মি. জন আর্থার নেই। দাড়িয়ে আছি, হঠাৎ দেখি স্যার আসছেন একটি ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে। ট্রলির ভেতর রাখা আছে সব লার্নিং এইড (মার্কার, সাদা কাগজ, রঙিন কাগজ, স্টিকি নোট, স্কেল, প্রিন্টার মেশিন আরো কত কি) এবং সাথে রুমের চাবি। নিজে ক্লাশের দরজা খুললেন, সব লাইট জ্বালিয়ে দিলেন এবং আমাদের বসতে বললেন। তারপর টানা ৮ ঘন্টা ক্লাশ। মাঝে তিনবার দরজা খুলে দিলেন ব্রেকফাস্ট, মধ্যাহ্নভোজ এবং বিকেলের চায়ের জন্য। তারপর ঘোষনা দিলেন আজকে মতো ক্লাশ শেষ।

আমরা সবাই মহাখুশি। কিন্ত সাথে সাথে আরেকটি ঘোষনা এলো। সকালে ক্লাশে ঢুকে যেরকম পেয়েছিলাম, সেরকম রেখে ক্লাশ থেকে বের হতে হবে। ব্যাস সবাই যার যার চেয়ার ঠিক করলাম, মেঝে থেকে ময়লা উঠিয়ে নির্ধারিত বিনে রেখে দিলাম। লাইট, হিটার বন্ধ করে বের হলাম। মি. জন আর্থার দেখি বের হচ্ছেনা না। উনি একটি ফরম পূরণ করছেন। ক্লাশে এসে যা যা পেয়েছিলেন, সেগুলো আবার বুঝিয়ে দেবার জন্য ফরম পূরণ করছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দিনে আমার সঠিক আচরনের উপর একটি সার্টিফিকেট কোর্স করা হয়ে গেলো। ঢাকায় এসে অস্ট্রেলিয়ায় যা দেখেছি, যা পর্যবেক্ষন করেছি সব নিজের বাড়িতে, অফিসে, ক্লাশে প্রয়োগ করার চেষ্টা করলাম। আমার সহকর্মী শিক্ষকদেরও অনুরোধ করলাম। কেউ মানলেন, কেউ উপেক্ষা করলেন। যাইহোক তারাও হয়তো অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত প্রয়োগ করবেন না বলে ভেবেছিলেন। ক্লাশে কেমন করে একজন শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয় বা তার লার্নিং নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে আরেকটি আর্টিক্যালে লিখবো।

যাইহোক আসল কথায় আসি। পরিচয় জানতে চাইলে বা সিকিউরিটি চেক পোস্টের নিয়ম মানতে বললেই আমাদের সবার আত্মসম্মানে বেধে যায়।

  • মার্কেটের আর্চ গেট দিয়ে ঢুকতে বললে, রাগ হয়ে তাকিয়ে পাশ দিয়ে ঢুকি
  • সেদিন এয়ারপোর্টে নিরাপত্তারক্ষীর সাথে বিরাট ঝগড়া হলো যাত্রীর সাথে থাকা এক আত্মীয়ের। যেভাবেই হোক তিনি ঢুকবেন। আর নিরাপত্তারক্ষী টিকিট ছাড়া ঢুকতেই দেবে না। এদিকে দুরে দাড়িয়ে থাকা মানুষরা মুখে যা আসছে তাই বলে ভিন্নভাবে দেশের প্রশংসা করে যাচ্ছেন। আমি একজনকে বললাম ভাই ঐ গেট দিয়ে ঢুকতে হলে টিকিট দেখাতে হয়, এটাই নিয়ম। তারপরও তিনি মানবেন না।
  • ব্যাংকের কর্মকর্তা একজনকে বললেন একাউন্ট খুলতে হলে, জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে। ভদ্রলোক তো রেগে মাতাল। পরেরটা আর নাই বলি। একজন বুঝাচ্ছেন, অন্যজনও যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।

পরিচয় পত্র এবং আত্ম অহংকার যেন এক সাথে চলে। পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র, অফিস আইডি বা বর্তমানে মুভমেন্ট পাস, মেম্বারশীপ কার্ড, এই সব কিছু উত্তোলন করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে আত্ম অহংকারকে দিয়ে তালা মেরে দেই। এই তালা খোলার সাধ্য কারো নাই। এই আমরাই যখন বিদেশে যাই তখন আত্ম অহংকার নামক তালাটি দেশে রেখে যাই।

এক বড় ভাই আমার সাথে ঢাকায় ফিরছেন। প্লেনে তার সাথে আলাপ হচ্ছিলো। দেখলেন ভাই কি নিয়ম। সব জায়গায় কঠিন নিয়ম। কোন দুই নম্বরী নাই। প্রত্যেকটি জায়গায় কি সুন্দর পরিবেশ। আর আমাদের দেশে, কি আর বলবো। আমাদের প্লেনটি বাংলাদেশের মাটি ছুতেই তিনি পকেট থেকে মোবালইটি বের করে তার এক সহকারীকে ফোন দিয়ে বললেন সাথে এলইডি টিভি আছে, বের করার ব্যবস্থা কর। তারপর প্লেন থামার আগেই দাড়িয়ে হ্যান্ড ব্যাগ নামানো শুরু করে দিলেন। তারপর আমিও চুপ, তিনিও চুপ।

শুরুতেই যে অফিসের কথা বলেছি, পরে অবশ্য শুনেছি তারা সব নিরাপত্তরক্ষীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং পাশাপাশি সাবাসী দিয়ে সবাইকে বলা হয় ”ধন্যবাদ তোমাদের দায়িত্ববোধের জন্য। কিন্তু বাবারা সবাইকে প্রথমেই চোর ভেবো না”।

সিকিউরিটি পোস্ট এমন একটি জায়গা যেখানে নিরাপত্তরক্ষীরা নিজেরদের ছাড়া বাকি সবাইকেই অবিশ্বাসের চোখে দেখে। আর দেশের মানুষরা নিজেদের ছাড়া সব চেকপোস্টকেই আত্ম অহংকারের চোখ দিয়ে দেখে। আমার মনে হয় পরিচয় পত্র দেখতে চাওয়া এবং পরিচয় পত্র দেখাতে পারার মধ্যে সামান্য একটু ফাঁক আছে। যেটা পূরণ করতে পারলেই আর আত্ম অহংকার ঢুকবার জায়গা পাবে না। ইন শা আল্লাহ এই ফাঁকটিও আমরা বন্ধ করতে পারবো এবং ফেসবুকের ভাইরাল ভিডিও থেকেও মুক্তি পাবো।

লেখক

K M Hasan Ripon, Executive Director, BSDI

Email: [email protected]

Black Moon Blog Banner

How do you plan for your workday? Employability Skills Fact!

১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করা হলো, তোমাদের কার কার ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য পরিকল্পনা করেছো?

১) ৮৪% তরুনদের কোন পরিকল্পনাই ছিলোনা

2) ১৩% তরুনদের পরিকল্পনা ছিলো এবং সেটা কাগজে তোলা ছিলো মাত্র।

৩) ৩% তরুনদের পরিকল্পনা ছিল, কাগজে সুন্দর করে লেখা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।

১০ বছর পর সেই তরুণদের সাথে আবার কথা বলা হলো। দেখা গেলো ১৩% তরুন যাদের পরিকল্পনা ছিলো এবং কাগজে তোলা ছিলো, তারা ৮৪% তরুণ যাদের কোনো পরিকল্পনাই ছিলোনা তাদের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করছে। আর ৩% তরুন যাদের পরিকল্পনা ছিল, কাগজে সুন্দর করে লেখা এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তারা যে অর্থ উপার্জন করছে সেটা ৯৭% তরুণদের সমপরিমাণ অর্থ। অনেকে হয়তো অর্থের কথা পড়ে মনে মনে ভাবতে পারেন, তাহলে অর্থই কি সব? আসলে অর্থ এখানে একটি পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র।

যাইহোক পরিকল্পনাহীন জীবন, পাল বা ইঞ্জিনবিহীন নৌকার মতো। যেখান থেকে ঢেউ ধাক্কা মারবে, আপনি সেদিকে রওয়ানা দেবেন এবং একসময় ঝড় এলে ডুবে যাবেন। আমার একবার মাথায় প্রশ্ন এলো আমি আজ সকালে বিছানা থেকে উঠলাম কেন? আপনিও কি একবার ভেবে দেখেছেন আপনি আজ সকালে বিছানা থেকে উঠেছেন কেন? কোন কাজটি করবার তাড়নায় আজ আপনি মধুর ঘুমকে বিসর্জন দিলেন? যেদিন আমি আগামীর দিনের পরিকল্পনা ছাড়াই বিছানাতে যাই, সেদিন ঘুম থেকে জেগে উঠবার তাড়না ভেতর থেকে অনুভব করি না। একসময় আমার মস্তিষ্ক আমাকে জোড় করে উঠিয়ে দেয়। উঠে দেখি সূর্য মাথার উপরে চলে এসেছে। ধীরে ধীরে প্রাতঃরাশ শেষ করে তারপর চিন্তা করি কি করবো? হঠাৎ দেখী ফেসবুক, লিংকডইন বা ইউটিউভে নটিফিকেশন, একটু দেখবো এই ভেবে মুহুর্তে তিন ঘন্টা শেষ, আসরের আযান। জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবসের কোনও মূল্য ছাড়াই সমাপ্তি।



পরিকল্পনাহীন দিবস আপনাকে অন্তত তিনটি জায়গায় প্রতিদিন ব্যর্থ করে দেবে।

সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যর্থতা

মানুষের কাজই হলো ছুটে চলা। হয় স্বপ্ন নিয়ে নয়তো স্বপ্ন ছাড়া। মানুষ ছুটবেই। এই ছুটে চলার মাঝে রয়েছে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রবল স্প্রিহা। তখন সে খুঁজে বেড়ায় তার স্বপ্ন পূরণে কে তাকে সহযোগিতা করতে পারে। যাকে দেখে মনে হয় স্বপ্ন পূরণে তার সাহায্য পাওয়াটা দরকার, সে তার দিকেই এগিয়ে যায়। কিন্তু যদি কাছে গিয়ে দেখে স্বপ্ন আছে কিন্তু পরিকল্পনাহীন মানুষ, ধীরে ধীরে দুরে সরে আসে। এটাই বাস্তবতা। সফল মানুষ আবেগ এবং বাস্তবতার মাঝামাঝি বসবাস করার চেষ্টা করে। আর দাদার কাছে শুনেছি পরিকল্পনাহীন মানুষ আবেগ নিয়ে থাকে এবং বেলা শেষে আবেগ দিয়েই সবাইকে দোষারোপ করে। সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দরকার পূর্ণ দিবসের ব্যবহার। কিন্তু পরিকল্পনাহীন মানুষ দিবসের অর্ধেকটিই কাটিয়ে দেয় হয় ঘুমিয়ে নয়তো অযথা সময় অপচয় করে।

অর্জনে ব্যর্থতাঃ

পরিকল্পনাহীন মানুষ অযুহাতে বিশ্বাসী। তারা সবসময় শেষ তারিখ ভুলে যান। অফিসের জরুরী মিটিং, কলেজের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাশ, স্কলারশীপের আবেদন, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফোন কল ইত্যাদি। পরিকল্পনা নাই তো দিন শেষে অর্জনও নাই। আর এটাই হলো বাস্তবতা। আমার এক শিক্ষক আমাকে একটি সূত্র শিখিয়েছিলেন “গতকাল এবং আজ” এর মধ্যে কর্মের ফলাফলের দিক থেকে পার্থক্য থাকতেই হবে। পরিকল্পনার অভাবের কারনে কোন কাজই সময় মতো শেষ করা যাবে না। আমার নিজেরই এমন হয়েছে যে একটি কাজের ধারনা আমি তৈরি করেছি কিন্তু পরিকল্পনা করিনি। ঠিকই ছয়মাস পর দেখি আমারই এক সহকর্মী সেই কাজটি করে বাহাবা নিয়ে যাচ্ছে। আমার ধারনা পৃথিবীতে একই আইডিয়া একসাথে অনেক মানুষের মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়ায়। যেমন এমন অনেক সময় হয়েছে বন্ধুদের ওয়াটসএ্যাপ গ্রৃপে আমি একটি মেসেজ দিয়েছি। ঠিক এক বা দুই সেকেন্ড পর আমার আরেক বন্ধু আমার মতো হুবহু মেসেজ পাঠিয়েছে। এইটা হচ্ছে আইডিয়া ক্ল্যাশ। ধরে আমি একটি আইডিয়া রাত দুইটার সময় তৈরি করে ঘুমিয়ে গেলাম এবং যথারীতি দুপুর বারোটায় ঘুম থেকে উঠে ঐদিন আর আইডিয়াটি নিয়ে কাজ করা হয়নি। কিন্তু পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বসে আমারই মতো আরেকজন ঠিকই আইডিয়াটি নিয়ে পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের ঘোষনা দিয়ে দিয়েছে। ব্যস মুহুর্তেই আমি হারিয়ে গেলাম।

সৃজনশীলতা কাজে আসে না

আজ আপনি সৃজনশীল, অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারনে আপনার সেই সৃজনশীলতা আজ হুবকির মূখে। ধরুন আপনি খুব ভালো এ্যানিমেশনের কাজ জানেন। কিন্তু আপনি অলস এবং পরিকল্পনাহীন মানুষ। এখন ব্যাপারটি কি হচ্ছে? আপনার এলাকায় আপনি একজন যিনি এ্যানিমেশনের কাজ পারেন তাই মানুষ আপনার অলসতাকে উপেক্ষা করে আপনার কাছে আসছেন এবং কাজ দিচ্ছেন। আপনিও অলসতা এবং পরিকল্পনার অভাবে ঠিক সময়ে কাজ হস্তান্তর করতে পারছেন না। মানুষ আপনার বিকল্প খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। আবার পরিকল্পনা না থাকার করনে আপনি সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারছেন না। যার ফলে আপনার সৃজনশীলতা ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে। এরকম অসংখ্য মেধাবী আমাদের চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা ছাত্র, পেশাজীবী, শিক্ষক সবারই প্রয়োজন। দিনের সঠিক পরিকল্পনা আপনাকে একটি সফল মাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে, মাস গিয়ে হবে বছর এবং বছর শেষে হবে কাঙ্খিত প্রাপ্তি। “ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।” ছোটবেলার এই কবিতাটির কথা মনে আছে? পবিত্র কোরআন শরীফের ১৩ নম্বর সূরার ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উল্লেখ করেছেন

”মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। কোন সম্প্রদায় সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তাহলে তা রদ করার কেহ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক (ওয়ালী) নেই“ আল কোরআন, ১৩:১১

এই আয়াতটি থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি আল্লাহ আমাদের অবস্থার পরিবর্তন ততক্ষন পর্যন্তু করবেন না,যতক্ষণ না আমরা নিজের মধ্যে পরিবর্তন না আনবো“। নেয়ামত সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহ ছড়িয়ে রেখেছেন আমাদের জন্য। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আর এ কাজটি আপনার জন্য আপনাকেই করতে হবে, কেউ করে দেবে না। যদি সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে না করেন তাহলে আপসোস আপনাকেই করতে হবে, অন্য কেই করবে না।

(এই ভিডিওটি দেখুন! এই ভিডিওটি ব্লগ অনুসারে তৈরি করা হয়েছে)

 

আমি কিছু পরামর্শ এই অংশে উল্লেখ করতে চাই যা আপনার কাজে দেবে দৈনিক কাজের পরিকল্পনা করতেঃ

১. পূর্ণ দিবালোক কাজে লাগানঃ

সূর্যের সাথে তাল রেখে নিজের জীবনকে পরিচলনা করবার অনুশীলন করুন। ১০ থেকে ১২ ঘন্টা আমরা পূর্ণ দিবালোক পেয়ে থাকি। আমি একসময় ভাবতাম সৃজনশীল কাজ রাতের বেলায় ভালো করতে পারি। কিন্তু পরবর্তিতে খেয়াল করে দেখলাম যে না রাতের বেলায় কাজ করছি কিন্তু কারো সাথে পরামর্শ করতে পারছি না। কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে আমাকে অপেক্ষা করতে হতো পরের দিন সকাল পর্যন্ত। আর ততক্ষণে সেই উৎসাহে ভাটা পরে যেত। একদিন চিন্তা করলাম তারাতারি রাতে ঘুমিয়ে ফজরের আযানের সময় ঘুম থেকে উঠে কাজ করবো। করলামও তাই। বাড়ির সবাই মনে করলো আমার বোধ হয় শরীর খারাপ করেছে। আমি খুব সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়লাম, হালকা ব্যায়াম করলাম। খুব সাধারন নাস্তা করে কাজে বসে গেলাম। সকাল ৫:৩০টা থেকে ৭:৩০টা পর্যন্তু  আমি যে দু-ঘন্টা কাজ করলাম, সেটি সারারাত জেগে ৪/৫ ঘন্টা কাজের চেয়ে অনেক বেশী প্রোডাক্টিভ ছিলো। আমার উপলদ্ধি হলো খুব সকালে পরিকল্পনা করলে সেটি দিনের শেষভাগের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা সহজ। যা সারারাত জেগে পরের দিন করা সম্ভব হয় না।

২. কাজ ভাগ করে ফেলাঃ

এটাই স্বাভাবিক আপনার প্রতিদিন অসংখ্য রকমের কাজ থাকবে। তাই আপনাকে কাজ গুলোকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে ফেলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকে বাড়িতে একটি করে আলমিরা আছে। ধরুন আলমিরাতে কোন ড্রয়ার নেই। সবগুলো কাপড় আপনি একসাথে জড়ো করে রাখেন। যখন বেড়াতে যাবার জন্য আলমিরার দরজা খুলবেন, তখন আপনি দিশেহারা হয়ে যাবেন। কোন কিছুই সময় মতো খুঁজে পাবেন না। সেজন্য আমরা কি করি? প্রতিটি ড্রয়ার নির্দিষ্ট কিছু কাপড়ের জন্য বরাদ্দ করে রেখে দেই। ঠিক একইভাবে কাজগুলো কে যদি আমরা ভাগ করে ফেলতে পারি তাহলে আমি দিন শেষে মূল্যায়ন করতে পারবো কোন কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বা কোন কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারিনি।

৩. গ্রুপিংঃ

কাজের গ্রুপিং করা বা গ্রুপ অনুসারে তালিকা করা অত্যন্ত জরুরী। আমি যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কাজ করি। তাই আমাকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়। যেমন আমাকে –

  • মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং বিভাগের সাথে কাজ করতে হয়।
  • সেলস টিমের সাথে কাজ করতে হয়।
  • প্রতিষ্ঠানের কৌশল নির্ধারন করতে হয়।
  • এ্যাডমিন টিমের সাথে কাজ করতে হয়।
  • ফাইন্যান্স এন্ড একাইন্টস টিমের সাথে পরামর্শ করতে হয়।
  • মিটিংয়ে যোগদান এবং ইমেইল বা এসএমএস এর জবাব দিতে হয়।
  • নেটওয়ার্কিং করতে হয়।
  • জ্ঞান অর্জন করতে হয়, জ্ঞান শেয়ার করতে হয়।
  • ক্লাশ করতে হয়, ক্লাশ নিতে হয়।
  • পরিবারকে সময় দিতে হয়, ইত্যাদি।

আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের প্রতিদিন এই দশ ধরনের কাজ কমবেশী করতেই হয়। আমার চেয়ে যারা আরো বড় মাপের মানুষ তাদের কাজের গ্রুপ আরো বড়। এই দশটা হলো আমার কাজের গ্রুপ, যার ভেতর আরো অনেক সাব টাস্ক থাকতে পারে। অতএব আপনার কাছে যদি নিজের কাজের গ্রুপটি পরিষ্কার থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন নিশ্চিত করতে পারবেন আপনার প্রোডাক্টিভিটি। প্রতিদিন রাতে নিজের কাজের তালিকাটি করে যদি ঘুমাতে পারেন, তাহলে আগামীকাল সবসময় আপনার হবে।

৪. প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

বর্তমানে নিজের পরিকল্পনার জন্য অনেক সহজ এবং ফ্রি টুলস আপনার হাতের কাছেই আছে। আপনি সহজেই এই টুলসগুলোকে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ক্যালেন্ডারে কাজের তালিকা দিয়ে রাখতে পারেন। ইমেইলের টাস্কে নিজের টু-ডু-লিষ্ট তৈরি করতে একটা সময়সীমা দিয়ে রাখতে পারেন। এছাড়া অসংখ্য টাইম ম্যানেজমেন্ট টুলস আছে যা আপনাকে সবসময় আপডেট থাকতে সাহায্য করবে।

৫. অগ্রাধিকার খুঁজে বের করতে হবেঃ

সারাদিন অসংখ্য কাজের কথা মাথায় আসে। অনেক কাজ করতে ইচ্ছে করে। সারাদিনের কিছু কাজ আছে যা করতেই হবে। আবার কিছু কাজ আছে যা পরে করলেও চলবে। এখন আপনি যদি বুঝতে ভুল করেন, আর যা করতেই হবে তা না করেন তাহলে দিনশেষে ক্ষতি আপনার নিশ্চিত। তাই তিনটি শব্দ আপনাদের জন্য আমার তরফ থেকে যা আমি ফলো করি।

  • “Must (অবশ্যই করতে হবে)”,
  • “Should (করা উচিৎ)” এবং
  • “Could (শেষ করতে পারলে ভালো)”।

এই তিনটি ক্যাটাগরিতে আমি আমার কাজ প্রতিদিন ভাগ করে ফেলি। আমার লক্ষ্য থাকে তিনটি ক্যাটাগরির কাজই শেষ করা। তবে “Must” ক্যাটাগরির কাজ শেষ না করে ঘুমাবো না আবার সারারাত জাগবোও না। অতএব অগ্রাধিকার যদি বুঝতে না পারি, তাহলে কারো অগ্রাধিকারে আমিও থাকতে পারবো না।

প্রায় ১৫০০ শব্দ লিখে ফেললাম ‍দিনের পরিকল্পনা বোঝাতে গিয়ে। যারা শেষ পর্যন্ত পড়লেন তারা আশাকরি বুঝতে পেরেছেন দিনের পরিকল্পনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেন্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে

“If you fail to plan, you are planning to fail” যার বাংলা অর্থ দাড়ায় ”আপনি যদি পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনি ব্যর্থ হবার পরিকল্পনা করছেন”।

আরেকটি উক্তি আমার খুব পছন্দের

“A goal without a plan is just a wish”. অর্থাৎ পরিকল্পনা ব্যতীত লক্ষ্য কেবল একটি ইচ্ছা ছাড়া আর কিছুই নয়।

অতএব পরিকল্পনা করুন, সেই অনুযায়ী কাজ করুন। কাঙ্খিত সাফল্য নিশ্চিত আপনার হবে ইন শা আল্লাহ।

 

Author: K M Hasan Ripon , Executive Director, BSDI

Email: [email protected]

Illustration Lion Blog Banner

লকডাউনে হতাশ না হয়ে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন?

কোভিড-১৯’র মহামারী চলছে। সবার জীবনে প্রভাব পড়েছে। সবাই কমবেশী আঘাত প্রাপ্ত। ছাত্র, পেশাজীবি বা ব্যবসায়ী সকলেই যেন এক শেষ না হওয়া দুঃশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সকলেরই একটাই প্রশ্ন কবে শেষ হবে এই মহামারী (Pandemic)? কবে ফিরে আসবে সেই পূর্বের স্বাভাবিকতা। এই নতুন স্বাভাবিক আর ভালো লাগছে না! এখানে বলে রাখি ২০২০ এর শুরুতে যখন প্রথম কোভিড ১৯ (Covid19) মহামারী বিশ্বব্যপী শুরু হয় তখন একটি নতুন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হই তাহলো ”নিউ নরমাল” (New Normal) বা নতুন স্বাভাবিক। যদিও ২০০৮-২০১২ সালে বৈশ্বিক মন্দার (The global recession) কালে আরেকবার নিউ নরমাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

যাই হোক নতুন স্বাভাবিক মানে হলো যখন পূর্বের ন্যায় আমরা জীবন পরিচালন করতে ব্যর্থ হই। একটি বিষয় আমাদের স্মরণে রাখতেই হচ্ছে যে চাহিদা আমাদের আগের মতোই আছে কিন্তু তা পূরণ করতে আমাদের নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হচ্ছে। চাহিদা কি আমাদের কমেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে না। মাধ্যম শুধু বদলেছে। মহামারীর মধ্যেও আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের গতিও থেমে নেই। শুরুতেই বলেছি চাাহদা পূরণের মাধ্যম বদলেছে। অর্থাৎ বৃহৎ অংশে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। মানুষের চাহিদা পূরণে বেড়েছে কর্মীর প্রয়োজন, তবে আগের সেই স্বাভাবিক কাজের জন্য নয়।

এপ্রিলের শুরুতেই ড্যাফোডিলের বেশ কয়েকটি পদে কর্মী নিয়োগের জন্য ইন্টার্ভিউর আয়োজন করা হয়। যথারিতি কোভিড-১৯ এর কারনে সম্পূর্ণ ইন্টার্ভিউ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রহণ করা হয়। কম্পিউটারের স্ক্রিনে আমরা যারা ইন্টার্ভিউ নেবার জন্য উপস্থিত ছিলাম তারা সবাই ক্যামেরা অন করে ফরমাল ড্রেসআপে বসেছিলাম এবং একজন করে ইন্টাভিউর জন্য তৈরি করা ভার্চুয়াল বোর্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছিলেন। আমার দায়িত্ব ছিলো প্রার্থীর সাথে প্রথমে আলাপ শুরু করা।

দেখে এতো আনন্দিতবোধ করছিলাম যে আমাদের দেশের সদ্য গ্রাজুয়েটরা খুব চমৎকার করে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছিলেন ভার্চুয়াল ইন্টার্ভিউর সাথে। তারা চমৎকার করে তাদের স্ক্রিন শেয়ার করছিলেন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলেন, প্রয়োজনে নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন ফাইল খুলে দেখাচ্ছিলেন এবং নিজেদের সোস্যাল মিডিয়ার সাইটগুলোর ব্যবহার চমৎকার করে ব্যাখ্যা করছিলেন।

এদের মধ্যে আবার কিছু গ্রাজয়েট ছিলেন যারা নিজেদের মুখ ক্যামেরার সামনে রাখতেই পারছিলেন না। অনেকে আবার স্ক্রিন শেয়ার করবার বিষয়টি কি সেটাই ধরতে পারছিলেন না। অনেকে লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হতেই পারেন নি। যাইহোক সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা যেমন আমার হলো তেমনি আমার ধারনা যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদেরও হয়েছিল আশা করছি। বর্তমানে এমন এক সময় আমরা পার করছি যখন আমাদের অনেকেরই মাথা শুন্য মনে হচ্ছে। অনেকেই হয়তো আছেন যারা কোন কিছু ভাবতে পারছেন না। চুপচাপ ঘরে বসে আছেন। কোন পরিকল্পনা করতে পারছেন না। পবিত্র কোরআন শরীফের দুটো আয়াত আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই –

নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট পরিশ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি”সূরা আল বালাদ (৯০), আয়াত

বিপদে যারা ধৈর্যশীল, আল্লাহর অনুগ্রহ তাদের সাথেই থাকে”- সূরা আনফাল (০৮), আয়াত ৬৬ (আয়াতের শেষ অংশ)

উপরের দুটো আয়াত থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা কোনভাবেই বিপদে ভেঙ্গে না পরি। বরং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিহার করে, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে, ধৈর্যশীলতা দিয়ে বিপদকে মোকাবেলা করতে থাকি।

শুরুতেই যেটি বলেছিলাম মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। অনেক কিছুই আর আগের মতো হচ্ছে না। তবে মানুষের চাহিদা থেমে নেই। এখনো প্রতিটি ব্যবসার পন্য বা সেবা একইভাবে মানষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে হচ্ছে। প্রয়োজন হচ্ছে কর্মীর তবে আগের মতো যেহেতু পন্য বা সেবা মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক কার্যে যেমন এসেছে পরিবর্তন, কর্মী নিয়োগেও আনতে হচ্ছে নতুনত্ব।

সবারই বিশ্বাস রাখতে হবে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে বা হবেই। প্রতিটি দেশে কোভিডের আক্রমন একেক রকম। বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি বছরের শুরুতে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কোভিডের সংক্রামন কিছুটা উর্ধ্বমূখী থাকে। তার মানে চার মাসের একটি বিরতি আমাদের না চাইতেও নিতে হচ্ছে। এই সময়টিতে আমরা নিজেদের জন্য কিছু পরিকল্পনা করে নিতে পারি।



আপনার পরিকল্পনাকে আপনি পাঁচটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারেনঃ

১. সম্পর্ক উন্নয়ন

মানষের সাহায্য ছাড়া কখনোই মানুষ উপরে উঠতে পারবে না। এটি একটি চিরন্তন সত্য বাণী। কিন্ত আমরা দেখতে পাই এই বাণী আমাদের যখন বিশ্বাস করার প্রয়োজন তখন আমরা করছি না। আপনি খুব সহজেই এই কাজটি করতে পারেন। আমাদের প্রত্যেকের কাছেই আছে লিংকডইন এবং ফেসবুকের মতো দুটি বিশাল সম্পর্ক উন্নয়নের হাট। আপনার কাঙ্খিত সেক্টরের সফল প্রফেশনালদের সান্নিধ্যে নিজেকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করুন। তাদের বিভিন্ন অনলাইন পোস্ট, আর্টিক্যাল, ব্লগ, ভিডিও, লাইভ উপস্থিতি উপভোগ করুন, বোঝার চেষ্টা করুন এবং নিজে নিজে ব্যাখ্যা করুন। তারপর আপনার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা লিংকডইন মেসেজ ব্যবহার করে আপনার মন্তব্য করুন বিনয়ের সাথে। নিজের তৈরী সিভি, ভিডিও রিজুমে, ব্লগ, ভিডিও প্রফেশনালদের কাছে পাঠিয়ে ফিডব্যাকের জন্য অনুরোধ করুন। আমি বিশ্বাস করি ১০০ জনকে পাঠালে অন্তত ১০ জন অবশ্যই আপনাকে তাদের মন্তব্য দেবে।

আমার ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট (https://kmhasanripon.info) থেকে একটি ব্লগ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা একটি ছেলে এতো সুন্দর করে বিশ্লেষণ করলো, পড়ে আমি মুগ্ধ। আমি তার সাথে কথা বলরাম-

– আমি তাকে বললাম আপনি কি লিখতে পছন্দ করেন।

– জী! আমি লিখতে পছন্দ করি।

– আমি যদি কোন একটি বিষয় আপনাকে দেই, আপনি কি লিখতে পারবেন?

– আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো স্যার

আমি তাকে একটি বিষয়বস্তু দিয়ে বললাম ২৫০ শব্দের ভেতর একটি আর্টিক্যাল তৈরি করুন। ঠিক সময়ে আর্টিক্যাল লিখে আমার কাছে জমা দিলো। আমি পড়ে তাকে আমার অফিসে কফি খাবার আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করবার জন্য অনুরোধ করলাম ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট ডেভেলপার হিসেবে। অতএব এই কঠিন সময়েও কাজ পাওয়া যাবে এবং কাজে উন্নতি করা যাবে কাজ যত যাইহোক কাজ থেমে নেই।

আগামী চারমাসের একটি পরিকল্পনা করুন। আপনার পছন্দের সেক্টর বা সেক্টরের বাইরে কত নতুন মুখ আপনি চিনবেন এবং আপনাকে চেনাবেন। সম্পর্ক উন্নয়নে নীচের কয়েকটি কাজ করে দেখুনঃ

  • ইমেইলের মাধ্যমে নিজেকে বিনয়নের সাথে পরিচিত করুন
  • ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা লিংকডইনের মাধ্যমে সফল ব্যক্তিদের সাথে কানেক্ট হবার চেষ্টা করুন। আমার একটি থিওরী আছে, কেউ যদি পাঁচবারের মধ্যে আপনার কোন কমেন্ট বা প্রশংসার বা প্রশ্নের জবাব না দেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনাকে তার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আরো প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বা লিংকডইনের মাধ্যমে আপনার সিভি বা ভিডিও রিজুমির উপর ফিডব্যাক দেবার জন্য অনুরোধ করুন।
  • বিভিন্ন প্রফেশনাল গ্রুপ বা পেইজে মেম্বার হয়ে ক্রিয়েটিভ আলোচনায় অংশ নিন।
  • অযথা সমালোচনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • প্রতিদিন ভালো কাজের প্রশংসা করুন এবং ভালো কাজ করছে এমন মানুষদের ধন্যবাদ দিন।
  • অহেতুক সমালোচনামূলক পোস্ট, ভিডিও, লাইভ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। মনে রাখবেন এই সকল অহেতুক কন্টেন্ট আপনি আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে দেখছেন আর বিনিময়ে তারা ফেসবুক বা লিংকডইন থেকে আয় করছে। আর আপনি নিজের অজান্তে করছেন নেতিবাচকতার অনুশীলন।

২. অভিজ্ঞতা অর্জন

অধিকাংশ মানুষ আমরা মনে করি অভিজ্ঞতা অর্জন পড়াশুনা শেষ করার পর। যদিও উন্নত বিশ্বের মানুষেরা সারাজীবনই ব্যয় করে থাকেন ব্যতিক্রমধর্মী বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আবার অনেকে মনে করেন অভিজ্ঞতা অর্জন মানেই হলো ৯-৫টা চাকরি। একবার সদ্য পাশ করা এক গ্রাফিক্স ডিজাইনার “লিটন” আমার কাছে আসলেন ইন্টার্ভিউ দিতে। আমি তার ডিজাইন দক্ষতা দেখে বেশ মুগ্ধ। তাকে জিজ্ঞেস করলাম এতো ডিজাইন দক্ষতা অর্জন করেছেন কিভাবে? এখানে বলে রাখি লিংকডইনে তাকে আমি দুটি এ্যাসাইমেন্ট দিয়েছিলাম যা খুব সুন্দর করে সে সম্পন্ন করেছিলো।

সে উত্তরে আমাকে বললো, আমি প্রতিদিন ইউটিউভের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখতাম এবং নিজে হাতে সেগুলো অনুশীলন করতাম। একদিন আমার মনে হলো আমাকে তো কেউ কোন কাজ দিচ্ছে না, তাহলে আমার অভিজ্ঞতা বাড়াবো কিভাবে? আমি বিশ্বের সেরা ৫০টি প্রতিষ্ঠানের লোগো, বিভিন্ন ব্যানার ইউটিউভ দেখে নতুন করে বানাতে শুরু করলাম। যেগুলো বেশী জটিল মনে হতো সেগুলোর ব্যাপারে বড় ভাইদের পরামর্শ নিয়ে করে ফেলতাম। যখন মোটামুটি একটু আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করলো তখন বড় ভাই এবং বিভিন্ন প্রফেশনালদের কাছে কাজ চাইতে শুরু করলাম এবং কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই করে দিতাম। তবে চুক্তি ছিলো যে আমার কাজ ভালো লাগলে তারা আমাকে প্রশংসা পত্র দেবে। ব্যস চার মাসের মধ্যে আমার ঝুড়িতে চলে আসলো নামী দামী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা। তারপর শুরু করলাম প্রারিশ্রমিকের মাধ্যমে কাজ খুঁজবার মিশন।

লকডাউনের এই সময়ে আপনারাও আমার পছন্দের কাজটির জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিতে পারেন। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বুদ্ধি লাগে যা শুধু লিটনের নয়, আপনারও আছে।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধি

দক্ষতা ছাড়া বর্তমান সময়ে কারো কোন মূল্য নেই। আপনাকে যে কাজ দেবে সে আপনাকে নয় বরং আপনার দক্ষতা দেখে কাজ দেবে। এখন প্রশ্ন হলো লকডাউনে দক্ষতা বৃদ্ধি করবেন কিভাবে? আপনারা ঠিকই আঁচ করতে পারছেন আমি আপনাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি। জীং আপনি ঠিকই ধরেছেন। এখানেও আমি প্রযুক্তির ব্যবহার যথাযতভাবে করবার পরামর্শ দেবো। ধরুন আপনি এইচআর নিয়ে পড়াশুনা করছেন। গুগলকে ব্যবহার করে ৫০টি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জব সার্কুলার সার্চ করে আপনার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করুন। তারপর সেই ৫০টি সার্কুলার থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো কি ধরনের দক্ষতা খুঁজছেন, তার একটি তালিকা তৈরি করুন এবং আগামী ৩০ দিনের একটি পরিকল্পনা করুন। তারপর ইউটিউভ দেখে দক্ষতাগুলো নিজের মধ্যে আয়ত্ব করবার চেষ্টা করুন।

৪. জ্ঞানের বিকাশ

বাংলাদেশ এখন আর আগের জায়গায় নেই যে জ্ঞান বিকাশের জন্য আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। আপনার হাতে কাছে থাকা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আপনি কমার্শিয়াল সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন। প্রচুর ফ্রি ওয়েবইনার, ওয়ার্কশপ, লার্নিং ভিডিও, বুক রিভিউ, বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক ডকুমেন্টারি ইন্টার্নেটে ঘুড়ছে। তালিকা তৈরি করুন এবং জ্ঞান বিকাশ করুন হতাশায় ডুবে না থেকে।

৫. প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি

আপনার হাতে স্মার্টফোন আছে যেটি এই মুহুর্তে আপনাকে বিশ্বের যেকোন কিছুর সাথে সংযুক্ত করিয়ে দিতে পারে। হয়তো আপনার বাড়িতে ল্যাপটপ আছে, যা দিয়ে আপনি ঘরে বসে অনেকের সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন। খুঁজে বের করুন আপনি এমন কোন ধরনের এ্যাপস আপনার মোবাইলে নেই যা দিয়ে আপনি উপরের পাঁচটি কাজ অনায়সে করতে পারবেন। আসলে সমস্যা হচ্ছে স্মার্টফোন দিয়ে আমরা শুধু জানি ফেসবুক আর ইউটিউভের মাধ্যমে অন্যের তৈরি সমালোচনা মূলক ভিডিও বা সিনেমা/নাটকের কাটপিস দেখা। এর বাইরেও স্মার্টফোনের অনেক কাজ আছে। নিজে কন্টেন্ট তৈরি করুন, আর্টিক্যাল লিখুন, ব্লগ লিখুন, আপনার সিভি প্রচার করুন, ভিডিও রিজুমে ছড়িয়ে দিন। মোবাইল ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করুন, ঘরে বসে ডলার আয় করুন।

শেষ কথাঃ

উপরের পাঁচটি বিষয়কে মাথায় রেখে আপনি আপনার নিজেকে পরিবর্তন করুন। সবচেয়ে সহজ কাজ হলো হাত গুটিয়ে বসে থাকা আর হতাশা চর্চা করা। ভেবে দেখুন আপনি দুনিয়ার সব থেকে বড় নেয়ামতের মালিক কারন আপনি সুস্থ আছেন। আপনার শক্তি আছে। আপনি চিন্তা করতে পারছেন। কিছু মানুষ আছে যারা আপনাকে বিশ্বাস করে। অতএব উন্নত মানসিকতাকে ব্যবহার বুদ্ধি খাঁটিয়ে বের করুন লকডাউনের ভেতরও মানুষের কোন কোন চাহিদাগুলো আপনি পূরণ করতে পারেন?

 

Author:

K M Hasan Ripon, Executive Director, BSDI

Email: [email protected]

Yellow Rediscovering Amphibians Blog Banner (1)

Challenges of A Leader – একজন লিডারের চ্যালেঞ্জ

(The Challenge of a Leader)

একজন লিডারের চ্যালেঞ্জ হলো কর্মক্ষেত্রে D2E বাস্তবায়ন করা। D2E মানে হলো একজন লিডারকে –

  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় (Decision Making)।
  • কর্মীদের মাঝে কাজ ভাগ করে দিতে হয় (Delegation of Work) এবং সর্বশেষ।
  • কর্মীকে তার কাজের জন্য মূল্যায়ন করতে হয় (Evaluation of employee’s performance) ।

এখন প্রশ্ন হলো অনেক কাজের বাইরে যদি শুধু উপরের তিনটি কাজের কথা ধরি তাহলে একজন লিডার সাময়িকভাবে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। আবার তিনি সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন যদি উপরের তিনটি কাজে কিছুটা নিস্ক্রিয়তা অবলম্বন করেন। বর্তমানে লিডারশীপ নিয়ে অসংখ্য মোটিভেশনাল ভিডিও তৈরি হচ্ছে যেগুলো দেখে একজন লিডার তার কর্মক্ষেত্রে উপরের D2E সুষ্ঠভাবে পালন করতে পারছেন না। কারন সঠিক পথে থেকে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন, দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ বন্টন এবং কাজ শেষে কর্মীর মূল্যায়নে সাময়িকভাবে কিছু মানুষ অসন্তুষ্ঠ হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে সে মানুষগুলোই আবার তাদের ভুল বুঝতে পেরে সেই লিডারের প্রশংসায় মেতে উঠে। লিডারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় (Decision Making)। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার জন্যই প্রতিষ্ঠান তাকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে থাকেন। কিন্তু সমস্যা হলো আবেগের কাছে প্রায়শই পরাজিত হয়ে নেতৃত্বের আসনে থাকা একজন লিডার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আপনাদের বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করবো। ২০২০ সালে যখন আমরা কোভিড-১৯ এর কারনে সৃষ্ট প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হই তখন আমরা বেশ কিছু নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাই। এক ধরনের লিডার যারা সোস্যাল মিডিয়ায় ঘোষনা দিয়ে বললেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো কর্মীর বেতন করোনার কারনে কমানো হবে না। সকল প্রকার সুবিধা বিশেষ করে ফেস্টিবল বোনাস যথাসময়ে পরিশোধ করা হবে। আবার আরেক ধরনের লিডার যারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছিলেন। প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই কর্মীদের সাথে আলাপ করে বেতন আংশিক কমিয়ে প্রদান করা শুরু করলেন। ফলে দেখা গেল সোস্যাল মিডিয়ায় একজন লিডার হলেন প্রশংসিত আর অন্যজন হলেন নিন্দিত।

প্রক্ষান্তরে, করোনার প্রকোপ যখন দিন দিন বাড়ছিলো তখন দেশের সকল প্রতিষ্ঠান প্রায় দিশেহারা হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখাই হয়ে উঠলো একমাত্র লক্ষ্য। কিছুদিন পরই যারা আবেগের কাছে হেরে গিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় হিরো হবার চেষ্টা করেছিলেন, তারা বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে দিয়ে কর্মী ছাটাই শুরু করে দিলেন। অন্যদিকে, বাস্তবতা প্রাধান্য দিয়ে একজন কর্মীও করোনার কারনে ছাটাই করলেন না। বরং ছয় মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা আবার আগের জায়গায় নিয়ে এসে কর্মীদের পূর্ণ বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পুনরায় সচল করে দিলেন। লীডারের অতি আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শিতার অভাবে একদল সাময়িকভাবে জিতে গিয়েও হেরে গেল। অন্যদিকে লীডারের বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শিতার কারনে একদল সাময়িকভাবে হেরে গিয়েও শেষমেষ জিতে গেল।

লিডারকে কর্মীদের মাঝে কাজ বন্টন করে দিতে হয় (Delegation of Work)। যা অনেকগুলো দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো কাজ কি আমরা ভাগ করে দিতে পারছি? অথবা, ভাগ করে দিলেও সঠিক কর্মীকে দিতে পারছি? লিডারকে সবসময় যে কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দিতে তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ

  • কাজ বাছাই করা,
  • সঠিক কর্মী নির্ধারন এবং
  • কাজটি সঠিকভাবে কর্মীকে বুঝিয়ে দেয়া।

কিন্তু এখানেও লিডার আবেগের কাছে হেরে গিয়ে কর্মীদের মাঝে কাজ বন্টন করতে পারছেন না। লিডারশীপ রোলে আবির্ভুত হবার পর একজন লিডার অতি সহজে একটি কিষয় ভুলে যান। সেটা হলো এই পজিশনে আসতে গিয়ে তাকে কত ধরনের চাপ সহ্য করতে হয়েছে, ধাক্কা এবং ঝুঁকি নিতে হয়েছে। কিন্তু এই সোস্যাল মিডিয়ার যুগে এসে লিডার কেমন জানি কাজ বন্টনে নিস্ক্রিয় বা উদাসীন হয়ে থাকেন। সবাই যেন প্রতিষ্ঠানের কথা ভুলে গিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় হিরো টাইপ লিডার হবার প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে ব্যস্ত। অথচ সকল কর্মী এক রকম নয়। কর্মীর দক্ষতা বিন্যাস করে, যার যে রকম যোগ্যতা এবং দক্ষতা, তাকে সেরকম কাজ বুঝিয়ে দেয়াটাই জরুরী। পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে নিরীক্ষণ নিশ্চিত করা। কারো ধাক্কার প্রয়োজন হয়, কারো প্রতিনিয়ত রিমাইন্ডার বা একটু প্রশংসার প্রয়োজন হয়। এখন সোস্যাল মিডিয়ায় হিরো টাইপ লিডার হতে গিয়ে যার একটু ধাক্কা দরকার তাকে যদি শুধু রিমাইন্ডারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখি, তাহলে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি তো হবেই তার চেয়ে বড় কথা সেই কর্মীরই ক্ষতি হবে সব থেকে বেশী।

একটি ঘটনা আপনাদেরকে বলতে চাই। আমার কাছে এক ছোট ভাই এলো এবং আমরা দুজনে গল্প করছিলাম। আমাকে বললো ”ভাইয়া আপনিতো জানেন আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষ। আমি একটু কম কথা বলি এবং নিজেকে পাবলিক ফোকাস থেকে একটু দুরে সরিয়ে রাখি। আমার টিমে আমার আরেকজন সহকর্মী আছে যে আমার পুরো উল্টো মানে এক্সট্রোভার্ট। আমাদের সাথে নতুন একজন লিডার যুক্ত হলো যিনি সবসময় ঐ সহকর্মীকেই তার কাছে টেনে রাখতেন। যেকোন এ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন বা মিটিংয়ে তাকেই সুযোগ দেয়া হতো।

আমি একদিন লিডারকে বাধ্য হয়েই বললাম আমি ঐ কাজটি করতে চাই এবং সুন্দরভাবে প্রতিটি ধাপ বুঝিয়ে দিলাম এবং আমি কিভাবে ফলাফল নিশ্চিত করবো তাও উল্লেখ করলাম। লিডার আমার কথা শুনে কি মনে করলেন জানি না তবে আমি দায়িত্বটি পেয়ে গেলাম। সর্বোচ্চ মেধা এবং কায়িক শ্রম দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করলাম এবং কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করলাম। সে বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আমি বেস্ট পারফরমার এ্যাওয়ার্ড পাই। সেদিন আমি একটি বিষয় বুঝতে পারলাম যে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যদি থাকে তাহলে কখনো কখনো আপনার যা প্রাপ্য তা বিনয়ের সাথে দাবি করা দরকার। যদিও এক্ষেত্রে আমি আমার লিডারকে ক্রেডিট দেবো কারন তিনি আমার প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি নিরীক্ষণ নিশ্চিত করেছেন এবং কোয়ার্টারের বেস্ট পারফরমার লিষ্টে আমার নামটি উল্লেখ করেছিলেন।”



লিডারকে মূল্যায়ন করতেই হবে (Evaluation of employee’s performance) কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে। লিডার যদি শুধু কাজ বন্টন করেই যান এবং কাজ আদায় করার ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকেন কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করে তাহলে সেই কর্মীই একদিন তার কাজ করার স্প্রিহা হারিয়ে ফেলবেন। লিডার সবসময় এক ধরনের সঙ্কায় থাকেন যে, আমার সঠিক মন্তব্য বা মূল্যায়নে যদি কর্মী আঘাত পান আর আমাকে লিডার থেকে বস বানিয়ে যদি সোস্যাল মিডিয়ায় উপস্থাপন করেন! আমি লিডার না বস এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক মানুষ প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেন যা কখনই প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। লিডার যদি তার ইমেইজ ভালো রাখবার জন্য সবাইকে সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্তি কর্মী বানিয়ে দেন তাহলে সাময়িক প্রশান্তি পেলেও অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই কর্মীরাই তার দিকে প্রশ্নের আঙ্গুল প্রদর্শন করবে।

বন্ধুরা একজন লিডার একটি প্রতিষ্ঠান বা একটি দলের অবিভাবকের মতো। বাবার কাছে যেমন সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায় না তেমনি লিডারও সবকিছুই চাইলেই দিতে পারেন না। ছোট বয়সে বাবার করা অনেক বারণ আমরা সহজভাবে নিতে পারিনি কিন্তু এখন যখন নিজেই বাবা হয়েছি তখন সেই সময়ে বাবার আদেশ, নিষেধ, রাগ, আদরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারছি। আমাদের সকলের স্মরণে রাখতে হবে একজন লিডারের অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে একটি হলো তিনি একজন প্রশাসক বা এ্যাডমিনিসট্রেটর। আর এই পদবীটি সবসময়ই একটু কঠিন কারন তাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা সাময়িকভাবে অন্যকে খুশি করতে পারে না বা একজন প্রশসক কখনই সবাইকে খুশি করতে পারেন না। তবে তিনি যদি ন্যায়ের পথে থেকে সিদ্ধান্ত বা বন্টন বা মূল্যায়ন করেন তবে সেটি একদিন প্রকাশিত হবেই। লিডার হিসেবে আপনি শতভাগ ভালো বা খারাপ হতে পারবেন না। অবশ্যই এখানেও ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বর্তমানে লিডারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমার মতে তারা বাবা হতে পারছেন না!

—————————————————————————————————————–

লেখকঃ

কে, এম, হাসান রিপন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট

ইমেইলঃ [email protected]

Fashion Advertisement Facebook Cover (1)

Competency Based Education for Ensuring Sustainable Development

The world presented us with new opportunities and challenges which requires a different approach to education. In this fast-changing world, it has become necessity for children to acquire the knowledge, skills, values, attitudes and take action to adapt and to thrive. There is a need for a change in the Education Systems which needs to prepare them for living and working in a global society. In this change circumstances, the big issues affecting our planet is the climate change and global poverty. To face the challenges we require an innovative generation that knows how to find solutions. Therefore Competency Based Education has been has been brought in to practices. To ensure Sustainable Development of the country we need to ensure proper education to the young generation of Bangladesh. Bangladesh is considered as the most potential country of Asia as major part of its population are young generation which means they are in the level of productive workforce of the country. If we can train them to become skilled workforce, then it will have major impact to the national economy.

One of the key reasons for economic progress of develop countries are the skilled human resources and the development was possible for the education systems which ensures the young generation not only have the required knowledge, skills, attitude and values to work in the industry but also develops them as responsible global citizens through creating sense of responsibilities on social cultural and environment issues. Competencies include explicit, measurable, transferable learning objectives that empower students. CBE place a heavy emphasis on what a person can do in the workplace after the completion of the training program. One of the primary advantages of CBE is that, the focus is on the success of each participant. It gives individuals opportunities to “achieve qualifications that relate to required performance in the workplace”. CBET is very positively regarded by employers, job seekers, management and learners in many countries like the Australian enterprises and it strongly supports the development of job-specific skills. Enterprises are also very positive about the increased level of on-the-job learning.




In Bangladesh the Education systems has not yet been changed in the last few years to ensure sustainable development. Though there are some opportunities to learn and practice CBE, but it has not been promoted as we expected. Therefore, a large no of students remain unemployed or fail to get desired job after graduation. They fail to serve the industry based on its requirement. But recently the trend has changed. The Higher Education Institutions are very much serious on its student’s employability and they have started to change the teaching and learning approaches in the institutions. Besides, they are now very much concerned to develop responsible global citizen which has taken into account considering the Global perspective. Here, students, educators, employers, and policymakers alike are beginning to embrace competency-based education models that have the potential to transform standards of higher education, keeping students competitive in the global workforce. It focuses sharply on what students know and can do—are on the rise. These programs do not assume that successful completion of a series of courses results in the achievement of learning outcomes; rather, they confirm student learning through individual assessment. Probable Obstacles/Challenges in Implementing CBE in Bangladesh: There are a number of challenges hindering the effective implementation of CBE in Bangladesh such as

  • Lack of awareness in CBE systems
  • Lack of attitude to adopt the new learning & teaching systems
  • Very few certified CBE trainers in Bangladesh though ILO is working in this sector
  • Lack of Fund to change the existing Teaching & Learning systems

The higher education has changed remarkable in this decade and if we have to adopt the changes to ensure sustainable development. The adoption of Competency Based Education and Knowledge on Environment factors has become essential to develop Global Responsible Citizens. Bangladesh shouldn’t lag behind here. Time has come to shift to a new Higher Education Systems which will ensure Knowledge, Skills, Attitude, Values and Action among the young generation who will lead the country.

 

Author

Kabul Mohammad Hasan, Executive Director, BSDI

Email: [email protected]